লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের সমস্ত সাংসদ, বিধায়ক, সাংগঠনিক নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী শুক্রবার কালীঘাটে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে এই বৈঠক হওয়ার কথা। এই বৈঠকে বাংলায় জোট নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর মনোভাবের ইঙ্গিত মিলতে পারে বলে মনে করছেন জোড়াফুল নেতারা।
মমতা ছাড়াও বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী থাকতে পারেন। গত দু’-তিন বছরে ফিরহাদ হাকিম, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের সাংগঠনিক ও নির্বাচনী কাজের দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দুই নেতাও কালীঘাটের বৈঠকে থাকতে পারেন বলে তৃণমূল নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ। কিছু দিন আগে মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের সাংগঠনিক নেতৃত্বে বদল হয়েছে।
বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদে এসেছেন অপূর্ব সরকার। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অপূর্ব প্রার্থী হয়েছিলেন। জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান পদে কানাই মণ্ডলকে সরিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই নতুন সাংগঠনিক নেতৃত্বের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রথম বৈঠক করতে চলেছেন মমতা।
২০১৯-এর লোকসভায় বহরমপুর কংগ্রেস ধরে রাখতে পারলেও মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর আসনে তৃণমূল জয়ী হয়। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মমতা ঝড়ে মুর্শিদাবাদ জেলাতেও কংগ্রেস শূন্য হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর মুর্শিদাবাদ জেলায় কখনও যে ফলাফল হয়নি।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে জোট হবে কি না, এখনও স্পষ্ট নয়। প্রদেশ কংগ্রেস চাইছে, মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনটি তৃণমূল ছেড়ে দিক। যদিও তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব কংগ্রেসকে বহরমপুর ও মালদা দক্ষিণ কেন্দ্রের বাইরে আর কোনও লোকসভা আসন ছাড়ার ইঙ্গিত এখনও দেয়নি।
মুর্শিদাবাদ জেলার তৃণমূলের এক বিধায়কের কথায়, ‘জোট হবে, কী হবে না, তার আভাস নেত্রীর বক্তব্য থেকে পাওয়া যেতে পারে। মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের অসুস্থ। এই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল হচ্ছে কি না, তা-ও বোঝা যাবে।’ অফিসিয়ালি তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাভিত্তিক বৈঠক করছেন। তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার সঙ্গেও বৈঠক করবেন। তিনি কী নির্দেশ দেবেন, এই নিয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করতে পারি না।’
মুর্শিদাবাদের আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সঙ্গে মমতা বৈঠক করেছেন। বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট নিয়ে জটিলতা না কাটলেও রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র রুটে মুর্শিদাবাদ জেলা রয়েছে। এই জেলায় রাহুল অন্তত একশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবেন। বহরমপুর, জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ—এই তিনটি লোকসভা কেন্দ্র ছুঁয়ে যাবেন রাহুল।
এআইসিসি-র সদস্য বাংলার এক কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘রাহুল গান্ধী যাতে মুর্শিদাবাদ জেলায় এক অথবা একাধিক জনসভা করেন, সেই প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। কোথায় সমাবেশ হবে, তা কেসি বেণুগোপালের সঙ্গে অধীর চৌধুরীর বৈঠকে চূড়ান্ত হবে। আগামী শনিবার অথবা রবিবার এই বৈঠক হবে। রাহুলের ন্যায় যাত্রাকে সামনে রেখে বড় জনসমাবেশ করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।’
কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট জটিলতা না-কাটায় বাংলায় রাহুলের ন্যায় যাত্রায় তৃণমূল যোগ দেবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এই বিষয়েও দলনেত্রীর মনোভাব আগামী শুক্রবারের বৈঠকে বোঝা যেতে পারে বলেও মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য।