Rescued Baby Elephant,ঝাড়গ্রামের ক্ষত মুছে হাতিশাবক বাঁচালেন ওঁরা – west bengal forest workers rescued baby elephant and reunited with mother in jhargram


অরূপকুমার পাল ও পিনাকী চক্রবর্তী
ঝাড়গ্রাম ও আলিপুরদুয়ার: অন্তঃসত্ত্বা হাতির পিঠে জ্বলন্ত শলাকা গেঁথে দেওয়ার ঘটনা এখনও দগদগে ক্ষতের মতো টাটকা। গত ১৫ অগস্ট ঝাড়গ্রামে বন দপ্তরের কর্মীদের উপস্থিতিতে হুলা পার্টির ছোড়া শলাকায় হাতির মৃত্যুতে নিন্দার ঝড় বয়েছে জাতীয় স্তরেও। এ বার একেবারে অন্য ছবি দেখাল বাংলা। একটি নয়, দু’টি ঘটনায় শাবক-সহ হাতিদের বাঁচিয়ে দিলেন বনকর্মীরা।ঝাড়গ্রামে যেমন ফুঁসতে থাকা কংসাবতীর জলে নেমে হাতি শাবককে মায়ের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হলো, তেমনই মাদারিহাটে সদ্যোজাত হাতি শাবক ও তার মা’কে সেফ করিডর বানিয়ে দেওয়া হলো ড্রোন উড়িয়ে। দু’টি ক্ষেত্রেই প্রশংসিত হয়েছেন সংশ্লিষ্ট বনকর্মীরা। শনিবার রাতে ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের মানিকপাড়া রেঞ্জের অন্তর্গত আখড়াশোল ও সাতপাটি এলাকায় ভরা কংসাবতী নদীতে প্রায় দেড় ঘণ্টার অভিযানে দু’মাসের শাবককে মা হাতির কাছে ফিরিয়ে দেন বন দপ্তরের ট্র্যাকার্স ও মনিটারিং টিমের কর্মীরা। মানিকপাড়া রেঞ্জে থাকা ৪০টি হাতির দলকে তাড়িয়ে অন্যত্র পাঠানোর কাজ করছিলেন তাঁরা।

নেতৃত্বে ছিলেন পড়িহাটির রেঞ্জ অফিসার মহম্মদ শাহিদ। ২৮টি হাতির দল শনিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ আখড়াশোল ও সাতপাটি এলাকায় কংসাবতী নদী পার হয়ে মেদিনীপুরের দিকে চলে যায়। কিছুটা পিছনে ছিল আরও ১২টি হাতি। কংসাবতী পার হতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। সামনে থাকা ২৮টি হাতির দলে ১ মাস ও দু’মাস বয়সী দু’টি শাবক ছিল।

একমাসের শাবকটি মায়ের সঙ্গে নদী পেরোলেও দু’মাসের শাবকটি আটকে যায় নদীর মধ্যে থাকা ছোট্ট বালির চরে। ভয় পেয়ে প্রবল স্রোতে কংসাবতীর জলে সাঁতরাতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে সে। বিষয়টি ট্র্যাকার্স ও মনিটারিং টিমের চোখে পড়তেই দু’জন ট্র্যাকার নদীর জলে সাঁতার কেটে ওই শাবকের কাছে পৌঁছন। তার পর গামছা দিয়ে বেঁধে মাঝনদী থেকে দু’মাসের শাবকটিকে কংসাবতীর পাড়ে ঝাড়গ্রামের আখড়াশোলে নিয়ে আসেন।

এর পর শুরু নতুন চ্যালেঞ্জ। নদীর ওপারে মেদিনীপুরের দিকে যেখানে মা হাতিটি ছিল, তার ঠিক উল্টোদিকে নদীর ধারে ঝাড়গ্রামের দিকে শাবকটিকে নিয়ে গিয়ে ওপার থেকে মা হাতির আওয়াজ এবং এপার থেকে শাবকের ভয়েস ম্যাচিং করানো হয়। শাবকের চিৎকারে সাড়া দেয় মা হাতি। এর মিনিট ১৫ পরে মা হাতি-সহ চারটি হাতি ফের নদী সাঁতরে মেদিনীপুর থেকে ঝাড়গ্রামের দিকে শাবকটির কাছাকাছি চলে আসে। তারা সামনে আসতেই হাতি শাবককে ছেড়ে লুকিয়ে পড়েন ট্র্যাকাররা।

চারটি হাতি মানুষের উপস্থিতি না-দেখে শাবকটিকে নিয়ে ফের নদী সাঁতরে মেদিনীপুরের দিকে রওনা দেয়। রাত ১১টায় তারা কংসাবতী পার হওয়া পর্যন্ত মনিটারিং টিম দূর থেকেই নজরদারি চালায়। ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, ‘রাতের মধ্যে নদীতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন ট্র্যাকার্স ও মনিটারিং টিমের কর্মীরা। আমরা চারজন ট্র্যাকারকে পুরস্কৃত করব।’

অন্য দিকে, রবিবার সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটের মুজনাই চা বাগান ছেড়ে দুই সঙ্গীর সঙ্গে জঙ্গলের দিকে ফিরছিল এক অন্তঃসত্ত্বা হাতি। আচমকাই বাঙ্গাবাড়ি ডিভিশনের ৫ নম্বর সেকশনে ময়নাঝোরায় নালার কাছে থমকে যায় ওই মাদি হাতি। সেখানেই প্রসব হয় একটি ফুটফুটে শাবকের।

তত ক্ষণে মুজনাই চা বাগানের ওই এলাকায় চারদিক ভিড় জমে গিয়েছে উৎসুক বাসিন্দাদের। সে সব দেখে অস্থির হয়ে ওঠে মা হাতি। তার সঙ্গে থাকা দুটি হাতিও জঙ্গলে মিলিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন জলদাপাড়া বনবিভাগের বনকর্মীরা। লোক সরানো শুরু করেন তাঁরা।

সদ্যোজাত হাতিটি তখনও হাঁটার অবস্থায় আসেনি। সঙ্গে সমস্যা বাড়াচ্ছিল প্রবল রোদ। মা হাতি বার বার শুঁড় দিয়ে তাকে ‘মাড বাথ’ করিয়ে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছিল। আশপাশে জল না থাকায় বেকায়দায় পড়তে হয় হাতিটিকে। রোদের তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকায় শাবকটিকে নিয়ে নালার ঝোপের আড়ালে চলে যায় মা হাতি। তাতে বনকর্মীদের উদ্বেগ বাড়ে।

বানভাসি দক্ষিণবঙ্গ, ত্রাণ শিবিরে বাড়ছে ভিড়

কারণ ওই এলাকায় বেশ কিছু চিতাবাঘের বসতি রয়েছে, যারা যে কোনও মুহূর্তে শাবকটির ওপর হামলা করতে পারে। তখনই বন দপ্তরের ড্রোন উড়িয়ে মা হাতি ও শাবককে নির্দিষ্ট অবস্থান নিশ্চিত করে এলাকাটিকে কর্ডন করে ফাঁকা করে দেন বনকর্মীরা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণকান্ত ঝা বলেন, ‘প্রথমে মা হাতিটির সঙ্গে দুটি হাতি ছিল। মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করলে তারা ধুমচির জঙ্গলের দিকে চলে যায়। সঙ্গে শাবক থাকায় আটকে যায় মা হাতি।’

এ ভাবে প্রায় ৯ ঘণ্টা শাবককে আগলে রেখে, বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ মা হাতিটি বনের পথ ধরে। জলদাপাড়ার সহকারী বন্যপ্রাণী সংরক্ষক নভোজিত দে বলেন, ‘মা হাতি ও শাবকটির নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মুজনাই চা বাগানের ওই এলাকায় অতিরিক্ত বনকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *