বছরসাতেক আগে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে রীতি বদলের জেরে রাজ্যের ৫০ হাজারের বেশি প্রাথমিক স্কুলের প্রায় অর্ধেক প্রতিষ্ঠানেই এখন প্রধান শিক্ষক নেই। যার জেরে অতিরিক্ত সাম্মানিক ছাড়াই কাজ চালাতে বাধ্য হচ্ছেন টিচার-ইন-চার্জরা। এর পিছনে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে (Manik Bhattacharya) দায়ী করছেন শিক্ষক নেতা থেকে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যানরা। কারণ, তাঁদের আমলেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের হাত থেকে প্রধান শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষমতা যায় বিকাশ ভবনে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের কাছে। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) অবশ্য সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে রবিবার বলেন, ‘দপ্তরের হাতে আর কোনও নিয়োগ ক্ষমতা থাকবে না। প্রাথমিক স্কুলে (Primary Teachers Recruitment) প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব পর্ষদকেই দেওয়া হবে।’
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ১৯৭৩ সালের আইন মেনে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে প্রধান শিক্ষকের নিয়োগপত্র দিত সেই জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। জেলার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকরা (প্রাথমিক) শিক্ষাবর্ষের শুরুতে নিজের আওতাধীন স্কুলের শূন্য প্রধান শিক্ষক পদে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে প্যানেল তৈরি করে পাঠাতেন ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যানদের কাছে। যার ভিত্তিতে অর্থবর্ষের শুরুতে শূন্য প্রধান শিক্ষক পদে চেয়ারম্যানদের নিয়োগপত্র দিতেন।কিন্তু পার্থ-মানিকের আমলে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিকাশ ভবনের আধিকারিকদের হাতেই প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এবং এর জেরে যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত। সমস্যা সমাধানে ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যানদের সঙ্গে স্কুলশিক্ষা দপ্তর ও কমিশনারেটের আলোচনাও হয়েছে। পর্ষদের বর্তমান কর্তাদের দাবি, তাঁরা নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আপাতত ব্যস্ত। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারবেন না। বিকাশ ভবনের কর্তাদের মতে, এটা অনেক আগের ব্যাপার। তবে জট কাটানোর চেষ্টা চলছে।
প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ প্যানেল ২০১৪ সালে প্রকাশ করেছিল জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদগুলি। তারপর ২০১৫-২০১৬ সালে অল্প ক’জনের নামের প্যানেল প্রকাশিত হয় দু’একটি জেলায়। এরপর ছ’বছর কেটে গেলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের আর কোনও প্যানেল হয়নি। তাই টিচার-ইন-চার্জরাই বহু বহু স্কুলের ভরসা। অথচ প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা যে অতিরিক্ত সাম্মানিক পান, এঁরা তা পান না। ফলে, প্রধান শিক্ষকের সাম্মানিক বাবদ মাসে কোটি টাকা সাশ্রয়ও হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দীনবন্ধু বিদ্যাভূষণের দাবি, ‘স্কুলের প্রধানদের বিপুল কাজের চাপ। মিড ডে মিল থেকে শুরু করে বাংলার শিক্ষা পোর্টালের সমস্ত কাজ তাঁদের সামলাতে হয়। কোনও কাজে সমস্যা হলে তার যাবতীয় দায় টিচার-ইন-চার্জদের উপর বর্তাবে। সব জেলায় প্রধান শিক্ষকের প্যানেল তৈরি করে নিয়োগ করতে হবে অবিলম্বে।’