গোড়ার দিকে তেমন সাজানো গোছানো পানশালা ছিল না। তখনকার মাতালদের আড্ডাখানাগুলোকে বলা হত পাঞ্চ হাউস। সেখানে অ্যালকোহলের সঙ্গে গোলাপজল, লেবুর রস, লবঙ্গ এই সব মিশিয়ে দেওয়া হত। ওই সব পাঞ্চ হাউসের উন্নত সংস্করণ হল ট্যাভার্ন। সেখানে যেমন কফি পাওয়া যেত আবার সঙ্গে শেরি, ক্ল্যারেট, ওয়াইন তো বটেই কোথাও আবার ফরাসি মদও পাওয়া যেত।
লালবাজারের কাছে অবস্থিত ‘অ্যাপেলো ট্যাভার্ন’ হল কলকাতা শহরের প্রাচীন ট্যাভার্ন। শহর কলকাতার প্রাচীন হোটেল ‘স্পেন্সেস হোটেল’ চালু হয়েছিল আনুমানিক ১৮৩০ সাল নাগাদ। তার আগেই অবশ্য ক্লাব-কালচার আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়কার এক উল্লেখযোগ্য ক্লাব ‘দি বেঙ্গল ক্লাব’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮২৭ সালে।
প্রথমে নাম ছিল ‘ইউনাইটেড সিভিল সার্ভিস ক্লাব’, পরে নাম হয় ‘বেঙ্গল ক্লাব’। জায়গা পরিবর্তন করেও এখনও সে ক্লাব চলছে। ওখানকার রেস্তোরাঁয় বর্তমানে নিরামিষ খাবারের থালির দাম জনপ্রতি ৯০০টাকা আর আমিষ হলে দাম পড়বে ১০৫০টাকা। পরে আরও ক্লাব তৈরি হয় তবে সেগুলো সবই ছিল সাদা চামড়ার লোকেদের জন্য।
স্পেন্সেস হোটেল’-এর পর আস্তে আস্তে আরও অনেক হোটেল এবং বার কাম রেস্তোরাঁ তৈরি হতে থাকে। কিন্তু সে সবের কোনওটারই এখন আর অস্তিত্ব নেই ‘গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল’ ছাড়া। ১৮৪০-৪১ সাল নাগাদ ডেভিড উইলসন নামে এক সাহেব তৎকালীন ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ডের নামে একটা হোটেল খোলেন। পরে সেটারই নাম হয় ‘গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল’। লোকসান ও অন্যান্য কারণে মাঝে কয়েকবার বন্ধ হওয়ার পর, হোটেলের মালিকানা বদল হয় এবং ২০১৩ সাল থেকে ‘দি ললিত গ্রেট ইস্টার্ন’ নামে চালু হয়েছে।
প্রধানত অভিজাত ও উচ্চবিত্তের জন্য হলেও এই হোটেলে মধ্যবিত্তের উপযোগী দামেও খাবার ও মদ পাওয়া যায়। রয়েছে একাধিক বার-কাম-রেস্টুরেন্ট। তার মধ্যে ‘আলফ্রেসকো’ রেস্তোরাঁয় দু’জনের জন্য খাবারের দাম পড়বে কমবেশি ৩৫০০টাকার মতো। পাওয়া যাবে পঁচিশ বছরের পুরনো সিভাস রিগ্যাল থেকে জনি ওয়াকার ব্লু-গোল্ড-ব্ল্যাক-রেড লেবেলের বিভিন্ন পানীয়। দাম পড়বে পেগপ্রতি ৩৪৭৫ টাকা থেকে ৪২৫ টাকার মধ্যে।
সাবেক চৌরঙ্গি রোডের (এখনকার জওহরলাল নেহরু রোড) ১৩ নম্বর বাড়িতে ছিল এক বোর্ডিং হাউস। পাশে ১৬ নম্বর বাড়িতে থাকতেন আর্মেনিয়ান ব্যবসায়ী আরাটুন স্টিফেন। বোর্ডিং হাউসটা উঠে গেলে ওই বাড়ি এবং পাশাপাশি আরও কয়েকটা বাড়ি কিনে পুরো জায়গাটা নিয়ে নিওক্ল্যাসিক্যাল শৈলীর বাড়ি তৈরি করে বিশ শতকের গোড়ার দিকে তিনি ‘গ্র্যান্ড হোটেল লিমিটেড’ নামে এক হোটেল খুললেন।
১৯৩০ সাল নাগাদ তিনি মারা যান। তার পর কলেরা রোগে হোটেলের বেশ কিছু অতিথি মারা গেলে সরকারের চাপে হোটেলটা বন্ধ করে দিতে হয়। বেশ কয়েক বছর পরে, ভারতীয় ব্যবসায়ী মোহন সিং ওবেরয় হোটেলটা কিনে ‘দি ওবেরয় গ্র্যান্ড হোটেল’ নাম দিয়ে নতুন করে সেটা চালু করেন। বর্তমানে এই হোটেলে রয়েছে বেশ কয়েকটা বার কাম রেস্তোরাঁ।
জ্যাক ড্যানিয়েল ব্ল্যাক থেকে জনি ওয়াকার, ব্যালেনটাইন, টিচারস থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন রকমের হুইস্কি, রাম, ভদকা, জিন এবং বিয়ারও। দাম পড়বে ৩৫০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত ব্র্যান্ডের মান অনুসারে। এগুলোর তুলনায় বেশ নতুন পার্ক স্ট্রিটের ‘দি পার্ক হোটেল’। এপিজে সুরেন্দ্র গ্রুপের উদ্যোগে ১৯৬৭ সালে পার্ক স্ট্রিটের উপরে খোলা হয় এই হোটেলটা। পার্কের ‘সামপ্লেস এলস’-এর খাদ্যপানীয়ের দাম মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার মধ্যেই।
দু’জনের লাঞ্চের খরচ পড়বে ২৫০০ টাকার মধ্যে। পানীয়ের মধ্যে রয়েছে, ২১ ও ১৮, ১৫ বছরের পুরনো গ্লেনফিডিচ, সিভাস রিগ্যাল থেকে জনি ওয়াকার, রয়্যাল স্যালুটের মতো স্কচ এবং ভদকা, জিন, টাকিলার মতো পানীয়। দাম পড়বে ৭৭০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।