ওই ছাত্রের পরিবারের আইনজীবী বুধবার বিচারপতি মান্থার এজলাসে অভিযোগ করেন, পনেরো দিন কেটে গেলেও এ রাজ্যের পুলিশ অসম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি। ফলে মৃতের পরিবার হাইকোর্টের নির্দেশ দেখালেও অসম পুলিশ জানিয়েছে, তাদের কিছু করার নেই। বিচারপতি মান্থা পরিবারকে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন। শুক্রবার হবে শুনানি।
খড়গপুরের ওই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারপতি মান্থা অবসরপ্রাপ্ত ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অজয় গুপ্তকে দিয়ে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পরীক্ষা করান। ডাক্তার গুপ্ত খড়্গপুর আইআইটি’র হস্টেলেও পরিদর্শনে যান। তার পর আদালতে যে রিপোর্ট পেশ করেন, তাতেই পুলিশের এতদিন ধরে দাবি করা আত্মহত্যার তত্ত্ব বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়ে। চিকিৎসক গুপ্ত রিপোর্টে জানান, ওই ছাত্রের মাথার পিছনে যে ভারী কিছুর আঘাত রয়েছে, তা মৃতদেহের ছবিতেই স্পষ্ট। অথচ প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখই নেই!
ডাক্তার গুপ্ত জানান, ফয়জানের বাঁ হাতে ১১টি কাটা দাগও মৃত্যুর পরে করা (অ্যান্টি-মর্টেম নয়) এবং মৃত্যুকে আত্মহত্যা প্রতিপন্ন করার ছকেই। বস্তুত পুলিশের তদন্তে ওই কাটাগুলিকেই চাকরি না পাওয়ার হতাশায় হাতের শিরা কেটে ওই ছাত্রের আত্মহত্যার প্রমাণ বলে ইঙ্গিত করা হয়েছিল! হস্টেলের ঘরে পুলিশেরই উদ্ধার করা বিভিন্ন সামগ্রীর মধ্যে ‘এম্পলার’ নামে একটি ওষুধের যে বিষ এবং মাংস পচার গন্ধ আটকাতে বহুল ব্যবহার রয়েছে–পুলিশ তারও উল্লেখ না-করায় প্রশ্ন তোলা হয় বিশেষজ্ঞের রিপোর্টে।
ওই রিপোর্ট পেয়ে এবং তাঁর সুপারিশ দেখেই গত ২৫ এপ্রিল বিচারপতি মান্থা ওই ছাত্রের দেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। অসমের তিনসুকিয়া থেকে দেহ তুলে এনে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ফের ময়নাতদন্ত করতে হবে বলে জানান। সে সময়ে চিকিৎসক গুপ্তও থাকবেন বলে জানিয়ে দেন। এর জন্যে এক মাস সময় দিয়েছিলেন বিচারপতি। তার অর্ধেক ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত।
হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে রাজ্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় প্রশ্ন উঠেছে। পরিবার বরাবরই দাবি করেছে, র্যাগিংয়ের প্রতিবাদ করাতেই ফয়জানকে খুন হতে হয়েছিল। আইআইটি কর্তৃপক্ষ ও মেদিনীপুরের পুলিশের ভূমিকা এবং সেখানকার হাসপাতালে প্রথম ময়নাতদন্ত নিয়ে পরিবার প্রশ্ন তুলেছিল। প্রসঙ্গত, আইআইটি’র লালা লাজপত রায় হস্টেলের ২০৫ নম্বর ঘরে গত বছর ১৪ অক্টোবর পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়েছিল ফয়জানের।