ব্রাজিল: ২ (‘৬২, ‘৭৩ রিচার্লিসন)
সার্বিয়া: ০
সব্যসাচী বাগচী
‘Yogo Bonita’। অর্থাৎ ‘আক্রমণাত্মক সুন্দর ফুটবল’। এটাই ব্রাজিল (Brazil) ফুটবলের দর্শন। আক্রমণ দেখা গেল। গায়ে-গতরে ফুটবল খেলে বিপক্ষের ফুটবলারদের ফাউল করার রাস্তায় গেল না পাঁচবারের বিশ্বজয়ীরা। ৯০ মিনিটের অনেক লড়াই ও একাধিক সুযোগ হারিয়ে অবশেষে গোলের দেখাও মিলল। ম্যাচের আগাগোড়া সার্বিয়া গোল দেওয়ার জন্য খেলেনি। ব্রাজিল মুড়িমুড়কির মতো গোল করার সুযোগ পেলেও, একের পর এক সুযোগ নষ্ট করছিল। ফলে একটা সময় মনে হচ্ছিল বিশ্বকাপ অভিযান ড্র দিয়েই শুরু করবে সেলেকাওরা। তবে রিচার্লিসনের মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তিনিই জোড়া গোল করে বিপক্ষের রক্ষণকে মাটি ধরিয়ে দিলেন। ৬২ মিনিটে তাঁর গোলেই এগিয়ে গেল ব্রাজিল। তবে এখানেই শেষ নয়। ৭৩ মিনিটে বাইসাইকেল কিকে সার্বিয়ার জালে বল জড়ালেন তিনি। তাই তিতে-র ছেলেরা পয়েন্ট মাঠে ফেলে রাখার বদলে তিন পয়েন্ট নিয়ে লুসেল স্টেডিয়াম ছাড়লেন হেড কোচ তিতে। কারণ খেলার ফলাফল ২-০। ব্রাজিলের পক্ষে। মরুদেশে সাম্বা ঝড় তুলে শুরু হল এবারের বিশ্বকাপ অভিযান।
লুসেল স্টেডিয়ামে বারবার সার্বিয়ার রক্ষণের কাছে আটকে যাচ্ছিল ব্রাজিল। প্রথম একাদশে রিচার্লিসন, ভিনিসিয়াস, রাফিনহাকে রেখে তিতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আক্রণাত্মক ভঙ্গিতেই খেলতে চান। সঙ্গে নেইমার তো ছিলেনই। সবকিছুই করল ব্রাজিল। কিন্তু আসল কাজের কাজটাই হচ্ছিল না। একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে গেলেও, পাভলোভিচ, ভেলকোভিচ, মিলেনোভিচের রক্ষণের কাছে হার মানতে হচ্ছিল ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা দলকে। অবশ্য এমন পারফরম্যান্সের জন্য সার্বিয়া রক্ষণকে বাহবা জানানো ছাড়াও, গোলকিপার ভাঞ্জার (Milinkovic-Savic) আলাদা প্রশংসা প্রাপ্য। পুরো ম্যাচে একের পর চোখ কপালে তুলে দেওয়া সেভ করলেন তিনি। কিন্তু তাঁকে শেষ পর্যন্ত রিচার্লিসনের পায়ের কাছে হারতে হল। স্বভাবতই হারল সার্বিয়া।
নয়জন স্ট্রাইকারকে এবার কাতার বিশ্বকাপে এসেছেন তিতে। আক্রমণভাগে নেইমার ও রিচার্লিসনের দুই পাশে খেলবেন রাফিনহা ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। প্রত্যেকেই উঁচু মানের এবং ইউরোপের নামী দামি ক্লাবে খেলেন। অথচ ব্রাজিলের প্রথম একাদশে সুযোগ আসে না। ভিনিসিয়াস তাঁদের মধ্যে একজন। তিনি রিয়াল মাদ্রিদে চুটিয়ে খেলছেন। তাঁর গোলেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিল রিয়াল। তবে ব্রাজিলের প্রথম এগারোয় জায়গা পাচ্ছিলেন না। সেই কারণে ব্রাজিল সমর্থকদের মনে প্রচুর কৌতুহল, কাতারে খেলবেন কি না? সেই আশা পূর্ণ করলেন তিতে। গোলের জন্য আগাগোড়া দৌড়ে গেলেন ২২ বছরের স্ট্রাইকার। কিন্তু লাভ হল কোথায়! সার্বিয়া রক্ষণ নয়, প্রথমার্ধে গোলকিপার ভাঞ্জার বারবার তাঁর জোড়া গ্লাভস হাতে রুখে দাঁড়ালেন।
প্রথমার্ধে নেইমারকে নিজের ছন্দে দেখা যায়নি। এরমধ্যে সার্বিয়ার রক্ষণে ছিল দীর্ঘকায় ফুটবলার। পাওয়ার ফুটবলের উপর ভর করে বারবার নেইমারকে আটকে দিলেন হেড কোচ ড্রাগন স্টোকোভিচের (Dragan Stojkovic) ছেলেরা। শারীরিক সক্ষমতা দিয়ে নেইমারের খেলা নষ্ট করে দেওয়ার সঙ্গে তাঁকে চার্জ করতেও দেখা গেল। প্রথমার্ধেই পাঁচবার ফাউল করা হয়েছিল ব্রাজিলের ‘পোস্টার বয়’-কে। দ্বিতীয়ার্ধে নেইমারকে আরও আগ্রাসী মেজাজে দেখা গেল। কয়েকবার চোরা স্প্রিন্ট টেনে বল পায়ে বিপক্ষের বক্সে পৌঁছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু বল জালে রাখতে পারেননি।
এরসঙ্গে হেলায় গোল নষ্ট করে গেলেন ক্যাসেমিরো ও রাফিনহার। তাঁদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। ৩৫ মিনিটে বক্সের মধ্যে বল পেয়েছিলেন রাফিনহা। শুধুমাত্র গোলকিপারকে পরাস্থ করতে হত। যদিও তাঁর শটে জোর ছিল না। ফলে বল ধরে নিলেন সার্বিয়া গোলকিপার ভাঞ্জার হাতে জমে গেল। ৪১ মিনিটে ক্যাসেমিরোর লম্বা পাস, বক্সের সামনে পেলেও কাজে লাগাতে পারলেন না ভিনিসিয়াস।
এই ম্যাচের আগে পর্যন্ত মাত্র দু’বার সার্বিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল। দু’বারই জিতে মাঠ ছেড়েছিল সেলেকাওরা। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় এসেছিল ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে। একটা সময় মনে হচ্ছিল। চার বছর আগে হারের বদলা নেবে সার্বিয়া। কিন্তু সব হিসেব বদলে দিলেন রিচার্লিসন। ৬২ মিনিটে বক্সের মধ্যে নেইমার এগিয়ে গিয়ে শট নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাঁর থেকে বল পেয়ে ভিনিসিয়াসের শট ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচান গোলকিপার। ফিরতি বল গোলে ঠেলে দেন রিচার্লিসন। খাতা খোলে ব্রাজিল। ১১ মিনিট পর আবার সার্বিয়া শিবিরে হানা দেন রিচার্লিসন। বাঁ দিক থেকে আউটস্টেপে বল ভাসিয়েছিলেন ভিনিসিয়াস। প্রথমে বল রিসিভ করে দুর্দান্ত সাইডভলিতে বল জালে জড়ালেন ব্রাজিলের নম্বর নাইন। বাইসাইকেল কিকে করা সেই গোলের পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সার্বিয়া।
আর্জেন্টিনা শুরুটা ভালো করেও সৌদি আরবের কাছে ১-২ গোলে হেরে গিয়েছে। পর্তুগাল ৩-২ গোলে ঘানাকে হারালেও, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দলের রক্ষণ একেবারেই ভালো পারফর্ম করেনি। তবে ব্রাজিল কিন্তু আগ্রাসী ফুটবল খেলে শুধু জয় পেল না, তিতে বুঝিয়ে দিলেন যে কেন তিনি নয়জন স্ট্রাইকারকে বোঝাই করে এনেছেন। একের পর এক আক্রমণ করে গেলে, বিপক্ষ আর কতক্ষণ লড়বে! সার্বিয়াকে হারিয়ে এবং মরুদেশে সাম্বা ঝড় তুলে সেটাই জানান দিল পাঁচবারের বিশ্বজয়ী দল।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)