রণয় তেওয়ারি: শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশার বালেশ্বেরের কাছে বাহাঙ্গ বাজারের কাছে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ওড়িশা মুখ্যসচিবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২৭৫ জন। আহত প্রায় ১,১৭৫ জন। এখন এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পিছনে অন্তর্ঘাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। রেলমন্ত্রীর অন্তর্ঘাতের আশঙ্কাকে সমর্থন করেন তিনি। সুকান্ত মজমদার বলেন, ‘এত বড় রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমাদের মনে হচ্ছে, সাধারণ কোনও ভুলে ঘটেনি। কোনরকম অভিসন্ধি নিয়ে কিছু একটা হয়ে থাকতেই পারে। তদন্ত করে দেখতে হবে পুরোটাই।’
প্রসঙ্গত, এদিন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ফের দুর্ঘটনাস্থলে যান। তিনি দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং সিস্টেম পরিবর্তনের জন্যই দুর্ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি, অ্যান্টি কলিশন সিস্টেম বা সংঘর্ষ বিরোধী ব্যবস্থা ‘কবচ’-এর সঙ্গে এই দুর্ঘটনার কোনও যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা সাফ খারিজ করে দেন তিনি। ওদিকে রেল বোর্ড খারিজ করে দিয়েছে দুর্ঘটনার পিছনে ওভারস্পিডের তত্ত্বও। এখন ঠিক কী ঘটেছিল? কেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ল করমণ্ডল এক্সপ্রেস? তদন্ত যত এগোবে, তত ধোঁয়াশা কাটবে, তত আসল ছবিটা সুস্পষ্ট হবে। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৮ মে পশ্চিম মেদিনীপুরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। এই দুর্ঘটনায় মোট ১৪১ জন যাত্রীর প্রাণহানি হয়েছিল। এই দুর্ঘটনার পিছনে উঠে আসে নাশকতার তত্ত্ব। বোমা বিস্ফোরণের ফলে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল বলে বিতর্ক রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় চেন্নাইগামী আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ১২৮৪১ চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস হাওড়ার শালিমার থেকে দুপুর বেলা ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। প্রথমে একটি মালগাড়িকে ধাক্কা মারে। মালগাড়ির সঙ্গে ট্রেনটির সংঘর্ষ এতটাই জোরালো ছিল যে করমণ্ডলের ইঞ্জিন মালগাড়ির উপর চেপে যায়। ৩টি বগি বাদে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সব কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। লাইনচ্যুত করমণ্ডলের কামরার সঙ্গে ধাক্কা লেগে আবার ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসেরও বেশ কয়েকটি কামরা বেলাইন হয়ে যায়।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ২৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে আজ জানিয়েছেন ওড়িশা মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা। তিনি বলেন, কিছু দেহ দুবার গোনা হয়েছিল। যারফলে প্রাথমিকভাবে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি দাঁড়িয়েছিল। তারপর জেলাশাসক তথ্য যাচাই করেন। তাতেই সেই ভুল নজরে আসে। প্রাণ হারিয়েছেন ২৭৫ জন। আহত ১১৭৫ জন। তবে সব দেহ এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ওদিকে নবান্নের তরফে দেওয়া পৃথক রিপোর্টে দুর্ঘটনায় রাজ্যের ৩১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৪৪ জন। যে প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘রাজ্য রাজ্যের তরফে একটা হিসেব তো করবেই। আমরাও আমাদের জেলা কমিটিকে বলেছি। এলাকায় এলাকায় দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। এখন ওই মানুষগুলোর একটু সহানুভূতি দরকার, সমবেদনা দরকার।’
‘সেনায় কাজ করেও এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়নি!’ মোবাইলের আলোয় ২৮ জনকে উদ্ধার, শিউরে উঠছেন রঞ্জন