Jayati Chakraborty: পরিচারিকার শাড়ি, ব্লাউজ, সায়া পরে ‘পলাশের মা’ হয়েছি


শুভঙ্কর চক্রবর্তী: জয়তী চক্রবর্তী। না না, গায়িকা নন। অভিনেত্রী। তবে এই নামে তাঁকে কেউই চেনেন না। ঘেঁটু নামে চেনেন। ‘দোস্তজী’ ছবিতে তিনি ‘পলাশের মা’। স্পেশাল স্ক্রিনিং শো-তে প্রসেনজিত্‍ চট্টোপাধ্যায় অভিনেত্রীর এক কান্নার দৃশ্যে চোখ নামিয়ে ফেলেছিলেন। এতটাই বোধহয় জ্যান্ত ছিল সেই অভিনয়…

‘দোস্তজী’ অবধি এই যাত্রাপথ…

জয়তী: অভিনয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আমার ছিল না। তবে ছোটবেলা থেকে সিনেমার প্রতি একটা ঝোঁক ছিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অঙ্গভঙ্গি করতাম। পাড়ার নাটকে ‘গুপী গাইন ও বাঘা বাইন’-এ সাইড রোলে অভিনয় করি, প্রথম। আমাদের বাড়িতে বাবা এবং ফুলদা (পিসতুতো দাদা) থিয়েটার করত। সবাই দেখতে যেতাম। কিন্তু আমি অভিনয় করব, ভাবিইনি। ইভেন্টে কাজ করতাম। পার্ট টাইম। শুটিংয়ের সময় কখনও জুনিয়র আর্টিস্ট, কখনও ক্রাউডের মাঝে দাঁড়িয়ে থেকেছি। এমন কাজের সূত্রে অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবিতেও অভিনয় করেছি। শাবানা আজমির অভিনয় সামনে থেকে দেখে অবাক হয়েছি। একদিন মনে হল, অনেক হয়েছে আর ক্রাউডে দাঁড়াব না। কিন্তু কী করব? কীভাবে এগোব? শুনেছিলাম অভিনয় করতে গেলে পোর্টফোলিও বানাতে হয়। তার জন্যও তো অনেক টাকা। বানালাম। মোট চার-পাঁচটা ছবি পেয়েছিলাম, পুরো টাকা দিতে পারিনি তাই (হাসি)। প্রত্যেকদিন প্রোডাকশন হাউসে ছবি দিতাম। অডিশন দিতাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। তারপর এক পরিচিত বললেন, থিয়েটারে করো, অভিনয় শেখো। তিনিই আমায় যোগাযোগ করতে বললেন, নরেন ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তার দল, ‘উদাহরণ’-এ কাজ করা শুরু করি। অভিনয় শিখতে শুরু করি।

ঘেঁটু নাম তখন থেকেই?

জয়তী: হ্যাঁ। ঘেঁটলু ছিল ওটা থেকে ঘেঁটু। আমার মনে হয় একবার এক নাটকে প্রপার্টিজের দায়িত্ব দিয়েছিল নরেনদা। সেই নাটকে অভিনয়ও ছিল। ভীষণ ঘেঁটে ফেলছিলাম। (হাসি)

তারপর কি ‘বেলঘরিয়া অভিমুখ’ নাট্যদল?

জয়তী: হ্যাঁ। সেখানে যোগ দেওয়ার পর পরিচয় হয় নাট্যশিল্পী কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি আমার অভিনয়ের ডাইমেনশন একেবারে বদলে দেন। ‘কোজাগরী’ নাটকটিতে আমার চরিত্রের নাম ‘ময়ূরী’। সেই চরিত্রটাকে নিয়ে রোজ বাঁচতে শিখিয়েছিলেন কৌশিকদা। সেই সময়ে আমাদের নাটকের কস্টিউমের দায়িত্বে ছিল প্রসূন চট্টোপাধ্যায়। তখন ওর সঙ্গে আলাপ হল। প্রসূনও নাটকের ছেলে। ‘অনসম্বল’এ অভিনয় করত।

তারপরই কি ‘দোস্তজী’তে কাজ?

জয়তী: না, ঠিক তা নয়। আমার ছেলে তখন অনেকটাই ছোট। শুরুর দিকে ছবির ট্রেলারের জন্য দুই বন্ধুর ডাবিং ভয়েস দরকার ছিল। প্রসূন আমার ছেলেকে নেয়। তখন ছবিটা ক্রাউড ফান্ডিংয়ে ধীরে-ধীরে এগোচ্ছে। কিছুটা শুট হয়েছে, বেশিরভাগটাই বাকি। তারপর যা হয়েছে তার ডাবিং করা। তারপর আবার প্রোডিউসার খোঁজা। তারপর আবার শুটিং। এমনভাবে এগোচ্ছে। সেই সময়ে ছেলেকে নিয়ে প্রসূনের বাড়ি যাই। একদিন প্রসূন আমাকে ‘দোস্তজী’র একটা ছোট্ট ট্রেলার পাঠাল। ওটা দেখেই কেঁদে ফেলি। ফোন করে প্রসূনকে বলি, ছবিতে থাকতে চাই, তুই যেভাবে চাইবি, অ্যাসিস্ট হোক কিংবা কস্টিউম দেখব, যাই-হোক, আমি থাকতে চাই। আর্থিকভাবে সাহায্য করতে না পারলেও, যদি কোনওভাবে থাকা যায়, একটু দ্যাখ। ও তখন বলে, ‘‘দ্যাখ ছবিতে কোনও প্রমিনেন্ট মহিলা চরিত্র নেই। যা আছে তা ভীষণ ছোট। বিশেষ কিছু আশা করিস না,’’ আমি বলি ঠিক আছে, আমাকে রেখে দে ছবিটার সঙ্গে, তাহলেই হবে। কিছুদিন পরে প্রসূন ফের কল করে বলে, ‘‘তোকে ভাবছি একটা চরিত্রে, কিন্তু এখনই কথা দিতে পারছি না।’’ তারপর একদিন রাতে আবার ফোন। বলল, ‘‘তুই করছিস। আজ থেকে স্কিন কেয়ার, থ্রেডিং করা বন্ধ। পুরোনো জামাকাপড় জোগাড় কর।’’ ব্যস, তারপর পরিচারিকার থেকে শাড়ি, ব্লাউজ, সায়া চাইলাম। সেই সব পরে ছবি পাঠালাম প্রসূনকে। তারপর শুটিং…পলাশের মা। (হাসি)

প্রসূন…এবং বাকি দোস্তরা

জয়তী: শুটিংয়ের সময় প্রসূনকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। ওর কাজের প্রতি ডেডিকেশন সাংঘাতিক। এটা এক কথায়, বোঝানো যাবে না। প্রসূনের ডেডিকেশ, আমাকে আমার চরিত্রের সঙ্গে আরও বেশি জড়িয়েছে। আর ছিল রাজা। আমাদের ‘দোস্তজী’র অনেকটা দায়িত্ব ওর কাঁধে ছিল। ওকে খুব ভুগিয়েছি। বেচারা রাত করে ঘুমোতে যেত। আমি ওর কাছে গিয়ে আগামিকাল কী কী সিন হবে, তা জানতে যেতাম। কখনও অভিযোগ করেনি। লালন ছিল। আমাকে আম কুঁড়োতে নিয়ে যেত। তাও আবার রাতে। প্রসূন চিত্‍কার করত। এদিকে যাস না, ওদিকে যাস না। অভিভাবক গোছের ছিল প্রসূন। রামলীলার যেদিন শুটিং ছিল, লালন বাইকে করে আমবাগানে নিয়ে গিয়েছিল। এক কাছা আম নিয়ে ফিরেছিলাম। এই সবকিছু ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়। তুহিন, আমাদের ছবির সিনেমাটোগ্রাফার। এই চরিত্রর জন্য ও অনেক অভিনেতার ছবি তোলে। তুহিন আমার ছবি দেখে প্রসূনকে বলেছিল, ‘‘জয়তীদিকে নাও, ওর মধ্যে একটা সিমপ্লিসিটি আছে।’’ সত্যিই ও যদি তখন সেটা না বলতো, এমন কাজে জানি না থাকতে পারতাম কি না। ‘দোস্তজী’র সঙ্গে থাকা সবাই কোন না কোনও ভাবে আমার সঙ্গে থেকে যাবে চিরকাল। তাঁরা সবাই আমার দোস্ত। সারাজীবনের দোস্ত।

আরও পড়ুন-28th Kolkata International Film Festival: কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে অমিতাভ-জয়া, শাহরুখ, সৌরভ

কী শেখালো ‘দোস্তজী’?

জয়তী: আমার বড় হওয়া শহরেই। তার পরিবেশ একেবারে আলাদা। মানুষগুলোও আরও আলাদা রকমের। প্রতিদিন কেমন বদলে-বদলে গেছে। এবং সে বদল চোখে পড়ার মতো। ‘দোস্তজী’ শুটিং পুরোটাই একেবারে গ্রামে। মূর্শিদাবাদ। ভগীরথপুর গ্রাম। সেই গ্রামে একটা বড় মাঠ আছে। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত দেখা যায় না। ওই বড় মাঠ আর ওপরদিকে তাকালে বড় আকাশ। আমি ঠাঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আসপাশের মানুষ দেখতাম। কথা বলতাম। এতটা সরল সেই মানুষগুলো। তাঁদের সঙ্গে আমার শহরের মানুষগুলোর মিল পাইনি। রান্না করার একট দৃশ্যে পাটকাঠি পুড়িয়ে উনুন জ্বালানোর দৃশ্য ছিল। দিনের পর দিন গ্রামের একজনের বাড়ি গিয়ে শিখেছি। বারবার শিখিয়েছেন তাঁরাই। ‘দোস্তজী’তে দুটো বাড়ি দেখানো হয়েছে। দুই বন্ধুর দুই বাড়ি। আসলে ওটা একটাই বাড়ি। অস্থায়ী এক বেঁড়া দেওয়া হয়েছিল বাড়িটায়। যাঁদের বাড়ি, তাঁরা শুটিংয়ের জন্য আমাদের ছেড়ে দিতেন। পাশের এক বাড়িতে চলে যেতেন। কোনও অভিযোগ ছিল না। রাতের বেলা শুটিং চলছে। রান্না করার সময় ডালের বড়া ভাজলেও, শুটিংয়ে সবার জন্য দিয়ে যেতেন। এই যে আমাদের প্রতি, আমাদের কাজের প্রতি এক বিশ্বাস, ভালবাসা। যে ভালবাসায় কোনও খাদ নেই, এমন সহজ সরল ভালবাসা, আমি শিখেছি। 

‘দোস্তোজী’ আপনাকে পরিচিতি দিয়েছে। আপনার অভিনয় নিয়েও কথা হয়েছে। তবে না পাওয়াগুলোও তো আছে?

জয়তী: (হাসি) এটা তো ভেবে দেখিনি কখনও। দেখুন, যা-যা চেয়েছি সব যে পেয়েছি, তা নয়। কিছুটা পেয়েছি। তবে যা একেবারে অপ্রত্যাশিত, তা হল এমন অনেক কিছু পেয়েছি, যা কখনও চাইওনি। সেই পাওয়ার কিন্তু আনন্দ একেবারে আলাদা। রবি ঠাকুরের কথায় আছে, ‘না চাহিতে মোরে যা করেছ দান, আকাশ আলোক তনু মন প্রাণ’। যা পাইনি তা নিয়ে আক্ষেপ নেই, সেটাই আমার অনুপ্রেরণা। আমার বিশ্বাস জীবন আমায় সারপ্রাইজ করবেই। 

নেক্সট স্টপ?

জয়তী: নেক্সট স্টপ। জানি না।

কোনও প্ল্যান নেই?

জয়তী: মানে, কাজ তো করে চলেছি। নিজেকে আরও প্রিপেয়ার করছি। মন থেকে চাইছি, ভাল-ভাল কাজ যেন আমার কাছেই আসে (হাসি)। তার জন্য অপেক্ষা করছি। দুটো মেগা সিরিয়ালে অভিনয় করছি। ‘ফেরারি মন’ ও ‘ক্যানিংয়ের মিনু’। জীবনের আঁকেবাঁকে কী লুকিয়ে আছে! দেখা যাক। ওই আর পাঁচজনের মতো আশায় বাঁচা আর কী!

‘বল্লভপুরের রাজা’ সত্যম ভট্টাচার্যর সঙ্গে তো আপনার পারিবারিক সম্পর্ক?

জয়তী: হ্যাঁ। আমি ওর পিসি হই। সত্যমরা, দু’ভাই। সত্যম, সুস্নাত। ওদের বাবা আমার পিসতুতো দাদা, ফুলদা। সত্যম নামে ডাকতে কেমন যেন লাগে…সত্যম আমার কাছে তুনাই আর সুস্নাত বুগাই। ওর কাছে আমি বুড়িয়া পিসি। তুনাই, বুগাই দুজনেই থিয়েটার করে। দু’ভাইই দারুণ অভিনয় করে। ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ দেখে তো আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। তুনাই কী ভাল অভিনয় করেছে! তুনাই সৃজিতকে যখন অ্যাসিস্ট করত। ‘জুলফিকার’-এ আমাকে রেফারও করেছিল। একটা ছোট্ট চরিত্রে ছিলাম ছবিতে। ছোটবেলায় ওদের বাড়িতে ভাইফোঁটায় যেতাম। বাজি ফাটাতাম। নাটক দেখতে গেলে দেখাও হতো। খুব মনে পড়ে সেই সব দিন। সত্যম আরও ভাল কাজ করুক। আরও বড় হোক। বল্লভপুরের রাজার মতো। (হাসি)

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *