চম্পক দত্ত: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমায় চন্দ্রকোনা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৪৮ নম্বর বুথে একটিও মৃত ভোটার নেই। যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে প্রশাসনিক মহলে। ইতিমধ্যে ব্লকের বিডিও ওই বুথে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন, বুথে আসার কথা শোনা যাচ্ছে মহকুমা আধিকারিকদেরও। চন্দ্রকোনার এই ১৪৮ নম্বর বুথে মোট ভোটারের সংখ্যা ৫১৭, মোট এনুমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজ হয়েছে ৫১৩ জনের, ৪ জন পারমানেন্ট সিফটিং ভোটার রয়েছে। চন্দ্রকোনা পৌরসভার ১২ টি ওয়ার্ডে মোট ২১ টি বুথ রয়েছে। ২০ টি বুথ মিলিয়ে মৃত ভোটারের সংখ্যা ২৪৯, সেখানে একমাত্র ১৪৮ নম্বর বুথেই নেই কোনও মৃত ভোটার।এমনই বলছে বিধানসভা ভিত্তিক নির্বাচন কমিশনের দেওয়া প্রতিদিনের রিপোর্ট।যা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
তবে এই ১৪৮ নম্বর বুথের বিএলও বিকাশ লাহা জানিয়েছেন, ‘আমার বুথের ভোটার তালিকা পুরো যাচাই করুক, কোনও অসুবিধা নেই। আমি ২০১২ সাল থেকে এই কাজ করছি। আমার বুথে কেউ মারা গেলে ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার ১৫ দিনের পর আমি খোঁজ নিয়ে তার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া কাজ করে এসেছি। এসআইআর শুরু হওয়ার আগেও আমি ২ জন মৃত ভোটারের নাম বাদ দিয়েছি। পৌরসভার দেওয়া ডেথ লিস্ট ও ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখলেই তো স্পষ্ট হয়ে যাবে। এটা নিয়ে ভাববার কিছু নেই।’ আত্মবিশ্বাসী প্রশাসনের নজরে থাকা এই ১৪৮ নম্বর বুথের বিএলও বিকাশ লাহা। বুথে ঘুরে সাধারণ বেশকিছু ভোটারের সাথে কথা বললে এবিষয়ে কেউ অবগত নই এমনটাই জানান। তবে বিএলও’র কাজ নিয়ে যে তাদের মধ্যে কোনও অসন্তোষ নেই তা স্পষ্ট করেন।
এই বুথের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা উত্তম হাতি, দেড় বছর আগে তিনি মারা যান। বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী বন্দনা হাতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এসআইআর শুরু আগেই তার স্বামীর নাম ভোটার তালিকা বাদ দিতে তার বাড়িতে বিএলও গিয়ে তথ্য নিয়ে নেন এবং তালিকা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেন। বুথে তৃণমূলের বিএলএ কাঞ্চন আশ জানান, ‘বুথে যা মৃত ভোটার ছিল বিএলও সেসব এসআইআর এর আগেই বাদ দিয়েছেন তাই স্বাভাবিকভাবে এখন তালিকায় শুন্য দেখাচ্ছে।’ বিজেপির বিএলএ শীর্ষেন্দু খাঁ বলেন, ‘বিএলও ভালো কাজ করেছে, আমরাও সাহায্য করেছি। আর বিএলও নতুন না সে আগে থেকেই নিয়মিত মৃত কেউ থাকলে তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে দিত।’
অপরদিকে সিপিএমের বিএলএ পাঁচু লাহা, তিনিও সহমত বিজেপির বিএলএ এর বক্তব্যে। মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় রেখে দেওয়ার চেষ্টা করছে শাসকদল। এমন অভিযোগ তুলে আকছার সরব হতে দেখা যায় বিরোধীদের। চন্দ্রকোনার ১৪৮ নম্বর বুথ মৃত ভোটারহীন, তা নিয়ে বিএলও’র পাশে দাঁড়িয়ে একই সুরে বক্তব্য রাখছেন বাম বিজেপি উভয়ই। এও ব্যতিক্রমী বলা চলে। চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের বিডিও উৎপল পাইক বলেন, ‘চন্দ্রকোনা বিধানসভার দু’নম্বর ব্লকে মোট ১৩৮ টা পার্ট রয়েছে, সব বুথেই আমরা ডেথ, সিফটেড খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু চন্দ্রকোনা পৌরসভার ১৪৮ নম্বর পার্টে আমরা একটাও ডেথ খুঁজে পাইনি। তার কারন, এখানের যিনি বিএলও আছেন তিনি অ্যাক্টিভ, কেউ মারা যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে উনি ফর্ম ৭ পুরণ করিয়ে রোলে আপডেট করে দেন।
‘বিএলও’র কাজের প্রশংসা করলেও,ওই বুথ যে তাদের নজরে রয়েছে এবং ভালো করে সার্ভে করে বিএলও’র কাজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাও বিডিও স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৪৮ পার্টকে ভালো করে সার্ভে করেছি, এখনও করছি। খোঁজখবর নিচ্ছি, আমি নিজে গিয়েছিলাম। এই পার্টে একজন ৮৫ বছর বয়সী ভোটার রয়েছেন আমি নিজে তার ছবি তুলে এনেছি।’ তবে যে যাই বলুক, এসআইআর আবহে মৃত ভোটার শুন্য এই বুথ নজরে রয়েছে প্রশাসনের।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)
