কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভূমিকা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের অবস্থানের সঙ্গে খাড়গের এ দিনের বক্তব্যের কোনও ফারাক নেই বলেই ‘ইন্ডিয়া’ শিবিরের একাধিক নেতার পর্যবেক্ষণ। এরপরেও শুধু বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলা নয়, শনিবার সন্দেশখালিকে উপদ্রুত অঞ্চল ঘোষণার পক্ষেও সওয়াল করেছেন অধীর। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির এই অবস্থানে যে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সায় নেই তা এ দিন মল্লিকার্জুন খাড়গে, কেসি বেণুগোপালরা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
অধীরের দাবি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বেণুগোপাল এ দিন দিল্লিতে বলেন, ‘কোনও রাজ্যেই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত বলে মনে করে না কংগ্রেস। বাংলার ঘটনা দুঃখজনক। তবে সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব নিজেরা বিষয়টি নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা করবেন।’ কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের এই অবস্থান দেখে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের প্রতিক্রিয়া, ‘ফের প্রমাণিত হলো—ইন্ডিয়া জোটের মৌলিক ভাবনার পরিপন্থী হচ্ছেন অধীর চৌধুরী। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এখানে বিজেপির তামাক খাচ্ছেন!’
যদিও শনিবার অধীর ফের বলেন, ‘ইডির উপর হামলা থেকে স্পষ্ট, বহু তথ্য গোপন করতে মরিয়া তৃণমূল। এরপর শাহজাহানরা হাইকোর্টে ঢুকে বিচারপতিদের উপরে হামলা করলে অবাক হব না। এখনই সন্দেশখালিকে উপদ্রুত এলাকা ঘোষণা করে তল্লাশি চালানো উচিত। রাষ্ট্রপতি শাসন জরুরি। কিন্তু বিজেপি পালোয়ানি না-করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে দেখাক।’
অধীরের নেতৃত্বে প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশ মনে করছে, পুলিশ-প্রশাসনের মদত না থাকলে ইডির উপরে এভাবে আক্রমণ হতে পারে না। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আবার সরাসরি রাষ্ট্রপতি শাসনের পক্ষে না-থাকলেও রাজ্যে অনেক মুক্তাঞ্চল তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন।
তাঁর কথায়, ‘রাজ্যে কাজল শেখ, শওকত মোল্লা, জাহাঙ্গির-সহ অনেকে শাহজাহানের মতো মুক্তাঞ্চল তৈরি করেছে। শুভেন্দু নন্দীগ্রামেও এমন মুক্তাঞ্চল তৈরি করেছিল। সন্দেশখালিতে এই নাটক তৈরি করা হলো। যাতে এজেন্সি এরপর বলতে পারে, পুঁচকে একজনকে ধরতে গেলে যদি এই পরিস্থিতি হয়, তাহলে রাঘব বোয়ালদের ধরতে গেলে কী পরিস্থিতি হবে?’
অধীররা যা-ই বলুন না-কেন, খাড়গে কিন্তু সামগ্রিকভাবে ইডি-সিবিআই নিয়ে সম্পূর্ণ উল্টো অবস্থান নিয়েছেন। তিনি এদিন দিল্লিতে বলেন, ‘মোদী সরকার খোলাখুলি ইডি ও সিবিআইয়ের অপব্যবহার করছে। ছোট ছোট নেতাদের বাড়িতে, তাঁদের আত্মীয়দের বাড়িতে এজেন্সি যাচ্ছে। কখনও কংগ্রেস নেতাদের ধরা হচ্ছে। কখনও তৃণমূল নেতাদের ধরা হচ্ছে। কখনও আবার টিডিপি নেতাদের ধরা হচ্ছে। সবাইকে কলঙ্কিত বলে দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের নিচুতলার নেতা ও তাঁদের পরিবারকেও এজেন্সি দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে।’
বিরোধী শিবিরের যে নেতাদের এজেন্সি নিশানা করে, সেই নেতারা বিজেপিতে গেলে ধোয়া তুলসিপাতা হয়ে যায় বলে বারবার অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই সুরেই এদিন খাড়গে বলেন, ‘আমাদের নেতাদের ধরলে তাঁরা কলঙ্কিত হচ্ছেন। অথচ সেই নেতাই বিজেপিতে যোগ দিলে তাঁর সব কলঙ্ক মিটে যাচ্ছে। ওদের কাছে সবচেয়ে বড় ওয়াশিং মেশিন আছে।’ পশ্চিমবঙ্গে অধীরের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব যে অসন্তুষ্ট, সেই বার্তা কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে দিয়েছেন জোড়াফুলের নেতারা।
তারপরেই কংগ্রেস হাইকম্যান্ড অধীরের অবস্থানকে খারিজ করল কি না, এই জল্পনাও তৈরি হয়েছে। জোড়াফুলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘অধীর চৌধুরী বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। ২০২১ সালেও অধীরের লক্ষ্য ছিল বিজেপিকে অক্সিজেন দেওয়া। ইন্ডিয়া জোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতা চাইছেন সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী। সেখানে প্রদেশ কংগ্রেস তৃণমূলের ক্ষতি করতে চাইছে।’