লালবাজারের এক কর্তা জানান, তরুণীর মৃত্যুর তদন্তে এখনও পর্যন্ত যা পাওয়া গিয়েছে, সেই তথ্য সিবিআই-এর সঙ্গে শেয়ার করা হবে। কেস ডায়েরি ইতিমধ্যেই হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের নির্দেশে সিবিআইয়ের স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের শাস্তির দাবিতে সিবিআইকে চিঠিও দিয়েছে চিকিৎসক মহল।
তাঁদের প্রশ্ন, ‘নাইট ডিউটির পরে রিলিভার আসার কথা পরের দিন সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে। নির্যাতিতা ওই চিকিৎসককে ‘রিলিভ’ দিতে শুক্রবার সকালে কোন পিজিটি এসেছিলেন? তাঁর বক্তব্য কি জানার চেষ্টা করেছে পুলিশ?’ হাসপাতালের একটি সূত্রের দাবি, আরজি করের চেস্ট মেডিসিন বিভাগ এতটাই ব্যস্ত যে, সেখানে মাঝরাতের পরেও ওয়ার্ড থেকে অন-কল ডাক্তারের মোবাইলে লাগাতার ফোন আসতে থাকে।
তরুণী চিকিৎসকের ফোনে অত দীর্ঘ সময় কোনও কল না আসাটা একটু অস্বাভাবিক। পুলিশের দাবি, রাত দুটো থেকে তিনটে অর্থাৎ একঘণ্টায় মোট দু’বার ওই তরুণীকে ডাকতে এসেছিলেন অন্য চিকিৎসকেরা। কিন্তু ওই সময়ে তিনি ঘুমোচ্ছিলেন বলে দুই চিকিৎসক-ই তদন্তকারীদের জানিয়েছেন। তদন্তে উঠে এসেছে, রাত ২টো ৩৫ মিনিট নাগাদ এক পরিচিতের পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের উত্তরও দিয়েছিলেন ওই তরুণী। ফলে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় সময়ের ব্যবধান নিয়ে বিস্তর অসঙ্গতি রয়েছে।
সাধারণ ভাবে সকাল ৭টার পর থেকে রোগীদের ভিড় জমতে শুরু করে সেমিনার রুমের আশপাশে। কিন্তু শুক্রবার সকালে ভিড় জমে যাওয়ার পরেও কেন সেমিনার রুম বন্ধ ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সাড়ে আটটা নাগাদ সেমিনার রুমে ওই তরুণী চিকিৎসককে অবিন্যস্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন সাফাইকর্মীরা। তারপর বিষয়টি জানাজানি হয়। এখানেও কর্তৃপক্ষের গাফিলতি খুঁজে পান তদন্তকারী অফিসারেরা।
সিটের এক অফিসারের কথায়, ‘রাত তিনটে থেকে ভোর চারটে পর্যন্ত সেমিনার হলে ঠিক কী ঘটেছিল তা জানতে হাসপাতালের নার্সিংস্টাফ থেকে শুরু করে ইন্টার্ন-জুনিয়র ডাক্তার, এমনকী ওই হাসপাতালে কর্মরত পুলিশকর্মী মিলিয়ে মোট ৩৭ জনকে মঙ্গলবার লালবাজার তলব করা হয়। সকাল থেকে এদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়াও শুরু হলেও দুপুরে হাইকোর্টের নির্দেশের পরে সেই কাজ বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে, এদিনই সন্ধ্যায় টালা থানায় যান সিবিআইয়ের স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসারেরা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁরা খোঁজখবর নেন। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তের প্রয়োজনে গত ৩০ দিনের সিসিটিভি-র ফুটেজ চাওয়া হয়েছিল আরজি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। সেই সমস্ত ফুটেজ বুধবারের মধ্যে সিবিআইকে হস্তান্তর করা হচ্ছে। ঘটনার দিন ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের চারতলায় সেমিনার রুমের কাছে যে সিসিটিভি ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তা ইতিমধ্যেই ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
সেই রিপোর্ট এ বার সরাসরি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে চলে যাবে। ডিএনএ রিপোর্ট আসতেও সময় লাগবে অন্তত সাতদিন। এ ছাড়া নিহত ওই তরুণী এবং অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের মোবাইলও সিবিআইকে হস্তান্তর করা হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি চলবে আজ, বুধবার সারাদিন ধরে। সম্ভবত এদিনই সিবিআই নতুন করে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করবে। হেফাজতে নেওয়া হবে সঞ্জয়কেও।