ম্যান ইউ-কে জবাব দিয়ে পাঁচটি বিশ্বকাপে গোলের রেকর্ড, ঘানাকে হারাল রোনাল্ডোর পর্তুগাল


পর্তুগাল: ৩ (‘৬৫ পেনাল্টি রোনাল্ডো, ‘৭৮ জাও ফেলিক্স, ‘৮০ রাফায়েল লিও) 

ঘানা: ২ (‘৭৩  আন্দ্রে আয়িউ, ‘৮৯ উসমান বুকারি) 

সব্যসাচী বাগচী 

পেনাল্টি মারার সময় তাঁর দুই চোখের পাতা বন্ধ ছিল। কাকে ভাবছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo)? কী ভাবছিলেন? ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (Manchester United) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার মারাত্মক অভিযোগ এনেছিলেন। তাঁর নিশানায় ছিল ‘রেড ডেভিলস’-এর হেড কোচ এরিকে টেন হ্যাগ (Eric Ten Hag)। তাঁদের থেকে পাওয়া অপমান মনে করেই কি মনের ভিতরে আগুন জ্বালিয়েছিলেন! জানা নেই। তবে এতটুকু লিখে দেওয়াই যায়, গত ১৫ দিন ধরে তিনি যা সব সহ্য করেছেন, সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল ঘানা (Ghana)। কারণ খেলার ফলাফল ৩-২। পর্তুগালের পক্ষে। রোনাল্ডোকে ছন্দে দেখা গেলেও, তাঁর দলের রক্ষণ নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠবেই। তাই তিন পয়েন্ট এলেও, এই জয় দাপটের নয়। 

রোনান্ডো এবং তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসির (Lionel Messi) মধ্যে কোনও মিল নেই। পর্তুগাল (Portugal) মহাতারকা একেবারে রুক্ষ। বন্য মেজাজের। মাঝেমধ্যে মেজাজ হারান। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার (Argentina) তারকা শিল্পী ফুটবলার। দীর্ঘ কেরিয়ারে খুব সময় মাথা গরম করেছেন। সাফল্যের নিরিখেও তো এগিয়ে রয়েছেন ‘এল এম টেন’ (LM 10)। তাঁর ঝুলিতে সাতটি ব্যালন ডি’ওর (Ballon D’Or) । সেখানে ‘সি আর সেভেন’ (CR 7) এখনও পর্যন্ত পাঁচটি মহার্ঘ্য পুরস্কার পেয়েছেন। পারিবারিক জীবনেও দুই ফুটবলারের ফারাক আকাশ-পাতাল। যদিও একটা জায়গায় দুজনের খুব মিল। কেউই বিশ্বকাপ হাতে তুলতে পারেননি। চলতি মাসের ২২ তারিখের মতো ২৪ নভেম্বর আরও একটা মিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। সেটা অবশ্য সুখের মিল ছিল না। তবে শেষদিকে মেসির মতো মুখ ঢেকে মাঠ ছাড়তে হয়নি রোনাল্ডোকে।

লুসেল স্টেডিয়াম থেকে এবার দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪। একসুত্রে মিলে যেতে বসেছিল দুজনের ভাগ্য। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে পেনাল্টি থেকে গোল করার পর, মেসির একটা গোল অফসাইডের জন্য বাতিল হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার ঘানার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই গোল করার মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন পর্তুগীজ অধিনায়ক। কিন্তু এবারও মেসির মতো মন্দ কপাল তাঁকে তাড়া করে গেল। ৩১ মিনিটে ফাউলের জন্য রোনাল্ডোর গোল বাতিল করে দেন রেফারি। সঙ্গে সঙ্গে মাথা গরম করে হাত ছুড়তে থাকেন তিনি। তখন মনে করা হচ্ছিল, তাঁকে মেসির মতো মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হবে। কিন্তু সব হিসেব তিনিই বদলে দিলেন। 

প্রথমার্ধে ৭১ শতাংশ সময় বল দখলে রেখেছিল পর্তুগীজরা। কিন্তু ঘানার দুর্ভেদ্য রক্ষণ বারবার বার্নান্ডো সিলভা-জ্যাও ফেলিক্সরা আটকে যাচ্ছিলেন। আটকে যাচ্ছিলেন এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সর্বাধিক ১১৭টি গোল করা রোনাল্ডোও। ম্যাচের ১০ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত পর্তুগাল। বার্নান্ডো সিলভার মাঝমাঠ থেকে ভাসানো বল ডান পায়ে ধরে ঘানার বক্সে ঢুকে গিয়েছিলেন ‘সি আর সেভেন’। কিন্তু নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। ঘানার গোলকিপার লরেন্স আতি-জিজির বুদ্ধির কারণে ব্যর্থ হলেন রোনাল্ডো। ১৩ মিনিটে আবার গোল করার সুযোগ পান রোনাল্ডো। এবার হেডে। কিন্তু ঠিক জায়গায় বল লাগাতে পারেননি। তাই পোস্টের বাইরে দিয়ে বল বেরিয়ে যায়। প্রথম ১২ মিনিটেই জোড়া গোল করতে পারতেন তিনি। কিন্তু সুযোগ নষ্ট করেন।

আরও পড়ুন: FIFA World Cup 2022: মেসি-ওচোয়ার ডুয়েলের আগে, দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে মারামারি! ভিডিয়ো ভাইরাল

আরও পড়ুন: Neymar, FIFA World Cup 2022: নতুন চুলের ছাঁট নিয়ে কাতারে হাজির নেইমার, গোল করবেন তো?

৩১ মিনিটে ডি বক্সের বাঁ দিকে জ্যাও ফেলিক্সের পাস রোনাল্ডোর কাছে আসে। দুই ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে কোনাকুনি শটে বল জালে জড়ান। কিন্তু বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে ফাউল করেন। প্রথমার্ধের শেষে ম্যাচের সম্প্রচারকারী চ্যানেলে পর্তুগীজ কিংবদন্তি লুইস ফিগো বলছিলেন, ‘অতি রোনাল্ডো নির্ভরতা আমাদের দলকে সমস্যায় ফেলবে। গোল পেতে হলে পর্তুগালের ছক বদলে ফেলা। ঘানার এই রক্ষণ ভাঙতে হলে একমাত্র ভরসা হল হাই-প্রেসিং ফুটবল।’ 

তখন বোধহয় ফিগো জানতেন না তাঁর এক সময়ের সতীর্থ ও বাকিরা খেলা একেবারে বদলে দেবেন। নিজের দমে। ম্যাচের বয়স তখন ৬২ মিনিট। বক্সের মধ্যে রোনাল্ডোকে ফাউল করেন ঘানার সালিসু। পেনাল্টি পায় পর্তুগাল। ঘানার ফুটবলাররা রেফারির কাছে আবেদন করতে থাকেন যে পেনাল্টি ন্যায্য নয়। কিন্তু কোনও আপত্তি গ্রাহ্য করেননি রেফারি। খালি চোখে দেখে মনে হয়েছে, রোনাল্ডোকে ফাউল করা হয়েছিল। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি রোনাল্ডো। গোলরক্ষকের ডান দিক দিয়ে টপ কর্নারে বল রাখেন তিনি। গোলরক্ষক জিজির কিছু করার ছিল না। রোনাল্ডো প্রথম ফুটবলার যিনি টানা পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল করলেন।

তবে রক্ষণের ভুলে সেই গোল ধরে রাখতে পারেনি পর্তুগাল। গোল শোধ করল ঘানা। বাঁ প্রান্ত ধরে বল নিয়ে এগিয়ে পর্তুগালের বক্সে ঢুকে পড়েন কুডুস। দলের স্ট্রাইকার আন্দ্রে আয়িউর উদ্দেশে বল বাড়ান তিনি। ৭৩ মিনিটে ডান পায়ের টোকায় গোল করে যান আয়িউ। কিছু করার ছিল না পর্তুগালের গোলকিপার দিয়োগো কোস্তার। ঠিক সেই সময় ক্যামেরা ধরল রোনাল্ডোকে। অধিনায়ক অবাক চোখে কোস্তার দিকে তাকিয়ে আছেন। 

সেই সময় মনে হচ্ছিল ঘানার উপর সৌদি আরব ভর করেনি তো! কিন্তু এরপর ২ মিনিট ৩২ মিনিটে যা ঘটল সেটা দেখে বেঞ্চে বসে জলের বোতল ছুড়ে দেন আন্দ্রে আয়িউ। গোলের পরেই তাঁকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। আর এরপরেই জোড়া গোল হজম করে বসল আফ্রিকার দল। 

৭৮ মিনিট পরে আরও এক বার এগিয়ে গেল পর্তুগাল। মাঝমাঠে বল ধরে হোয়াও ফেলিক্সের উদ্দেশে বল বাড়ান ব্রুনো ফের্নান্দেস। অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে বল ধরে বক্সে ঢোকেন ফেলিক্স। ডান পায়ের শটে গোল করেন ফেলিক্স। ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় পর্তুগাল। ৮০ মিনিটে ঘানার বক্সে ফের পর্তুগীজদের হানা। ঘানার ফুটবলারের কাছ থেকে ফের বল ছিনিয়ে নেন ফের্নান্দেস। তিনি পাস দেন সিলভাকে। বল ধরে এগিয়ে এসে রাফায়েল লিয়াওয়ের দিকে বল বাড়ান তিনি। ঠান্ডা মাথায় গোল করেন পরিবর্ত হিসাবে নামা রাফায়েল। স্কোর লাইন তখন ৩-১। 

তবে ৯০ মিনিটের যুদ্ধের উত্তেজনার আরও বাকি ছিল। আরও এক গোল শোধ দিল ঘানা। পর্তুগালের দুর্বল রক্ষণের সুযোগ নিয়ে ৮৯ মিনিটে গোল করে গেলেন উসমান বুকারি। রোনাল্ডোকে ইতিমধ্য়েই তুলে নিয়েছিলেন কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস। ম্যাচ তখন ৩-২ ফলে দাঁড়িয়ে। কিছুটা চাপে পড়ে যায় পর্তুগাল। কিন্তু তার পরে আর কোনও গোল হয়নি। শেষ পর্যন্ত জিতেই মাঠ ছাড়ে রোনাল্ডোর পর্তুগাল।

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *