শ্রীকান্ত ঠাকুর: সকালে নদীর ঘাটে নামতেই চক্ষু চড়কগাছ বালুরঘাটের কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের। নদীর মাঝখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হলুদ রঙের কিছু একটা। সন্দেহ হওয়ায় বাঁশ দিয়ে আটকে দেওয়া হয় বস্তুটিকে। পরে দেখা যায় সেটি একটি মানুষের মৃতদেহ। খবর দেওয়া হয় বালুরঘাট থানায়। বালুরঘাট থানার পুলিস এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে। গতকাল রাতে বিসর্জনের সময় প্রচুর মানুষের ভিড় ছিল আত্রেয়ী নদীর পাড়ে। সেভাবে জলে ডুবে যাওয়ার কোন খবরও রাত্রে জানা যায়নি। সকালে মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সে কারণেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। শেষপর্যন্ত জানা যায় মৃত ব্যক্তির নাম রুদ্র বিশ্বাস। বাড়ি বালুরঘাটের উত্তমাশা পাড়ায়।
আরও পড়ুন- সুপারি পাতা খেতে গিয়ে মর্মান্তিক পরিণতি, সাতসকালে হইচই এলাকায়
রুদ্রের পরিবারের অভিযোগ, ক্লাবের দুই গোষ্ঠীরদ্বন্দ্বের কারণেই মৃত্যু হয়েছে রুদ্রের। স্থানীয়দের দাবি, উত্তমাশা ক্লাবের পরিচলন কমিটির গঠনকে ঘিরে দীর্ঘদিন পাড়ার মধ্যেই দুটি গোষ্ঠির দ্বন্দ্বের কথা সর্বজনবিদিত। নবমীর রাতে নিতাই সাহার নেতৃত্বে একদল ক্লাবের উল্টোদিকে নিজেদের মতো করে ডিজে সেট বাজিয়ে পিকনিক করে ও নাচানাচি করে। আর এক দল তারা ক্লাবের মাঠেই সারারাত পিকনিক করে ও আনন্দ করে। অভিযোগ ভোর রাতে রুদ্র বিশ্বাস নিতাই সাহার বাড়িতে গিয়ে একটি বোতল ভেঙে আসে। দশমীর সকালে তাকে তার কয়েকজন বন্ধু বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়।
রুদ্রর বাবা রঞ্জিত বিশ্বাসের দাবি ভোর থেকেই আর রুদ্রর খবর পাওয়া যায়নি। কিছু ছেলে এসে রুদ্রকে হুমকি দিয়েছিল। তারা বলে গিয়েছিল মৃতদেহ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কাকতালীয় হলেও দশমীর সকালে রুদ্র মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে আত্রেয়ী নদী থেকে। আর এতেই সন্দেহ আরো দানা বেঁধেছে।
রঞ্জিত বিশ্বাস দাবি করেছেন তার ছেলে টোটো চালক। বাড়িতে ছোট ব্যবসাতেও সে মাঝে মাঝে বসতো। নবমীর রাতে টোটো চালিয়ে বাড়ি ফিরে বাইক নিয়ে নিজেই ঠাকুর দেখতে বেরোয় এবং বাকি রাত্রি সে ক্লাবের মাঠেই ছিল। ভোরবেলায় একটা ছোট গন্ডগোলের কথা তিনি শুনেছিলেন এবং সকালেই তার বাড়িতে ৫-৬ জন এসে রুদ্রকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন রুদ্র। দশমীর রাতেই নিখোঁজ ডায়েরি করা হয় বালুরঘাট থানায়। আর একাদশীর সকালেই মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে আত্রেয়ী নদীতে। তাঁর দাবি, ওই হুমকির সঙ্গে রুদ্রের মৃত্যু যোগ রয়েছে।
অন্যদিকে নিতাই সাহার স্ত্রী পারমিতার দাবি তার বাড়িতে দশমীর সকালে বোতল ভাঙার ঘটনা এবং গালাগালি করেছিল রুদ্র। কিন্তু তার মৃত্যু কী কারণে হয়েছে সেটা জানা নেই। যদি এই মৃত্যুর পিছনে কোন রহস্য থাকে। যদি কেউ দোষী থাকে তার প্রকৃত সাজা হোক।
ক্লাবের সভাপতি রঞ্জিত সাহা দাবি করেছেন ক্লাবে কোন গোষ্ঠীবাজির ঘটনা তার জানা নেই। নবমীর রাতে ছোট একটা ঘটনা ঘটেছিল। একাদশীর দিন ক্লাব সদস্যদের নিয়ে বসে মিটিয়ে ফেলার কথা ছিল কিন্তু তার মধ্যেই যাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা তার মৃতদেহ উদ্ধার। অন্যদিকে আর এক পক্ষের তার বাড়িতে গিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি কেমন যেন হিসাব গন্ডগোল করে দিচ্ছে। হুমকির সঙ্গে এই মৃত্যুর কোন একটা যোগ থাকতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। পুলিস বিষয়টা খতিয়ে দেখবে আশা করি।
মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনার পরেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। চাপা উত্তেজনা রয়েছে উত্তামাশা ক্লাব এলাকায়। বিশাল পুলিস বাহিনী পাঠানো হয়েছে এবং পুলিস প্রহরা চলছে ক্লাব চত্বরজুড়ে। এ বিষয়ে পুলিস এখনো কোনো মন্তব্য করতে চায়নি।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)