বছর ছাপ্পান্নর ওই রোগীর উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস-সহ বেশ কয়েকটি কো-মর্বিডিটি ছিল। সঙ্গে অতিরিক্ত ধূমপানের অভ্যাস। তার জেরে পায়ের রক্তনালীতে চর্বি জমতে জমতে এক সময়ে পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যে পায়ের নীচের দিকের অংশে রক্ত চলাচলই বন্ধ হতে বসেছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, প্রবল যন্ত্রণা আর পচন ঠেকাতে ওই অংশ কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। এমনই সন্ধিক্ষণে তাঁর উপরে প্রয়োগ করা হলো নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি। যার পোশাকি নাম–অ্যালোজেনিক মেসেনকাইমাল স্টেম সেল থেরাপি। পিয়ারলেস হাসপাতালে রাজ্যে প্রথম এমন চিকিৎসার সূত্রে নতুন রক্তনালী জন্মাতে শুরু করেছে রোগীর পায়ে। এখন অনেকটাই সুস্থ ওই প্রৌঢ়।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ক্রিটিক্যাল লিম্ব ইস্কিমিয়া নিয়ে দেশে অন্তত ৫০ লক্ষ মানুষ ভুগছেন। অসহ্য যন্ত্রণায় তাঁদের সিংহভাগেরই জীবন জেরবার হয়ে যায়। কারও বা বাইপাস সার্জারি করে বন্ধ হতে বসা রক্তবাহিকার বিকল্প পথ খুলে দেওয়া হয়, কারও আবার বাদ যায় রোগগ্রস্ত হাত কিংবা পা। বস্তুত, এই অসুখের রোগীদের ৩০ শতাংশের অঙ্গহানি ঠেকানো যায় না। অন্যের শরীর থেকে নেওয়া রক্তের অঙ্কুর কোষ বা স্টেম সেল (অ্যালোজেনিক) রোগীর উপরে প্রয়োগ করে এই প্রথম সাফল্য মিলল বাংলায়। পিয়ারলেস সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালের প্রবীণ কার্ডিয়োথোরাসিক ভাস্কুলার সার্জেন অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে গত ৪ নভেম্বর এই থেরাপি প্রয়োগ হয়েছে।
পায়ের কাফ মাসলে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ওষুধটি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই গায়েব হয়েছে যন্ত্রণা। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই পায়ে জন্মাতে শুরু করেছে নতুন রক্তনালী। ফলে পা কেটে বাদ দেওয়ার আর প্রশ্ন নেই। বেসরকারি ওই হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিশেষজ্ঞ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক বলেন, ‘মেসেনকাইমাল স্টেম সেল থেরাপি এমন রোগীদের জন্যে যুগান্তকারী চিকিৎসা। এখনও এ দেশে খুব প্রচলতি হয়নি ঠিকই। কিন্তু অতীতে এই চিকিৎসার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের রিপোর্ট দারুণ আশাব্যঞ্জক।’
তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই থেরাপিতে ব্যবহৃত একটিমাত্র ইঞ্জেকশনের দামই প্রায় ১.৬০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে লাখ দুয়েক টাকা খরচ পড়ে এই চিকিৎসায়। যদিও স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ মেলে। এ ক্ষেত্রে রোগী যেহেতু ইএসআই-এর উপভোক্তা, তাই রোগীর পকেট থেকে একটি পয়সাও খরচ হয়নি।