মীরার ক্যামেরা বারবার বলিষ্ঠ প্রশ্নচিহ্ন এঁকেছে পর্দায়, তাঁর পুত্র নিউ ইয়র্কের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র জোহরান কি ট্রাম্পের আমেরিকায় নয়া বিপ্লব!


সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: আন্তর্জাতিক দরবারে যে কয়েকজন ভারতীয় পরিচালকের ছবি সমাদৃত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম নাম মীরা নায়ার। অস্কার-মনোনীত এই পরিচালক বরাবরই শুধু গল্প বলেননি, তিনি প্রশ্ন করেছেন ক্ষমতা, বঞ্চনা এবং অধিকারের মতো গভীর বিষয়গুলি নিয়ে। অভিবাসন, জাতিসত্তা রাজনীতি এবং বৈষম্য নিয়ে কয়েক দশক ধরে যাঁর ক্যামেরা কথা বলেছে, আজ তাঁরই পুত্র জোহরান মামদানি নিউ ইয়র্ক সিটির সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হিসেবে ইতিহাস গড়লেন। এই ঘটনার মাধ্যমেই যেন মীরা নায়ারের আজীবনের রাজনৈতিক কথোপকথন পর্দা ছেড়ে পা রাখল বাস্তবের মাটিতে। এটি কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং এটি সেই রাজনৈতিক মননের ধারাবাহিকতা, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হয়েছে। তাই মীরা নায়ারের পুত্র জোহরান মামদানির নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র হওয়াকে শুধু একজন অভিবাসী বা একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তির সাফল্য হিসেবে দেখলে এই ঘটনার গভীরতা বোঝা সম্ভব নয়। এটি আসলে শিল্প ও রাষ্ট্রনীতির মধ্যে এক বিরল এবং ঐতিহাসিক সেতুবন্ধন, যেখানে ‘সহমর্মিতার রাজনীতি’ (Politics of Empathy)নতুন রূপ পেয়েছে।

Add Zee News as a Preferred Source

আরও পড়ুন- Shah Rukh Khan 60th Birthday: বালাই ষাট! শাহরুখ আবেগের অবসর হয় না, বয়স বাড়ে, হৃদয় তবু দফতর পাল্টায় না…

মীরা নায়ার তাঁর ছবিতে সবসময় পার্শ্বচরিত্রদের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। ‘সালাম বম্বে!’ (পথশিশু), ‘মিসিসিপি মাসালা’ (ভারতীয়-আফ্রিকান ডায়াস্পোরা), এবং ‘দ্য নেমসেক’-এ তিনি সেই মানুষগুলির যন্ত্রণাকে তুলে ধরেছেন, যারা মূলস্রোতের বাইরে অবস্থান করে। মীরাপুত্র জোহরান মামদানির জয় যেন সেই ‘পার্শ্বচরিত্র’-এরই বাস্তব জীবনে ক্ষমতার কেন্দ্রে উঠে আসা। জোহরান কেবল একজন রাজনীতিবিদ নন—তিনি একাধারে প্রথম মুসলিম মেয়র, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র এবং নিউ ইয়র্কের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র। তাঁর এই বহুমাত্রিক পরিচয়, যা তাঁর মায়ের সিনেমায় বারবার উঠে এসেছে, এখন সরাসরি সিটি হলের নীতি নির্ধারণে প্রভাব ফেলবে। ছবিতে তাঁর মা যে সমাজের গল্প বলতেন, সেই সমাজ আজ গল্প বলার বদলে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছে সিদ্ধান্তের ক্ষমতা। 

মীরা নায়ার তাঁর ‘মাইশা ফিল্ম ল্যাব’-এর মাধ্যমে আফ্রিকান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের শিখিয়েছেন “নিজের গল্প নিজেই বলো”। তাঁর কাছে শিল্প হলো ‘এজেন্সি’—নিজের ভাগ্য নিজে নির্ধারণের ক্ষমতা। জোহরান মামদানির রাজনীতিও সেই ‘এজেন্সি’-কে সমাজের দরিদ্র, শ্রমজীবী ​​ও অভিবাসী অংশের হাতে তুলে দেওয়ার একটি প্রত্যক্ষ পদক্ষেপ। তাঁর মূল স্লোগান ছিল ‘Affordability’ (সাধ্যের মধ্যে জীবনযাপন)—যা মীরা নায়ারের ‘সালাম বম্বে!’ বা ‘মনসুন ওয়েডিং’-এ উঠে আসা শ্রেণী বৈষম্যের একটি প্রশাসনিক সমাধান। সিনেমার পর্দায় যেখানে কেবল সমস্যা তুলে ধরা হত, এখন নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা হবে। এটাই হলো শিল্প থেকে রাষ্ট্রনীতিতে উত্তরণের তাৎপর্য।

আরও পড়ুন- Amol Muzumdar: সচিন-কাম্বলির দাপটে বিশ্ব রেকর্ড করেও চান্স পাননি জাতীয় দলে, আজ সেই অমলই বিশ্বসেরা…

একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে মীরা নায়ার সর্বদা একটি উন্নত, ইনক্লুসিভ সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন। তাঁর রাজনীতিতে নারী, অভিবাসী এবং প্রান্তিক মানুষজন তাঁদের ন্যায্য স্থান পেয়েছে বরাবর। জোহরান মামদানির বিজয় সেই কল্পনারই বাস্তব রূপায়ণ। যখন জোহরান নেহরুর উক্তি ব্যবহার করেন বা ‘ধুম মাচালে’ গান গেয়ে জনতাকে অভ্যর্থনা জানান, তখন তা শুধু সাংস্কৃতিক সংযোগ নয়, এটি আসলে এক দৃঢ় সংকেত যে, অভিবাসীদের সংস্কৃতি আর কেবল কোণঠাসা বিনোদনের বিষয় নয়, বরং তা এখন সমাজের মূল চালিকাশক্তি।

এই পুরো ঘটনাটি বিশ্বজুড়ে ভারতীয় ডায়াস্পোরার এক নতুন অধ্যায়কে নির্দেশ করে। এটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব থেকে লিডারশিপে উত্তরণের প্রতীক। মীরা নায়ারের ক্যামেরা যেখানে প্রশ্ন তুলেছিল, তাঁর পুত্রের রাজনীতি সেখানে উত্তর খুঁজে দেবে—আর এটাই এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সবচেয়ে বড় বিশ্লেষণ।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *