ওড়িশা এফসি –৩ (‘২২, ‘৫৩ দিয়েগো-২, ‘৪৫ নন্দ কুমার)
ইস্টবেঙ্গল এফসি –১ (‘১০ ক্লেইটন)
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: নতুন বছরে প্রথম ছয়ে ঢুকে পড়ার স্বপ্ন দেখালেও ক্লেইটন সিলভারা (Cleiton Silva) কিন্তু সেদিকে এগোতে পারলেন না। বরং চলতি আইএসএল-এ (ISL 2022-23) আরও পিছিয়ে গেলেন। শনিবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ওড়িশা এফসি (Odisha FC) তাদের ৩-১ ব্যবধানে হারাল। দশ মিনিটের মধ্যে ক্লেইটনের গোলে ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে গেলেও ২২ মিনিটের মাথায় সেই শোধ করে দেন জোড়া গোলের নায়ক আর এক ব্রাজিলীয় দিয়েগো মরিসিও (Diego Mauricio)। তাদের দ্বিতীয় গোলটি পান নন্দকুমার শেখর (Nandhakumar Sekar)। ফলে এগিয়ে থেকে শুরু করলেও, শুধু ডিফেন্সের ভুলের খেসারত দিল স্টিফেন কনস্টানটাইনের ( Stephen Constantine) লাল-হলুদ।
মাস দুয়েক আগে লিগের প্রথম ম্যাচেও দু’গোলে এগিয়ে থেকে ২-৪ ব্যবধানে এই একই বিপক্ষের কাছে হেরেছিল লাল-হলুদ বাহিনী। এবারও সেই একইভাবে হারল তারা। শুরুর দিকে গোছানো ফুটবল খেললেও গোল খাওয়ার পর থেকে ছন্দ হারিয়ে ফেলে ম্যাচও হারিয়ে ফেলে লাল-হলুদ। এই হারের ফলে লিগ টেবলে নয় নম্বরে নেমে গেল ইস্টবেঙ্গল। এবং টানা চারটি ম্যাচে জয়হীন থাকা ওড়িশা এফসি জয়ে ফিরে এক ধাপ উঠে চলে গেল পাঁচ নম্বরে।
এ দিন ভিপি সুহেরকে স্কোয়াডের বাইরে রেখে ও তাঁর জায়গায় হীমাংশু জাংরাকে রেখে প্রথম এগারো নামান কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন। অন্যদিকে, ওড়িশার কোচ জোসেফ গোম্বাউ প্রথম দলে তিনটি পরিবর্তন করেন। শুরু থেকে দুই দলই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও প্রথমেই কাজের কাজটি করে ফেলে ইস্টবেঙ্গল। ১০ মিনিটের মাথায় সেই ‘গোলমেশিন’ ক্লেইটনের পা থেকেই আসে গোল। মাঝমাঠ থেকে অ্যালেক্স লিমার বাড়ানো পাস থেকে বল নিয়ে ডানদিকে দিয়ে বক্সে ঢুকে বক্সের কোণ থেকে ছোট্ট চিপে এগিয়ে আসা গোলকিপার অমরিন্দর সিংয়ের মাথার ওপর দিয়ে বল দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন।
আরও পড়ুন: IND vs SL: সূর্যের সেঞ্চুরির উত্তাপে পুড়ল শ্রীলঙ্কা, নতুন বছরে ‘হার্দিক’ ভারতের সিরিজ জয়
এই গোলের মিনিট খানেক পরেই একেবারে গোলের সামনে থেকে সুযোগ হাতছাড়া করেন জেরি মাওয়িমিংথাঙ্গা। ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডার জেরি তাঁকে বাধা দেওয়ায় বল ঠিকমতো পায়ে লাগাতে পারেননি ওড়িশার জেরি এবং অপ্রত্যাশিতভাবে তা দ্বিতীয় পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘরের মাঠে পিছিয়ে পড়ায় গোলশোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ওড়িশার আক্রমণ বিভাগ। তাদের ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড দিয়েগো মরিসিও ও তরুণ তারকা নন্দকুমার শেখর সমানে আক্রমণে উঠতে থাকেন। তাঁদের সাহায্য করার জন্য ছিলেন থৈবা সিং, জেরি ও সাওল ক্রেসপো।
এই চাপ বেশিক্ষণ রাখতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স এবং ২২ মিনিটের মাথাতেই গোল হজম করে লাল-হলুদ। কর্নার থেকে এই গোল করে দলকে সমতা এনে দেন মরিসিও। রেইনিয়ে ফার্নান্ডেজের অসাধারণ ও মাপা কর্নার ছ’গজের বক্সের মধ্যে পড়ার আগেই ডান পায়ের বাইরে অংশ দিয়ে বল গোলের দিকে ঠেলে দেন (১-১)। লালচুঙনুঙ্গা তাঁর সঙ্গে লেগে থাকলেও আটকাতে পারেননি তাঁকে। এক্ষেত্রে গোলকিপার শুভম সেনও ভুল করে বসেন।
সমতা আনার পর থেকেই আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে ওড়িশা এবং প্রবল চাপে পড়ে কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে ইস্টবেঙ্গল এফসি। মরিসিওকে সামলাতে হিমশিম খেয়ে যায় তারা। ৩০ মিনিটের মাথায় তাঁর হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলে হয়তো এগিয়েই যেত ওড়িশা। এই সময় থেকেই ইস্টবেঙ্গলের খেলায় অবনতি শুরু হয়। শুরুতে যতটা গোছানো লেগেছিল তাদের, এই সময় আর ততটা লাগেনি। উইং প্লে-ও কমে যায়। যার জেরে আক্রমণের ধারও কমে যায় তাদের। বেশিরভাগ আক্রমণই করছিল ওড়িশা এবং তাদের আটকাতেই বেশি ব্যস্ত ছিল লাল-হলুদ বাহিনী। এমনই এক আক্রমণে ইস্টবেঙ্গলের বক্সের মধ্যে থেকে ছিটকে আসা বলে দূরপাল্লার শট নেন নন্দকুমার, যা ডানদিকের পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
বাঁ দিকের উইং দিয়ে ওঠা নন্দকুমার বক্সের বাইরে বাঁ দিক থেকেই একটি ভলি করেন, যা অপ্রত্যাশিত ভাবে ক্রসবারের সামান্য নীচ দিয়ে জালে জড়িয়ে যায় (১-২)। গোলকিপার শুভম অনেকটা লাফিয়ে উঠেও বল আটকাতে পারেননি। পিছিয়ে যাওয়ার পর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। ফলে লাল-হলুদের বিরুদ্ধে চলতি আইএসএল-এ জোড়া জয় পেল ওড়িশা এফসি।