ভোরের আলো ফুটতেই চিতা সাজানো শুরু হয়। শ্মশানঘাট যেন জনসমুদ্র। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজুরির বোগা গ্রামের সকালটা শুধু স্বজনহারাদের কান্নায় ভরা। বাড়ি ফিরল নন্দন, শংকর, ভোলানাথ, রাজীব, সুমনের নিথর দেহ। ওডিশার বালেশ্বরের কাছে বাহানাগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় নিখোঁজ খেজুরির পাঁচ যুবকের মৃতদেহ ফিরল গ্রামে। ৩ দিন পরে ঘরের ছেলে ফিরল ঘরে। তবে প্রাণহীন অবস্থায়।
সারা এলাকা জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিকট আত্মীয়-পরিজন থেকে শুরু করে এলাকাবাসী সকলেই। বোগা এলাকার চারজনের মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রস্তুত করা হচ্ছে চার যুবককে চিতা। পরিবারের লোকজন শোকে পাথর হয়ে পড়েছেন। এ যেন গ্রামের এক অন্য ছবি।
রবিবার সকালে প্রশাসনের তরফে মৃত্যুর খবর পাঠানো হয় ওই যুবকদের। প্রথমে তিনজনের মৃত্যুর খবর আসে। পরে রবিবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের তরফে সর্বশেষ পরিস্থিতির খোঁজখবর পাঠানো হয়। সেখানে দেখা যায় মৃত্যুর তালিকা মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে খেজুরিতে। শঙ্কর প্রধান, নন্দন প্রধান, ভোলানাথ গিরি, রাজীব ডাকুয়া ও সুমন প্রধান। পাঁচ জনের মধ্যে রাজীব ও সুমন দক্ষিণ শ্যামপুরের বাসিন্দা। বাকিরা বোগা গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে।
কেউ কাজের ছুটিতে বাড়িতে কাটিয়ে ফের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলেন। কেউ আবার নতুন কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছিলেন দক্ষিণ ভারত। কিন্তু এই পাঁচ যুবকের কপালে যে এই পরিণতি লেখা ছিল, তা মেনে নিতে পারছেন না কেউই। তরতাজা পাঁচ যুবকের প্রাণহানিতে ভেঙে পড়েছে গোটা গ্রাম।
আগামী দিনে জেলা ছেড়ে দক্ষিণ ভারতে কাজ করতে বাড়ির ছেলেদের পাঠাতে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার রাতের ভয়ঙ্কর ঘটনা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। এরকম আরও অনেক বাড়ির সন্তান কাজের সূত্রে বা পড়াশোনার সূত্রে দক্ষিণ ভারত যাত্রা করেন। প্রত্যেকের মনেই একটাই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে, “আবার এরকম কিছু হবে না তো?” উত্তর অজানা।