
বেশ খানিকটা দুর্বল ও সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়লেও মোটের উপর অনশনকারীদের স্বাস্থ্য এ দিন স্থিতিশীল। রবিবার ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস, উপাধ্যক্ষ অঞ্জন অধিকারী ও কয়েক জন প্রবীণ শিক্ষক-চিকিৎসক অনশনরত ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, যাতে তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু তাঁদের অনুরোধে চিঁড়ে ভেজেনি। কাল, মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দপ্তর, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও আন্দোলনরত পড়ুয়াদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা। কিন্তু সেই বৈঠকে নতুন করে কী আলোচনা হবে, বৈঠক করে লাভই বা কী, সেই প্রশ্ন এ দিন তুলেছেন পড়ুয়ারা। তাই, কালকের বৈঠকেও কী সমাধান সূত্র বেরোবে, তা নিয়ে মেডিক্যালের ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই সন্দিহান । রবিবার দুপুরে পাঁচটি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের তরফে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করে যান পূণ্যব্রত গুণ, মানস গুমটা, দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়রা। আজ, সোমবার অনশনরত ছাত্রদের সমর্থনে মেডিক্যালের প্রশাসনিক ব্লকে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ। এ দিন বিকেলে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে যান তৃণমূলের চিকিৎসক-বিধায়ক তথা মেডিক্যালের রোগীকল্যাণ সমিতির প্রাক্তন চেয়ারম্যান নির্মল মাজি। তবে অনশনরতদের কাছে নির্মল যাননি।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মেডিক্যালের এই অচলাবস্থা স্বাস্থ্য ভবনের পাশাপাশি ভাবাচ্ছে নবান্নকেও। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের বৈঠকের পরেও জট না-খোলায় নবান্ন উদ্বিগ্ন। কারণ, প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকের সঙ্গে শনিবার ছাত্রছাত্রীদের আলোচনা নিষ্ফলা হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, বাইরে থেকে জোগানো মদতেই এতটা বেপরোয়া হতে পারছেন আন্দোলনকারীরা। যদিও স্বাস্থ্য ভবনের তরফে অনশনরত পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা হচ্ছে। তাঁদের বলা হচ্ছে, তাঁরা যেন তাঁদের সন্তানদের অনশন তুলে নেওয়ার কথা বলেন।
কিন্তু এত কিছুর পরেও জট কি আদৌ খুলবে?
মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস এ দিন বলেন, ‘অনশনরতদের সঙ্গে সব সময়ে যোগাযোগ রাখছি। রবিবার ওঁদের সঙ্গে তিন বার কথা হয়েছে। ওঁদের শরীর-স্বাস্থ্যের খোঁজও নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে হাসপাতালের হাউসস্টাফরাই ওঁদের ভর্তি করানো কিংবা চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।’ এ দিন আন্দোলনকারীরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মঙ্গলবারের সম্ভাব্য আলোচনার ‘অ্যাজেন্ডা’র প্রতিলিপি চেয়েছেন। মেডিক্যালের উপাধ্যক্ষ অঞ্জন অধিকারী বলেন, ‘স্বাস্থ্যসচিব যদি নির্দেশ দেন, তা হলে অবশ্যই অ্যাজেন্ডার প্রতিলিপি দেওয়া হবে।’ অনশনরত পড়ুয়াদের তরফে এমবিবিএস চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র অনিকেত করের বক্তব্য, ‘ছ’বছর ধরে ছাত্র সংসদের ভোট হয়নি। শাসক দল হোক বা অন্য কেউ, যে সংগঠনই জিতুক, ভোটটা হওয়া জরুরি। আমাদের এই দাবি মানা হলে তবেই কলেজের অন্য নানা সমস্যার সমাধান হবে।’