বাবা পরিত্যাগ করেছেন। মা ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়িতে। বৃদ্ধ দাদুর ভরসাতেই বড় হয়ে উঠেছে নাতি। দাদুর অভাবের সংসারে দু’বেলা অন্ন জোটানো দায়। সেই ছেলের সাফল্যেই এবার বুক চওড়া গোটা পরিবারের। ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকায় দারুণ ফল করা অভিজিৎ এবার সুযোগ পাচ্ছেন খড়গপুর IIT-তে পড়ার।ইংরেজবাজার শহরের গ্রীণপার্কার বাসিন্দা অভিজিৎ রায়। মালদা টাউন হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। এবার জেইই পরীক্ষা দিয়ে আইআইটি খড়গপুরে সুযোগ পেলেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। শহরের বাঁধ রোডে দাদু রতন হালদারের বাড়িতেই বড় হয়ে ওঠা অভিজিতের। তাঁর বাবা যোগাযোগ রাখেন না। মা অসুস্থ রয়েছেন। তবুও মনের অদম্য ইচ্ছে শক্তির জোরে সাফল্য পেয়েছেন তিনি।

দাদু রতন হালদার টোটো চালিয়ে কোনওমতে সংসার চালান। তাঁর রোজগারের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর মতো অবস্থা। দাদুর কাছে থেকে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মনযোগী হয় ওঠে সে। মা-দাদুর দুর্দশা কাটাতে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন তাঁর চোখে। মনের জেদ আর অধ্যাবসায়ের উপর ভর করেই ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষায় দারুণ সাফল্য আনল অভিজিৎ। এবার দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খড়্গপুর আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পেতে চলেছনে তিনি।

তবে, সাফল্যের মাঝেও বড় চিন্তার বিষয় হয়ে গিয়েছে উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থ যোগানের। রতন হালদার বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে দাদুভাইকে বড় করে তুলেছি। ওঁর এই সাফল্যে আমরা সকলেই খুব খুশি। ও মানুষের মতো মানুষ হোক সেটাই আমরা চাই। তবে, এরপরে ওঁর পড়াশোনার খরচ কী ভাবে যোগান দেব, সেটা নিয়েই চিন্তা রয়ে গিয়েছে।’

অভিজিৎ বলেন, ‘আমি চাই পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকলে আমার পাশে এসে দাঁড়াক। আইআইটি কলেজে সুযোগ পেয়েছি ভালোই লাগছে, কিন্তু সেখানে পড়ার জন্য তো অনেকটাই খরচ লাগবে। আমি কিছুদিন আগেই পুরসভার চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।’ প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষও তাঁকে আর্থিক সাহায্যের কথা জানিয়েছেন।

মায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকায় মোবাইল রিচার্জ করে পড়াশোনা, ডাক্তারিতে চান্স বীরভূমের রাহুলের
সামনের রাস্তাটা আরও কঠিন। অভাবের সংসারে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার রসদ জোগাড় করাটা অনেকটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। মা অসুস্থ রয়েছেন। তিনি শয্যাশায়ী। তাঁর চিকিৎসার বিষয়টিও রয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী দিনে পথ চলার রাস্তা মসৃণ নয় বলেই মনে করছেন অভিজিৎ। তবে, পড়াশোনার প্রতি অগাধ টান রয়েছে তাঁর। পড়াশোনার প্রতি যে কোনওরকম অবহেলা হবে না, সে ব্যাপারে স্পষ্ট জানিয়ে দেন কৃতি ছাত্র।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version