Kharagpur IIT : ফয়জান-মৃত্যুতে রক্ত রহস্য, কেউ কি এসেছিল সে দিন? – kharagpur iit student blood samples were collected from spot by investigators


সোমনাথ মণ্ডল

আত্মহত্যা না খুন? খড়্গপুর আইআইটি’র ছাত্র ফয়জান আহমেদের রহস্যমৃত্যুর নেপথ্যে আসল সত্যটা কী–তার কিনারা এখনও হয়নি। এর মধ্যে জট পেকেছে ‘রক্ত-রহস্যে’। ঘটনাস্থল থেকে রক্তের যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, তাতে AB+ গ্রুপের নমুনা মিলেছে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু আইআইটি খড়্গপুরে ভর্তির সময়ে নথিতে ফয়জান লিখেছিলেন তাঁর রক্তের গ্রুপ O+।

দু’টি আলাদা গ্রুপের রক্তের নুমনা মেলায় ফয়জানের মৃত্যুরহস্যে তদন্তের মোড় ঘুরে গিয়েছে অন্য বাঁকে। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখতে চাইছেন, ফয়জানের রক্তের গ্রুপ কি সত্যিই O+ নাকি AB+? যদি O+ হয়ে থাকে তা হলে ঘটনাস্থলে AB+ গ্রুপের রক্ত কী ভাবে এলো–সেটাই তৈরি করেছে ধন্দ।

প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি ঘটনার দিন ফয়জানের ঘরে কেউ এসেছিল? ওই ছাত্রকে কি কেউ খুনই করেছে? সূত্রের খবর, ডিএনএ পরীক্ষার জন্যে ফয়জানের দেহ থেকে চুল, নখ-সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ সংরক্ষণ করা হলেও রক্ত হয়নি। ফলে ব্লাড গ্রুপ নির্ণয়ে নতুন করে পরীক্ষার সুযোগ নেই।

রহস্যের কিনারায় আপাতত ওই ছাত্রের ডিএনএ-এর পাশাপাশি তাঁর বাবা-মায়ের রক্ত এবং ডিএনএ টেস্টের পথে হাঁটতে চাইছেন তদন্তকারীরা। যাতে আসল গ্রুপের সন্ধান মেলে। দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অবশ্য খুনের ইঙ্গিতই করেছিলেন ফরেন্সিক মেডিসিনের এক্সপার্ট অজয়কুমার গুপ্ত। এখন AB+ রক্তের নমুনা মেলায় সেই তত্ত্ব জোরালো হচ্ছে।

অসমের বাসিন্দা ফয়জান আইআইটি খড়্গপুরের ভর্তি হন ২০১৯-এ। হস্টেলের ঘর থেকে বি-টেক কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রের দেহ উদ্ধার হয় ২০২২-এর ১৪ অক্টোবর সকালে। প্রথমে আত্মহত্যা বলেই দাবি করেছিলেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ এবং জেলা পুলিশ। প্রথম ময়নাতদন্তেও তেমনই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। পরে ফয়জানের বাবা-মা খুনের অভিযোগ তোলায় দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ডাক্তার গুপ্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর সিট গড়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় কোর্ট। সিট-এর তদন্তে একের পর এক সন্দেজনক বিষয় সামন আসছে। তার মধ্যে রক্তের গ্রুপের গোলমালও ধরা পড়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অজয়কুমার গুপ্ত মনে করেন, ‘এটি শুধু খুনের ঘটনা নয়, ষড়যন্ত্র করে প্রমাণ লোপাটও করা হয়েছে। ওই ছাত্রের চোয়ালের শেষের অংশ এবং কানের লতি যেখানে শেষ হচ্ছে অর্থাৎ ঘাড়ের কাছে যে আঘাত পাওয়া গিয়েছে, তা খুনের তত্ত্বই প্রতিষ্ঠা করছে।’
University of Calcutta: মোবাইল দেখে উত্তর লিখতে গিয়ে ধরা পড়লেন পরীক্ষার্থী
তাঁর সংযোজন, ‘ঘটনার ৩ দিন আগে থেকে ছাত্রটির মোবাইল বন্ধ ছিল। প্রায় এক বছর পর দেহ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করা হয়। ঘাড়ের ভিতরের অংশের ডান দিকে ছুরি জাতীয় কিছু দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছিল। বাঁ দিকে গুলির দাগের মতো আঘাতও পাওয়া গিয়েছে। শিরা এবং ধমনি প্রায় ছিঁড়ে গিয়ে গুরুতর আঘত লাগার কারণেই মৃত্যু হয়েছিল। খুনের মতোই ঘটনা।’

এ দিকে আইআইটি খড়্গপুরের প্রফেসর এবং ফয়জানের সহপাঠীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পরস্পর-বিরোধী বক্তব্য পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। সে কারণে অন্তত পাঁচ জনের পলিগ্রাফ টেস্টের দিকে এগোচ্ছে সিট। আবার ফয়জানের যে ল্যাপটপ এবং ট্যাব পাওয়া গিয়েছিল, তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। একটি বিশেষ কোম্পানির হওয়ায় ওই ট্যাব-ল্যাপটপ খুলতে পারেননি তদন্তকারীরা। সেগুলি ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। তা থেকে কী কী তথ্য মেলে, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সিট-এর অফিসাররা। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ‘রক্ত রহস্য’ই।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *