আরজি করের ফরেন্সিক মেডিসিনের প্রধান চিকিৎসক প্রবীর চক্রবর্তী অবশ্য বলছেন, ‘এমন কোনও অভিযোগ আমার জানা নেই।’ যদিও আরজি করের বিভিন্ন মহলেই এই প্যাকেজ সিস্টেমের ব্যাপারে কানাঘুষো শুনতে পাওয়া যায়। দরদাম করে প্যাকেজের টাকা দিতে পরিজন রাজি থাকলে কী কী করা হতো?
আরজি করের একটি সূত্রের দাবি, ‘ওই প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ সুন্দর ভাবে সেলাই করা ও স্নান করানো থেকে শুরু করে শবদেহকে বাড়ির লোকের দেওয়া পছন্দের পোশাক পরানো, এমনকী শববাবহী গাড়ির ব্যবস্থাও। টাকার অঙ্ক বেশি হলে এসি গাড়িও মেলে শব বহনের জন্য। প্যাকেজের টাকা দিয়ে দিতে পারলেই নিশ্চিন্ত বাড়ির লোক।’
তিনি জানান, গরিব না-হওয়া সত্ত্বেও প্যাকেজের টাকা কেউ দিতে না-চাইলে, তাঁদের প্রিয়জনের শবদেহের সঙ্গে করা হয় অমানবিক আচরণ। ময়নাতদন্তের পর সেলাই করা কিংবা শবের রক্ত ও দেহরস ধোওয়া— কোনওটাই ভালো ভাবে না করে দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিজনের হাতে। এবং তাও অস্বাভাবিক দেরিতে।
তদন্তে নেমে সিবিআই জানতে পেরেছে, রোজ কমপক্ষে যেহেতু গড়ে ১০-১২টি দেহের ময়নাতদন্ত হয় আরজি করের মর্গে, তাই বিপুল টাকার এই প্যাকেজ দুর্নীতির মাথা কে, সেটাই এখন খুঁজছে সিবিআই। সন্দেহ, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের প্রশ্রয়েই উত্তরবঙ্গ থেকে গত বছর বদলি হয়ে আসা এক ডোমই এর নেপথ্যে নাটের গুরু। ওই ডোম উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে বদলি হয়ে আসেন গত বছর।
তাঁকে মর্গের ডিউটি দেওয়া হয় চলতি বছর জানুয়ারি থেকে। তার পরেই মর্গের ডিউটিতে থাকা পুরোনো দুই ডোমকে মৌখিক আদেশে বদলি করে দেওয়া হয় হাসপাতালের অন্যত্র। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই দুই ডোমের একজন অ্যানাটমি বিভাগের ডিসেকশন রুমে এবং অন্যজন ইমার্জেন্সির শব সংরক্ষণ ঘরে এখন ডিউটি করেন। ২০০৮-এর মার্চে যখন থেকে আরজি করে পুলিশ মর্গ চালু হয়েছিল, তখন থেকেই মর্গের ডিউটিতে ছিলেন ওই দু’জন।
গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারি কর্মচারি ফেডারেশনকে চিঠি লিখে ওই দু’জন লিখিত অভিযোগ করেন যে, মাসিক ২০ হাজার টাকা ‘তোলা’ দিতে না পারায় তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মর্গের ডিউটি থেকে। আর উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ওই ডোম সেই টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করায় তাঁকে রেখে দেওয়া হয়েছে মর্গেই। অভিযোগ, তাঁর নেতৃত্বেই চলে প্যাকেজের কারবার। জড়িত আরও অনেকে।