হুগলি নদীর জলপথের কৌলীন্য ফেরাতে উদ্যোগী হলো রাজ্য পরিবহণ দপ্তর। সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী, কলকাতা এবং তার আশপাশের জেলায় যাতায়াত সুগম করতে হুগলি নদীতে যে সব ফেরি সার্ভিস রয়েছে, তার খোলনলচে বদলাবে। বিভিন্ন ফেরিঘাটের মানোন্নয়ন ছাড়াও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে চালু করা হবে আধুনিক জলযান। তার জন্যে কলকাতা-সহ চারটি জেলায় হুগলি নদী জলপথে খুব শীঘ্রই সমীক্ষা শুরু হবে। সেই সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতে এই জলপথকে ঢেলে সাজানো হবে।
এক সময় হুগলি নদী জলপথ দিয়ে ভিনদেশেও ব্যবসা করতে যেতেন বণিকরা। ব্রিটিশ, ফরাসি, ওলন্দাজ বণিকরা এই নদীপথ ধরেই প্রথম বাংলার মাটিতে পা রেখেছিলেন। ব্রিটিশ আমলে বাংলার যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল হুগলি নদী। তার সুবাদেই কলকাতা-খিদিরপুর ঘিরে বন্দর তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে এই জলপথের গুরুত্ব অনেকটাই কমেছে। সেই হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারেই উদ্যোগী হয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল সারফেস ট্রান্সপোর্ট বিভাগ। প্রস্তুতি হিসেবে হুগলি নদী জলপথের হালহকিকত বুঝে নিতে চাইছে তারা। এ জন্যে সাধারণ যাত্রীদেরও মতামত নেওয়া হবে। মূলত কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় জলপথ পরিবহণে কী কী সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে–সেটা জানতে পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা চালানো হবে।
কোন ফেরিঘাটে কত যাত্রী পারাপার করেন, কত মিনিট অন্তর লঞ্চ বা ইঞ্জিন-চালিত নৌকা চলচাল করে–সবটাই জানার চেষ্টা করবে সমীক্ষকদল। সেই মতো তারা পরিবহণ দপ্তরে রিপোর্ট দেবে। তার উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে পরিবহণ দপ্তর। হুগলি নদীতে ২২টি নতুন ভেসেল নামানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রত্যেকটিতে এক সঙ্গে গড়ে ১০০ জন যাত্রী পারাপার করতে পারবেন। তার মধ্যে ৯টি ভেসেল ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। বাকি ১৩টি ভেসেল তৈরি হচ্ছে।
ভেসেলগুলি এমন ভাবে বানানো হচ্ছে যাতে সেগুলি খুব কম জলে চলতে পারে। এ ছাড়াও আরও ১৫টি ইস্পাতের বোট তৈরি করা হবে। হাওড়া, মিলেনিয়াম পার্ক, চন্দননগর-সহ মোট ১০টি জায়গায় হুগলি নদীর উপরে নতুন টার্মিনাল তৈরি করা হবে। যেখানে বড় বড় লঞ্চ কিংবা ক্রুজ দাঁড়াতে পারে। ২৯টি জেটির আমূল সংস্কার করা হবে। বিশেষ সুবিধাযুক্ত ১৫টি নতুন জেটিও নির্মাণ হবে। দু’টি ইলেকট্রিক ফেরি চালু হবে। তার সঙ্গে চালু হবে রো-রো সার্ভিস। পুরো প্রকল্প রূপায়িত হবে বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থসাহায্যে।