একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে কলকাতার অনেক ঐতিহ্যই। সেই তালিকায় কি যুক্ত হতে চলেছে হলুদ মিটার ট্যাক্সিও? রাজ্য পরিবহণ দপ্তর সূত্রে খবর, সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে মিটার-ট্যাক্সি তুলে দিয়ে পুরোপুরি অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সি পরিষেবা চালুর প্রস্তাব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন পরিবহণকর্তারা। তাতে ট্যাক্সি-চালকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনই যাত্রীরা খুব সহজে ঘরে বসে ট্যাক্সি বুক করতে পারবেন। যাত্রীদের হয়রানিও কমবে।
পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকটি জায়গায় অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সি পরিষেবা চালু করেছি। এতে যদি লোকের সুবিধা হয় তা হলে ভবিষ্যতে এই পরিষেবা আরও সম্প্রসারিত করা হবে। মিটার-ট্যাক্সি তুলে দেওয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে ট্যাক্সি সংগঠনগুলির সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলব।’
বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি বলবিন্দর সিং পেশিরও বক্তব্য, ‘আমরা চাই, মিটার-ট্যাক্সি পুরোপুরি তুলে দিয়ে তার জায়গায় অ্যাপ-ট্যাক্সি চালু হোক। তাতে ট্যাক্সি-চালকরা সহজে ভাড়া পাবেন। রিফিউজাল বন্ধ হবে। ভাড়া পেতে ট্যাক্সি-চালকরা নো-পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি থামালে তাঁদের থেকে পুলিশ ফাইন নেয়। অ্যাপ চালু হলে সেই সমস্যা থাকবে না।’
পরিবহণ দপ্তরের তথ্য বলছে, কলকাতায় প্রথম মিটার০ট্যাক্সি চালু হয় ১৯০৯ সালে। সেই সময়ে ধর্মতলার চৌরঙ্গি রোডে ছিল ফরাসি শেভিজাঁ কোম্পানির অফিস। তারাই প্রথম কলকাতায় মিটার-ট্যাক্সি নামায়। পরে সেটা দেশের অন্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও সারা দেশেই এখন মিটার-ট্যাক্সি প্রায় উঠে গিয়েছে। বর্তমানে মোটে দু’টি শহরে মিটার-ট্যাক্সি চলে–কলকাতা আর মুম্বই।
কলকাতা এবং শহরতলি মিলিয়ে এখন প্রায় ২০ হাজারের মতো মিটার-ট্যাক্সি চলে। ভাড়া কত হবে, সেটা সরকার নির্দিষ্ট করে দেয়। কিন্তু অনেক ট্যাক্সি-চালকই মিটারের ধার ধারেন না বলে অভিযোগ। তা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে চালকদের বচসা লেগেই থাকে। এই সমস্যা মেটাতে মিটার-ট্যাক্সি পুরোপুরি তুলে অ্যাপ পরিষেবার আওতায় নিয়ে আসতে চাইছে পরিবহণ দপ্তর। দপ্তরের আধিকারিকদের দাবি, এতে ঘরে বসেই মোবাইল অ্যাপে ট্যাক্সি বুক করা যেমন যাবে, তেমন ভাড়াটাও আগে থেকে জানতে পারবেন যাত্রীরা।
সম্প্রতি পরীক্ষামূলক ভাবে হাওড়া, শিয়ালদহ এবং কলকাতা স্টেশনে ‘যাত্রী সাথী’ নামে অ্যাপ-ট্যাক্সি পরিষেবা চালু হয়েছে। রাজ্য তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের অধীন ‘সোসাইটি ফর ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ টেকনোলজি রিসার্চ’ এর জন্যে লাইসেন্স নিয়েছে। আপাতত বিনা খরচে ট্যাক্সি-চালকদের মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে দিচ্ছে পুলিশ। যাত্রীরাও ‘যাত্রী সাথী’ অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারছেন। কিছু দিনের মধ্যেই এই অ্যাপের বাণিজ্যিক ব্যবহার পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে বলে জানাচ্ছেন পরিবহণ-আধিকারিকরা। তখন মিটার আর কোনও কাজেই লাগবে না।