বক্সার জঙ্গলে ঠাঁই নিয়েছে দক্ষিণরায়। আর তাই আসন্ন শিবরাত্রিতে জয়ন্তীর বড় মহাকালে ভিড়ের কথা ভেবে ঘুম উড়েছে বনকর্তাদের। ভিড়ে রাশ টানতে এবার বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ করেছেন বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। বড় মহাকালে শিবরাত্রির মেলা বসে প্রতি বছর। জয়ন্তী রিভারবেডে ওই মেলাকে কেন্দ্র করে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়।একদিকে প্রচুর মানুষের কোলাহল, অন্যদিকে বহু গাড়ির যাতায়াতের কারণে বক্সার বাঘ বিরক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা বনকর্তাদের। উদ্যোক্তাদের থেকে রীতিমতো আগাম মুচলেকা নিয়ে মেলার অনুমোদন দিয়েছে বন দপ্তর। গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা তিন মাসে বন দপ্তরের পাতা ক্যামেরা ট্র্যাপে বারবার ধরা পড়েছে পূর্ণবয়স্ক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি।
শিকারের প্রাচুর্য ও আদর্শ পরিবেশের খোঁজ পেয়ে বক্সার জঙ্গলে সবে মন বসতে শুরু করেছে ডোরাকাটার। তার মধ্যে শিবরাত্রির মেলার ভিড় উদ্বেগ বাড়িয়েছে। মেলার উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়েছে বন দপ্তর। ওই মুচলেকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, এবারের মেলায় খিচুড়ি ও সবজি রান্নায় কোনও ভাবেই কাঠের উনুন ব্যবহার করা যাবে না, পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে গ্যাস ওভেন।
বাজানো যাবে না মাইক অথবা ডিজে। নিষিদ্ধ মদ্যপান। এছাড়া বলা হয়েছে, শৌচালয়গুলিকে পরিবেশ বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মেলার শেষে জয়ন্তী রিভার বেডকে পরিষ্কার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগও। এছাড়াও উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে দশ হাজার টাকা অগ্রিম হিসেবে নিয়ে রেখেছে বন দপ্তর।
কোনও নিয়ম লঙ্ঘিত হলে বাজেয়াপ্ত হবে ওই টাকা। শুধু তাই নয়, বন দপ্তরের ওই নির্দেশিকা কোনও ভাবে লঙ্ঘিত হলে পড়তে হবে আইনের ফাঁদে। এছাড়াও মানুষের অযথা কোলাহল ঠেকাতে রাজাভাতখাওয়া গেট থেকে জয়ন্তী রিভার বেড পর্যন্ত পথে মোতায়েন করা হবে অতিরিক্ত বনরক্ষী ও পুলিশ বাহিনী।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প পূর্বের উপক্ষেত্র অধিকর্তা দেবাশিস শর্মা বলেন, ‘কোনও নিয়ম লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা, সে দিকে আমাদের কড়া দৃষ্টি থাকবে।’ বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা অপূর্ব সেন বলেন, ‘বাঘ সাধারণত মানুষের উপস্থিতি ও কোলাহল একেবারেই পছন্দ করে না। এত বছর পর যখন বাঘটির মন বসতে শুরু করেছে, তখন শিবরাত্রিকে কেন্দ্র করে লক্ষ মানুষের সমাগম বাঘের বিরক্তির কারণ হবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। তবে আমরাও বেশ কিছু কড়া নিয়মকানুন আরোপ করেছি। সব মিলিয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’