জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: একুশের মঞ্চে শেষ বক্তা কে, তা বলার জন্য কোনও পুরস্কার নেই! সব শেষে তিনি উঠলেন মঞ্চে এবং একেবারে নিজস্ব স্টাইলে এলেন-দেখলেন-জয় করলেন ধাঁচে মঞ্চ অধিকার করলেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের পরেই মঞ্চে ওঠেন তিনি। অভিষেকের মতোই গুরুপূর্ণিমা প্রসঙ্গ দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: TMC 21 July Shahid Diwas Live: দিল্লিতে ভয় দেখিয়ে সরকার তৈরি হয়েছে, যে কোনও দিন পড়ে যাবে: মমতা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা শুরু করলেন অখিলেশ যাদবকে ধন্যবাদ জানিয়ে। অখিলেশ উত্তরপ্রদেশ থেকে আজ একুশের সভায় হাজির হয়েছেন। এই প্রসঙ্গেই মমতা বলেন, তিনি চান, গোটা দেশের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক ভালো হোক। অখিলেশ সেখানে যে খেলা দেখিয়েছেন তা একেবারে কামাল করে দিয়েছে, বলে মমতা উল্লেখ করতে ভোলেন না, এরপর লজ্জা থাকলে দিল্লি থেকে বিজেপির সরে যেত, ওদের লজ্জা কম বলে যায়ননি!

এর পরই মমতা দলের প্রতি দলের কর্মীদের প্রতি, দলের যাঁরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তাঁদের উদ্দেশ্য করে বার্তা দেন। বলেন, ‘আমি বিত্তবান চাই না, বিবেকবান চাই’! বলেন, তৃণমূলকে বলব, আগে মানুষের বন্ধু হোন। পয়সা আসে, চলে যায় কিন্তু সেবার কোনও বিকল্প নেই। যেখানে যেখানে জিতেছেন সেখানে মানুষকে ধন্যবাদ দিন। যেখানে জেতেননি, সেখানেও মানুষের কাছে যান, তাঁদের আশীর্বাদ চান। আপনার কী খামতি, সেটা দেখুন।

দলীয় কর্মীদের প্রতি বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘আমরা যত জিতব তত আমাদের দায়িত্ব বাড়বে, তত আমরা মানুষের কর্মী হতে পারব। তৃণমূল কংগ্রেস মানে কোনো একটা রাজনৈতিক দল নয়, এটা মানুষের দল। আমি বিবেকহীন মানুষ চাই না, যাদের বিবেক আছে আমি তাঁদের চাই। যাদের আবেগ আছে, মানবিকতা আছে আমি তাদের চাই।’

দলের প্রতি কড়া বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘আমি আমার দলের কোনও এমএলএ, এমপি, মিউনিসিপ্যালিটির কাউন্সিলর, জেলার কোনও নেতা– কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ বরদাস্ত করব না। যদি অভিযোগ ওঠে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। অন্যায় করলে আপনারা দেখেছেন আমি ব্যবস্থা নিই। অন্যায় করবেন না, অন্যায় করলে তৃণমূল কংগ্রেস ব্যবস্থা নেবে। কেউ যেন আপনাদের লোভী না বানাতে পারে।’

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘যাঁরা নির্বাচিত হয়েও মানুষকে সেবা করবেন না, আমি তাঁদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখব না। কারণ মানুষকে সেবা দেওয়াই আমাদের কাজ। যেখানে যেখানে জিতেছেন, সেখানে সেখানে মানুষের কাছে যান। মানুষের বাকি থাকা কাজ করবেন, যেটা পারবেন না সেটা দলকে জানাবেন। আর যেখানে জেতেননি, সেখানেও মানুষের কাছে যাবেন। হয়তো সেখানে আমাদের কোনও খামতি ছিল, সেই খামতি মেটাতে হবে। মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে।’

এরপর নতুন-পুরানো দ্বন্দ্ব নিয়ে মমতা বলেন, ‘কাউকে বাদ দিয়ে বা অবহেলা করে নয়। যদি কোনও পুরনো সাথী রাগ করে বসে থাকেন, তাহলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে তাঁকে ফিরিয়ে আনুন।’

আরও পড়ুন: TMC 21 July Shahid Diwas: তৃণমূল লোহার মতো শক্ত, যত তাতাবে ততই তাতবে! ৩ মাসের মধ্যে আসছে কী চমক?

শেষে বলেন, আমরা সবাই তৃণমূলের কর্মী, এখানে কেউ নেতা নেই। কর্মীদের উজ্জীবিত করে বলেন, রোখা যাবে না তৃণমূল কংগ্রসের ঢেউ। বক্তব্যশেষে যথারীতি ‘বন্দে মাতরম’, ‘তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ’, ‘খেলা হবে’ ‘দেখা হবে’, ‘জয়বাংলা’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

প্রসঙ্গত, দল সম্পর্কে প্রায় একই সুরে কথা বলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অভিষেক বলেন, এই জয়ের প্রধান কারিগর যাঁরা, তাঁরা এখানে উপস্থিত। তাঁরাই এই জয়ের সৈনিক। আমি বলেছিলাম, মানুষের শক্তি কী, আমরা দেখাব। বিজেপিকে ধুয়ে-মুছে দিয়েছি আমরা। এই জয় আপনাদের সমর্পণ করছি। আপনাদের সকলের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছি।

অভিষেক বলেন, আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। এই ধর্মতলা থেকেই বিজেপি একদিন বলেছিল ‘ভাগ, মমতা ভাগ’। আজ সারা বাংলা বলছে ‘ভাগ, বিজেপি ভাগ’। তাঁদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বুক চিতিয়ে লড়ুন, বাকিটা আমরা দেখব। বাংলার জনগণ বিজেপিকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। ওরা জানত না, ইডি আর সিবিআইয়ের স্ক্রু ড্রাইভারের থেকে মানুষের হাতে থাকা হাতুড়ির জোর অনেক বেশি। 

বিজেপি বলেছিল। চারশো পার। চারশো পার হল? বিজেপির কাছে সব আছে। তৃণমূলের কাছে আছে জনগণ। তৃণমূলকে ছোট করতে গিয়ে এরা বাংলাকে ছোট করেছে। সন্দেশখালিকে বিজেপি হাতিয়ার করেছিল, সেই সন্দেশখালি যে বসিরহাট লোকসভার অধীনে সেখানে বিপুল ভোটের ব্য়বধানে জিতেছে তৃণমূল। 

লড়াই থেকে তৃণমূল থেকে সরে আসেনি। আগামী দিনের লড়াই আরও বড়। আমাদের ২৬-এর জন্য এখন থেকেই প্রস্তুত হতে হবে। নিজের কথা ভাবলে চলবে না। এই লড়াই শুধু মমতার লড়াই নয়, এটা ১০ কোটি মানুষের লড়াই। আমি এই যে এক-দেড় মাস পর্যালোচনার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমি এক কথার ছেলে। কথা দিয়ে কথা রাখি। তিন মাসের মধ্যে দেখবেন কী ঘটে! 

আপনারা যেভাবে জয় এনে দিয়েছেন, তা অভাবনীয়। আমরা বলেছিলাম, বুথ পাহারা দিয়ে মানুষ যাতে নিজের ভোটটা দিতে পারে, সেটা দেখুন। আপনারা সেটা করেছেন। দিল্লির দয়াদাক্ষিণ্যে আমরা বেঁচে নেই। আমরা সবাইকে বাড়ির টাকা দেব। আমাদের মা-মাটি-মানুষ প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দেবে বাড়ির টাকা। যাঁরা আমাদের ভোট দিয়েছেন, তাঁদেরও যেমন, তেমনই যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন, তাঁদেরও উন্নয়ন দেখব আমরা। আমাদের একটাই ধর্ম– মানুষকে পরিষেবা দেওয়া। তৃণমূল লোহার মতো শক্ত। যত তাতাবে ততই তাতবে।  আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। 
আমরা গরিব মানুষের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার জন্য সব সময় চেষ্টা করি। বিজেপি নরেন্দ্র মোদীর গর্জনে বিশ্বাস করেছিল, টাকার  গর্জনে বিশ্বাস করেছিল। আমরা মানুষের উপর বিশ্বাস রেখেছি।

কথা দিচ্ছি, যারা এই নির্বাচনে মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না। এখন একটা কথা বলুন– মাথা নত না করে যেভাবে লড়েছেন, সেভাবেই আগামীদিনে লড়বেন তো? আগামী দিনে লড়াই হবে? খেলা হবে?

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version