আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতির তদন্তভার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে শনিবারই হাতে নিয়েছে সিবিআই। রবিবার সেই মামলার তদন্তে কলকাতা ও আশপাশের ১৫টি জায়গায় অভিযান চালিয়েছেন তদন্তকারীরা। এই আর্থিক দুর্নীতি মামলায় প্রথম থেকেই অভিযোগের আঙুল উঠছিল আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের দিকে।তবে চিকিৎসক মহলের একাংশ মনে করছেন, শুধু প্রাক্তন অধ্যক্ষ বা হাসপাতাল প্রশাসন নয়, এ ক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখে পড়বে হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির ভূমিকাও। কারণ, একা সন্দীপের পক্ষে এত বড় অনিয়ম সম্ভব নয় বলেই দাবি চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশের।

আরজি করে যে সময়ে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ, তার একটা বড় সময়ে হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়। ওই হাসপাতালের যে প্রাক্তন ডেপুটি সুপারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে নেমেছে সিবিআই, সেই আখতার আলির অভিযোগপত্রেও রয়েছে সুদীপ্তবাবুর নাম।

বাকি যাঁদের নামের উল্লেখ রয়েছে অভিযোগপত্রে, সেই প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ সঞ্জয় বশিষ্ঠ, ফরেন্সিক মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক দেবাশিস সোম, হাসপাতালের অন্যতম ভেন্ডার বিপ্লব সিংহদের বাড়ি অথবা অফিসে রবিবারই হানা দিয়েছে সিবিআই। যদিও এই তালিকায় তৃণমূলের চিকিৎসক-বিধায়ক সুদীপ্ত রায় ছিলেন না।

আরজি করের অনিয়মে যে ভাবে আখতার আলি তাঁর নামও জড়িয়েছেন, সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সুদীপ্ত নিজে। রবিবার তিনি বলেন, ‘যে সময়কার কথা বলা হচ্ছে, আমি তখন চেয়ারম্যান ছিলাম না। আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন কোনও অনিয়ম হয়নি। আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

আখতার আলির অভিযোগ অনুযায়ী, আরজি করে আর্থিক দুর্নীতি চলেছে মূলত ২০২১-এর পর থেকে। মাঝে ২০২৩-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই বছরের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে কোভিড অতিমারী পর্ব থেকে ২০২৩-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং তার পর ওই বছরই ৯ অক্টোবর থেকে এখনও পর্যন্ত রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন সুদীপ্তই।

এই দুর্নীতি প্রসঙ্গে শান্তনুর বক্তব্য, ‘আমার সময়ে কোনও অভিযোগ ওঠেনি। বরং অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছিলাম আমিই। এখন এর বেশি কোনও মন্তব্য করব না। বিষয়টি বিচারাধীন এবং সিবিআই ইতিমধ্যেই তদন্ত করছে।’

কেন রোগীকল্যাণ সমিতির ভূমিকাও সিবিআইয়ের স্ক্যানারে রয়েছে?
আরজি করের সঙ্গে যুক্ত একাধিক চিকিৎসক ও আধিকারিকের যুক্তি, বড় অঙ্কের বরাতকে ছোট ছোট বরাতে ভেঙে অনলাইন টেন্ডার এড়িয়ে পছন্দের সংস্থাকে খারাপ গুণমানের ওষুধের অর্ডার দিয়ে লাভবান করে দেওয়া কিংবা কোভিড ফান্ড ব্যবহার করে ফ্রিজ-চেয়ার-সোফা-আসবাব কেনা অথবা হাসপাতালের চিকিৎসা-বর্জ্য মোটা টাকার বিনিময়ে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে পাচার করে দেওয়ার মতো কারবার শুধুমাত্র সন্দীপের পক্ষে করা কঠিন।

তাঁদের যুক্তি, রোগীকল্যাণ সমিতির হাত ছিল সন্দীপের মাথার উপরে। এর প্রতিদানে নির্দিষ্ট নার্সিংহোমে নাকি পাচার হয়ে যেত সরকারি সরবরাহের বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম। আখতার আলি গত বছর জুলাইয়ে যে অভিযোগপত্র পাঠিয়েছিলেন রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনে, তাতেও তিনি উল্লেখ করেছেন এই সব অনিয়মের কথা। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে শান্তনু সেন আসার পর ধরা পড়ে যায় এই সব দুর্নীতি।

নজরে দুর্নীতির অভিযোগ, আরজি করের প্রাক্তন সুপার-সহ একাধিক কর্তার বাড়িতে সিবিআই

শান্তনু বেঁকে বসলে, আট মাসের মাথায়, গত বছর অক্টোবরে তাঁকেও সরে যেতে হয় সন্দীপ-সুদীপ্তদের লবির চাপে। আরজি কর হাসপাতালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ব্যক্তিদের একাংশের মনে প্রশ্ন— সন্দীপ ঘোষ যদি রোগীকল্যাণ সমিতির সহায়তা না পেতেন, তা হলে স্বাস্থ্যভবন ও কলেজ কাউন্সিলকে এড়িয়ে হাসপাতাল চত্বরে ফুডস্টল, ক্যাফে, ক্যান্টিন ইত্যাদি চালানোর সুযোগ করে দিতে পারতেন কি স্বজনপোষণের মাধ্যমে?

পূর্ত দপ্তরকে এড়িয়ে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে সিভিল ও ইলেকট্রিক্যাল কাজ করার বরাত দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে আরজি করের তৎকালীন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সরকার নির্ধারিত সংস্থার বদলে বিপজ্জনক চিকিৎসা-বর্জ্য পছন্দের লোককে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version