জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ভারতীয় সংস্কৃতিতে কার্তিকের নানা অভিমুখ, নানা পরত। গোটা ভারতের সঙ্গে বাংলার কার্তিক পুজোর ঐতিহ্যও ঠিক মেলে না। বাংলায় কার্তিককে নিয়ে যেন একটু মজাই করা হয়। পুত্রকামনায় পুজো করা হয়। লোকে অন্যের বাড়ির দরজায় গিয়ে কার্তিক ফেলে আসেন। বাকি-ভারতে অবশ্য কার্তিককে একটু সিরিয়াসলি নেওয়া হয়। ভারতের বহু জায়গায় কুমারী মেয়েদের মধ্যে কার্তিকপুজোর চল আছে। কার্তিকের মতো সুরূপ সুন্দর স্বামী কামনা করে মেয়েরা পুজো করেন দেবসেনাপতি কার্তিকেয়কে।
কী ভাবে জন্ম হল কার্তিকের?
আরও পড়ুন: মেয়েরাই কেন কার্তিক পুজো করতে এত আগ্রহী হয়, জানেন?
শিব ও পার্বতীর মিলনের মধ্যে দিয়ে এক অগ্নিপিণ্ডের সৃষ্টি হল। রতির অভিশাপের জন্য মা পার্বতী তাঁর গর্ভে সন্তান ধারণ করতে পারেননি। তাই এই অগ্নিপিণ্ডের সৃষ্টি। যাইহোক, অগ্নিদেব সেই অপূর্ব তেজময় জ্যোতির্পিন্ড নিয়ে পালিয়ে গেলেন। মা পার্বতী তা জেনে ক্রুদ্ধ হলেন। এদিকে অগ্নিদেব ওই অগ্নিপিণ্ডের তাপ সহ্যও করতে পারলেন না। তিনি গঙ্গায় তা নিক্ষেপ করলেন। সেই তেজোরাশি গঙ্গায় বয়ে গিয়ে ঠেকল এক শরবনে। সেখানে এক রূপবান শিশুর জন্ম হল। জন্মের পর এই কুমারকে কৃতিকাগণ স্তন্যপান করালে সেই শিশু কার্তিক নামে পরিচিত হলেন। পরে দেবী পার্বতী তাংর শিশু কার্তিককে বা স্কন্দকে কৈলাসে নিয়ে গেলেন।
বলা হয়, তারকাসুর বধের জন্যই কার্তিকের জন্ম হয়েছিল। তিনি তারকাসুরকে বধ করেছিলেন। কার্তিক বহু ভয়ংকর অসুরকেও বধ করেন। তিনি অসাধারণ যোদ্ধা দেবতা। যুদ্ধের কলাকৌশল সম্বন্ধে তাঁর অগাধ জ্ঞান। তাঁর শৌর্য ও শক্তিও অপরিসীম। তিনি দেবতাদের রক্ষাকর্তা। শৌর্য বীর্য শক্তি সাহসের প্রতীক তিনি।
কার্তিকেয় বা কার্তিকের অন্য নাম স্কন্দ। কার্তিক বৈদিক দেবতা নন; পৌরাণিক দেবতা। প্রাচীন ভারতে সর্বত্র কার্তিকের পুজো প্রচলিত ছিল। অন্যান্য দেবদেবীর মতো কার্তিকও একাধিক নামে অভিহিত– কৃত্তিকাসুত, আম্বিকেয়, নমুচি, মুরুগান, শিখিধ্বজ, অগ্নিজ, বাহুলেয়, ক্রৌঞ্চারতি, তারকারি, তারকাসুরমর্দী, শক্তিপাণি, বিশাখ, ষড়ানন, গুহ, কুমার, সৌরসেনা, দেবসেনাপতি গৌরীসুত, আগ্নিক, ভৌরবসূতানুজ ইত্যাদি।
ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ ভারতে কার্তিকের পুজো বেশি জনপ্রিয়। তামিল ও মালয়ালম ভাষায় কার্তিক মুরুগান এবং কন্নড় ও তেলুগু ভাষায় সুব্রহ্মণ্যম নামে পরিচিত। তামিল বিশ্বাস অনুযায়ী মুরুগান তামিলদেশের বা তামিলনাড়ুর রক্ষাকর্তা। দক্ষিণ ভারত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও মরিশাস– যেখানে যেখানে তামিল জাতিগোষ্ঠীর প্রভাব রয়েছে সেখানেই মুরুগানের পুজো প্রচলিত।