Rg Kar Medical College,এই লোককে রিওয়ার্ড! তীব্র ক্ষোভ হাইকোর্টের – protest against rg kar medical college ex principal sandeep ghosh in national medical college premises


এই সময়: গত কয়েক দিনে জনমানসে কার্যত ভিলেন হয়ে উঠেছিলেন আরজি করের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। মঙ্গলবার সেই অভিযোগকে আক্ষরিক অর্থেই মান্যতা দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুন মামলায় শুনানি চলাকালীন এ দিন এজলাসে সশরীরে হাজির থেকে যখন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের কাছে চরম ভর্ৎসনা শুনছেন সন্দীপবাবু, প্রায় তখনই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ চত্বর।সেখানেই তাঁকে অধ্যক্ষ পদে যোগ দেওয়ার আদেশনামা সোমবার জারি করেছিল স্বাস্থ্য দপ্তর। কিন্তু এ দিন ন্যাশনালের জুনিয়র ডাক্তার ও পড়ুয়াদের স্লোগানে সাফ ধরা পড়ল সন্দীপ-বিরোধী স্লোগান— ‘দ্বিতীয় আরজি কর হতে দেবো না ন্যাশনালকে।’

আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার থেকেই কর্মবিরতি চলছে ন্যাশনালে। তা প্রত্যাহার করার বিষয়ে কথা বলতে এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ ন্যাশনালে পৌঁছন সেখানকার রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা এন্টালির তৃণমূল বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ খানও। কিন্তু কর্মবিরতি তোলার প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে তাঁরা ন্যাশনালে সন্দীপ ঘোষের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের প্রতিবাদে সোচ্চার হন।

তাঁদের বক্তব্য, ‘ন্যাশনাল আমাদের দ্বিতীয় বাড়ি। সেখানে সন্দীপ ঘোষের মতো কারও হাতে দায়িত্ব গেলে সর্বদা আমরা নিরাপত্তার অভাবে ভুগব।’ অধ্যক্ষের ঘরে তাঁরা এ দিন তালাও ঝুলিয়ে দেন। সেখানে টাঙানো হয় ‘গো ব্যাক’ পোস্টারও। ফলে সন্দীপবাবু আর জয়েন করতে পারেননি। যদিও সন্দীপবাবুকে সেখানে জয়েন করতে দেয়নি হাইকোর্টও।

তাই অধ্যক্ষ হিসেবে স্বাস্থ্য দপ্তর সেখানে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছে অজয় রায়কেই। এ দিন হাইকোর্টে শুনানি চলাকালীন প্রথমার্ধেই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, সন্দীপবাবুকে যেন অবিলম্বে স্বাস্থ্য দপ্তর ছুটিতে পাঠায়। অন্যথায় আদালতই তাঁকে সরিয়ে দেবে। শুনানির দ্বিতীয়ার্ধে আদালতে সরকার জানায়, ১৫ দিনের ছুটির আবেদন করেছেন সন্দীপবাবু।

আদালত তখন নির্দেশ দেয়, সেই ছুটির আবেদন অবিলম্বে মঞ্জুর করতে হবে স্বাস্থ্যভবনকে। এবং আদালতের নির্দেশ ছাড়া কোথাও যেন আর বহাল করা না হয় সন্দীপবাবুকে। কেননা, কোর্ট মনে করে, তিনি অসংবেদনশীল ও প্রবল প্রভাবশালী। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, ‘এক তরুণী ডাক্তার কর্মরত অবস্থায় এমন একটা নৃশংসতার শিকার হলেন। এর থেকে খারাপ আর কী হতে পারে!’

এরপরই আদালতের প্রশ্নবাণ, ‘তরুণীর পরিবার গিয়ে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে থাকল দেহ দেখার জন্য। কেন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হলো? অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কেন ওই চিকিৎসকের মানসিক সমস্যা রয়েছে বলে মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে? এটা তো ভয়ঙ্কর কথা। আর রাজ্য তাঁকে পুরস্কার দিল? যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই লোককে আপনারা কী করে রিওয়ার্ড দিলেন! এটা তো বিস্ময়ের। তিনি পাওয়ারফুল। সেটা বোঝা যাচ্ছে। তাঁর বাড়িতেই থাকা উচিত।’

প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ‘সন্দীপ ঘোষের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে? তাঁর সাক্ষ্য তো প্রথমেই নেওয়া উচিত ছিল পুলিশের। কেন তাঁকে রাজ্য প্রোটেক্ট করছে? কে তিনি? কী তাঁর প্রভাব? যথেষ্ট সন্দেহজনক।’ সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগের চিঠি ও তাঁকে নতুন করে কাজে নিয়োগের চিঠির কপিও চায় কোর্ট। কারণ, আগাগোড়া তাঁর ভূমিকা যথেষ্ট নেতিবাচক ছিল বলে মনে করছে আদালত। এই আবহে পদত্যাগের পরে তাঁকে নতুন জায়গায় দায়িত্ব দেওয়াটা যথেষ্ট সন্দেহের এবং তিনি কতটা প্রভাবশালী, এর থেকেই সেটা স্পষ্ট— এমনই পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের।

ঘটনাচক্রে কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল এ দিন সকালেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল সন্দীপবাবুকে। কিন্তু হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ এবং তদন্তভার সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশের পরে তিনি আর পুলিশের কাছে হাজিরা দেননি। কেন তাঁকে আগে তলব করা হলো না, তা নিয়ে কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা এ দিন কোনও মন্তব্য করেননি।

সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, ‘এই বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, এখানে দলের কোনও বক্তব্য নেই। এটা স্বাস্থ্য প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ছিল। পদত্যাগের পর কোথায় তাঁকে বসানো হবে— স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’

ন্যাশনাল মেডিক্যালের ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে কুণাল বলেন, ‘পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে আছে। জুনিয়র ডাক্তার, পড়ুয়াদের কিছু বক্তব্য থাকতে পারে। আবেগের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। নতুন নিয়োগ নিয়ে এই সমস্যা তৈরি হয়েছিল। স্বাস্থ্য প্রশাসনের গোটা বিষয়টি বোধহয় আরও গভীর ভাবে বিবেচনা করা উচিত ছিল।’

আরজি কর থেকে বদলির পর ন্যাশনালেও সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে বিক্ষোভ, ঘটনাস্থলে মন্ত্রী

এ দিকে সন্দীপবাবুর বিরুদ্ধে এখন ফের মুখ খুলছেন ‘হুইসল ব্লোয়ার’ আখতার আলি। তিনি একসময়ে আরজি করের ডেপুটি সুপার ছিলেন। এখন একই পদে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কর্মরত। তাঁর কথায়, ‘হাসপাতালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপুল অঙ্কের দুর্নীতি করতেন সন্দীপ ঘোষ। প্রতিদিনকার চিকিৎসা-বর্জ্য ৫০০-৬০০ কেজি সিরিঞ্জ, স্যালাইনের বোতল, গ্লাভস বাইরে বেরিয়ে যেত তাঁর অঙ্গুলিহেলনে। বেনিয়মের কাজে আমাকে জোর করে চাপ দিয়ে সই করতে বলতেন। সেই কাজ আমি না করায় প্রভাব খাটিয়ে আমাকে আরজি কর থেকে বদলি করে দেওয়া হয়।’

তাঁর আরও দাবি, ছাত্রছাত্রীদের ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে এবং হাউসস্টাফ নির্বাচনের সময়েও টাকা তুলতেন সন্দীপবাবু। হাসপাতাল চত্বরে বেআইনি ভাবে দু’চাকার পার্কিং থেকেও টাকা তুলেছেন। টেন্ডার থেকে ক্যান্টিন, সব কিছুতে ওঁর দুর্নীতি ছিল। যদিও যাঁকে ঘিরে দিনভর উত্তাল ন্যাশনাল মেডিক্যাল চত্বর, হাইকোর্ট যাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল এবং যাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও উঠছে— সেই সন্দীপবাবু এ দিন মুখ খোলেননি। তাঁর সঙ্গে ফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি। জবাব মেলেনি মেসেজেরও।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *