বুধবার প্রকাশিত হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল। উচ্চমাধ্যমিকে কৃতীদের নিয়ে গোটা রাজ্যে যখন চর্চা চলছে তখন বীরভূম থেকে উঠে এল এক অন্য ছবি। বোলপুর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৌসুমী দোলুই এবার উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন। পরীক্ষার আগের রাতেই মৃত্যু হয় তাঁর বাবার। পিতার দেহ শ্মশানে রেখে বুকে জমা কষ্ট নিয়ে পরীক্ষার হলে পৌঁছন মৌসুমী।

WB HS results 2023 : গবেষণার প্রবল ইচ্ছে! উচ্চমাধ্যমিকে তৃতীয় হয়েও বাবার ছোট্ট হোটেল নিয়ে স্বপ্ন দেখেন চন্দ্রবিন্দু
একদিকের বাবার মৃত্যু যন্ত্রণা, অন্যদিকে পড়াশোনার চাপ। আদৌ মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতে পারবে কি না, সেই নিয়ে চিন্তায় ছিল পরিবার। কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, সেই মৌসুমীই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, পারুলডাঙ্গা শিক্ষা নিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ের পড়ুয়া মৌসুমী ৬২ শতাংশ নম্বরও পেয়েছেন। বাবার মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলে হয়তো তাঁর ফল আরও ভালো হত, এমনটা মনে করছেন শিক্ষকরা।

উচ্চমাধ্যমিক শুরু আগের দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয় মৌসুমীর বাবা অষ্টম দোলুইয়ের। বোলপুরের নেতাজি বাজার এলাকায় চায়ের দোকান ছিল অষ্টমবাবুর। চায়ের দোকনের উপার্জন দিয়ে চলত চারজনের সংসার। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যের হঠাৎ মৃত্যু দোলুই পরিবারের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। দুই মেয়েকে নিয়ে কী করবেন ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছিলেন না মা।

Uccha Madhyamik result 2023 : বাবার মুখাগ্নি করেই পরীক্ষায় বসেছিল ভাগ্যশ্রী, ভালো ফল স্বপ্ন দেখাচ্ছে আগামীর
বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেছেন মৌসুমীর মা দীপালি দোলুই। চায়ের দোকান চালিয়ে কোনও রকমে চলছে সংসার। কিন্তু এরকম অভাব নিয়ে মেয়ের পড়াশোনা চালানো সম্ভব নয় বলেই তাঁর মনে হচ্ছে। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে সেই কারণে তিনি দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। তাই কেউ যেন মেয়ের পড়াশোনার জন্য পাশে এসে দাঁড়ায় সেই আর্জি জানিয়েছেন মা।

ফল প্রকাশের পর মৌসুমী এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি প্রথম বিভাগে পাশ করেছি। বাবার মৃত্যু না হলে আরও ভালো ফল হত। আমি আরও অনেক বেশি নম্বর পাব বলে আশা করেছিলাম। এখন আগামী দিনে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারব কি না জানি না। বাবা আমাকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাবার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না জানি না। আমি ভূগোল নিয়ে পড়ব ভেবেছিলাম। এখন জানি না কী হবে।’

Uccha Madhyamik Result 2023 WB : উচ্চমাধ্যমিকে দ্বিতীয় বাঁকুড়ার মেয়ে, সুখবর পেয়ে সুষমার গলায় ‘হে নূতন…’
দীপালি বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। চায়ের দোকান চালিয়ে কোনওক্রমে সংসার চালাচ্ছি। এখন যদি মেয়ের পড়াশোনা চালানোর জন্য কেউ পাশে দাঁড়ান তবে খুবই উপকৃত হয়। কারণ দোকান চালিয়ে আমার যা রোজগার তাতে পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব নয়। মেয়ে আরও ভালো রেজাল্ট করত, কিন্তু বাবার মৃত্যুর কারণে সেটা হল না। যতটা পারব মেয়েদের জন্য করার চেষ্টা করব।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *