Rg Kar Medical College,আরজি কর ছেড়ে সন্দীপ ন্যাশনালে, চাপের মুখে পদত্যাগ – rg kar medical college principal sandip ghosh has resigned


এই সময়: একাধিক বার বদলি হয়েও অল্প সময়েই সরকারি আদেশনামা বদলে গিয়েছে তাঁর জন্য। ফের স্বপদেই দিব্যি বহাল থেকেছেন তিনি। কখনও অপছন্দের ইন্টার্নের বিরুদ্ধে পক্ষপাত করা তো কখনও আবার বলপূর্বক আন্দোলন থামিয়ে দেওয়া, কখনও বা চিকিৎসা-বর্জ্য নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ— অনেক বদনামের ভাগীদার আরজি করের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ।শাসক দলের চিকিৎসক নেতা থেকে শুরু করে বিরোধী দলের তাবড় নেতারাও তাঁকে চেয়ার থেকে সরাতে বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়েছেন। তাও টলানো যায়নি অস্থিশল্য বিশেষজ্ঞ সন্দীপবাবুকে। অবশেষে তাঁরই কলেজে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তুঙ্গে ওঠা আন্দোলনের চাপে সোমবার পদত্যাগ করলেন সেই সন্দীপ ঘোষ।

শুধুমাত্র অধ্যক্ষ পদ থেকেই নয়, একেবারে সরকারি চাকরি, অর্থাৎ ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিস থেকেও এদিন সকাল ১০টা নাগাদ ইস্তফা দিয়ে দেন সন্দীপবাবু। যদিও স্বাস্থ্য দপ্তর তাঁর চাকরি থেকে ইস্তফা গ্রহণ করেনি। বরং তাঁকে অধ্যক্ষ হিসেবেই বদলি করা হয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। তবে আরজি কর থেকে যেতে যেতেও সন্দীপবাবু এদিন চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেন বলে অভিযোগ। আদালতের নির্দেশ না মেনে ধর্ষিতা ও মৃতা ওই পিজিটি-র নাম বারে বারেই তিনি উল্লেখ করেন সংবাদমাধ্যমের সামনে।

অথচ সুপ্রিম কোর্টের রায় থেকে শুরু করে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা— সর্বত্রই নির্যাতিতা মহিলার নাম-পরিচয় প্রকাশ করা নিয়ে কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘এটা যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, ওই পদে থেকে ওঁর জানার কথা। তার পরেও কী করে নির্যাতিতার নাম প্রকাশ করলেন, ভেবে পাচ্ছি না। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জেনে আমরা সুয়োমোটো পদক্ষেপও করতে পারি।’

আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তো আছেই, কলকাতা হাইকোর্টেও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ একাধিক বার নির্দেশ দিয়েছে যে, নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে এই সংস্থান না থাকলেও ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবেই স্থান পেয়েছে।’

আরজি করের এহেন বিতর্কিত সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষের দাবি, গত চার দিনে নানা সময়ে তাঁর মুখে অসত্য কথা উদ্ধৃতি হিসেবে বসিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও মহিলা পিজিটি-র ধর্ষণ ও খুনের পরে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক বার উঠেছে অসংবেদনশীলতার অভিযোগ। অবশ্য এ ভাবে বার বারই বিতর্ক কেন তাঁর পিছু ছাড়েনি, তা নিয়ে কোনও সদুত্তর দেননি তিনি।

এর আগেও অবশ্য কী ভাবে ২০২২-এ তাঁর নামে দু’-দু’ বার বদলির অর্ডার বেরিয়ে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিবারে সেই অর্ডার বাতিল হয়ে গিয়েছে খাস স্বাস্থ্যভবন থেকেই, তারও কোনও সদুত্তর সে সময়ে দেননি সন্দীপবাবু। ২০২০ সাল থেকে আরজি করের অধ্যক্ষ পদে আসীন ছিলেন তিনি। তার আগে প্রশাসনিক দায়িত্ব বলতে ন্যাশনাল মেডিক্যাল এবং মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে উপাধ্যক্ষের পদে চাকরি।

তারও আগে ছিলেন ন্যাশনালের অস্থিশল্য বিভাগের প্রধান। তখন থেকেই বিতর্ক আর সন্দীপ ঘোষ একই বন্ধনীতে আসার শুরু। দুর্নীতির অভিযোগে সে সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও হয়েছিল। পরে তা থেকে মুক্তই হননি তিনি, একেবারে উপাধ্যক্ষের চেয়ার মিলে গিয়েছিল। তার পরেও অর্থোপেডিক ইমপ্লান্ট বিপণনকারী সংস্থার সঙ্গে তাঁর আঁতাতের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তাঁর কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেননি কেউ।

আরজি করে আসা ইস্তকও নানা বিতর্কে নাম জড়িয়েছে সন্দীপবাবুর। গত মার্চ মাসেও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে রিপোর্ট তলব করেছিল শিয়ালদহ আদালত। টেন্ডারের ক্ষেত্রে অনিয়ম-সহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছিল। তাঁর নামে অভিযোগও দায়ের হয় টালা থানায়। এর আগে টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন আরজি করেরই প্রাক্তন এক ডেপুটি সুপার। নির্দিষ্ট সংস্থাকে না দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা বর্জ্য পাচার করার অভিযোগও উঠেছিল সুপারের বিরুদ্ধে। যদিও সে সবই অস্বীকার করে সন্দীপবাবুর দাবি, ‘রাজনৈতিক স্বার্থে নানা মহল থেকে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে।’

‘আমার মুখে কথা বসিয়ে রাজনৈতিক খেলা চলছে’, পদত্যাগ আরজি করের অধ্যক্ষর

কিন্তু তাঁর পদত্যাগে সন্তুষ্ট হতে পারেননি আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার থেকে শুরু করে সিনিয়র ডাক্তাররাও। তাঁর ইস্তফাকে ‘নাটক’ আখ্যা দিয়ে পাঁচটি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ এবং আইএমএ-র রাজ্য শাখার তরফে আয়োজিত যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে চিকিৎসকরা দাবি করেন, ‘সরকারি চাকরি থেকেই বরখাস্ত করা হোক সন্দীপ ঘোষকে। তার পর এই তরুণী পিজিটি মৃত্যুর ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত হোক।’

আপাতত আরজি করের খালি হয়ে যাওয়া অধ্যক্ষ পদ অস্থায়ী ভাবে সামলাবেন সুহৃতা পাল। অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তাঁকেও মেনে নিতে আপত্তি রয়েছে আরজি করের পড়ুয়া, চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *