অভাব-অনটনের সংসারে দু’মুঠো ভাত জোগাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁকড়া ধরতে যান সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ। কুলতলি ব্লকের দেউলবাড়ি-দেবীপুর পঞ্চায়েতের কাঁটামারি গ্রাম থেকে তেমনই সোমবার দিলীপ সর্দার ও তাঁর পাঁচ সঙ্গী গিয়েছিলেন সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে। দিলীপের সঙ্গে ছিলেন রঘুনাথ সর্দার, বিপুল সর্দার, শ্যামল মণ্ডল, হৃদয় সর্দার ও মানবেন্দ্র হালদার। দিলীপ নৌকা চালাচ্ছিলেন। ক’দিনে তাঁরা ভালোই কাঁকড়া ধরেছিলেন। শুক্রবার ফেরার কথা ছিল। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় আর ফেরা হয়নি। রাতে একটি নদীর খাঁড়ির মধ্যে নৌকা নোঙর করেন দিলীপ। ঠিক ছিল সকালের আলো ফুটলে গ্রামে ফিরবেন।
শনিবার সকালে নদীর চড়ে নৌকায় বসে মুখ ধুচ্ছিলেন দিলীপ। বাকিরা একে একে তখন ঘুম থেকে উঠতে শুরু করেছেন। সুন্দরবনের জল-জঙ্গল তখন কুয়াশাচ্ছন্ন। সেই কুয়াশার চাদর ভেদ করে আচমকাই ম্যানগ্রোভ জঙ্গল থেকে একটি বাঘ গর্জন করে এসে নৌকায় দিলীপের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নিজেকে সামলাতে না পেরে নৌকা থেকে নীচে পড়ে যান দিলীপ। জলে নেমে আসে বাঘ। তারপর দিলীপের ঘাড়ে কামড় বসিয়ে টানতে টানতে জঙ্গলের ভিতরে নিয়ে যেতে থাকে। নৌকায় দিলীপের পাঁচ সঙ্গী হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাকিরা লাঠি-বৈঠা হাতে বাঘের পিছু নেন। কিন্তু জঙ্গলে ঢুকেও সঙ্গীকে বাঁচাতে পারেননি তাঁরা। বাঘ শিকার ছেড়ে পালালেও মারা যান দিলীপ।
এরপর দিলীপের নিথর দেহ নিয়ে সঙ্গীরা নৌকা করে গ্রামে ফেরেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে দিলীপের পরিবার। মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাতে থাকেন মৃত ধীবরের স্ত্রী। দিলীপের দিদি আরতি নায়েক বলেন, “পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিল ভাই। এ বার কী হবে, জানি না।” দিলীপের সঙ্গী ধীবর রঘুনাথ সর্দার বলেন, “দিলীপকে বাঘে ধরেছে বুঝতে পেরেই আমরা সবাই নৌকা থেকে নেমে জঙ্গলে বাঘের পিছু নিই। তখন মাথায় ঘুরছিল কী ভাবে বাঘের মুখ থেকে দিলীপকে বাঁচানো যায়। উদ্ধার করতে পারলেও দিলীপকে বাঁচাতে পারলাম না। এই দুঃখ সারা জীবন থাকবে।”