‘নামে কী আসে যায়!’ শেক্সপিয়রের সেই লেখা নিয়ে আজও চায়ের আড্ডায় জমিয়ে তর্ক করা যায়। কিন্তু সম্বোধনেও কি যায় আসে কিছু? সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা কিন্তু এই প্রশ্নই তুলে দিয়েছে। তারই উত্তর খুঁজল এই সময় ডিজিটাল।
পুলিশ অফিসারকে ‘দাদা’ বলে ডেকে ছিলেন এক শিক্ষক । আর তাতেই ওই শিক্ষককে চড় মেরে বসলেন একজন ASI। অন্তত অভিযোগ এমনই।গত বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলকোটের নিগন চটি এলাকায়। কৈচর ফাঁড়ির ওই পুলিশকর্মীর এই আচরণে রীতিমতো ক্ষোভ ছড়ায় এলাকায়। পুলিশের এই ঔদ্ধত্য দেখে ক্ষোভ ছড়ায় স্থানীয়দের মধ্যেও। মঙ্গলকোট থানার আইসি ও বিধায়ক খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তাঁদের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে পরিস্থিতি। যদিও গোটা অভিযোগ কিন্তু পুলিশ অস্বীকার করেছে।
যদিও এই ঘটনা এই প্রথম নয়, কয়েক মাস আগেই উত্তরবঙ্গে কাজ করা এক বিডিও ‘দাদা’ ডাক শুনে আপত্তি করেছিলেন। সময়মতো দফতরে না-আসায় গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকজন কর্মী ও আধিকারিককে শোকজ করেছিলেন তিনি। সেই সময়ই এক মহিলা কর্মী তাঁকে দাদা বলে সম্বোধন করেন। বিডিও সঙ্গে সঙ্গে বলেন, ‘বিডিও কখনও আপনার দাদা হতে পারে না।’
কী বলছে আইন?
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা এই সময় ডিজিটালকে বলেন, ‘এখানে ‘দাদা’ বলায় আমি তো কোনও অপরাধ দেখতে পাচ্ছি না। উল্টে যদি ‘স্যার’ না বলার জন্য কেউ চড় মারেন, সেটা অনেক বড় অপরাধ বলেই আমার মনে হয়। পদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হলে সেক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কাউকে ‘স্যার’ বলেও সম্মান না দেখালে সেটা মনে হয় অনেক বড় অপরাধ।’ প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীর বলছেন, ‘ দাদা বলে ডাকায় সমস্যা কোথায়, পুলিশ অফিসার তো একজন পাবলিক সার্ভেন্ট। এখানে আমি তো কোনও ভুল দেখতে পাচ্ছি না।’ এ বিষয়ে জানতে পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপকে মেসেজ করা হলেও তিনি কোনও উত্তর দেননি।
কাউকে ‘স্যার’ বলেও সম্মান না দেখালে সেটা মনে হয় অনেক বড় অপরাধ
আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা
তবে খোদ পুলিশ সুপার হুগলি, নদিয়া জেলায় পোস্টেড থাকাকালীন একদম নীচুতলায় মিশে কাজ করেছেন। কৃষ্ণনগরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকাকালীন জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রা জনসাধারণের সঙ্গে মিশে দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। তাঁর জেলায় এমন একটি অভিযোগ ঘিরে অনেক মহলেই প্রশ্ন উঠছে। পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( গ্রামীণ) রাহুল পান্ডে যদিও বলেছেন, ‘এরকম কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে আসেনি।’ রাজ্যের প্রাক্তন আমলা সুশান্ত চক্রবর্তী এই সময় ডিজিটালকে বলেন, ‘এরকম কোনও নিয়ম নেই। অতিরিক্ত জেলাশাসক, জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করার সময় অনেকেই ‘দাদা’ বলে সম্বোধন করেছেন। কোনও সময় তো কেউ বড় অপরাধ করেছে বলে মনে হয়নি। আইনে ‘স্যার’ বলার কোনও সংস্থান নেই।’
বর্তমানে পুলিশ-প্রশাসনের বহু কর্তাই এই বিষয়গুলিকে খুব সহজভাবে নেন। জেলায় জেলায় বহু বছর ধরে প্রচারের আড়ালে থেকে বহু WBCS, WBPS অফিসার বেকার যুবক যুবতীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছেন। সরকারি চাকরি পেতে ‘বেকার’-দের সাহায্য করে চলেছেন। কেউ বা পেশাদারি ভাবমূর্তি রেখে চলাই পছন্দ করেন। আবার কেউ জেলায় থাকতে থাকতে অনেকের ‘দাদা-দিদি’ বা বন্ধুত্বর জায়গায় পৌঁছন। জেলায় জেলায় অফিসার মহলে এখনও বিভিন্ন পদের পর সাহেব বা SIR কথাটা অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। কর্মক্ষেত্রে এ সম্বোধন মেনে চলাই দস্তুর। আবার জুনিয়র ব্যাচের অফিসাররা সিনিয়রদের দাদা সম্বোধনও করেন।
রাজ্যের এক কর্তা বলছেন, ‘রাজ্যের অফিসার মহলে সবচেয়ে উঁচু পদ মুখ্য সচিবের। তিনিও কিন্তু জেলাশাসককে চিঠি করার সময় ‘স্যার’ সম্বোধন করেন। ফলে এই সম্বোধন পুরোটাই আলঙ্কারিক’।