সব্যসাচী বাগচী
ফ্রান্স: (‘৬১, ‘৮৬ কিলিয়ান এমবাপে)
ডেনমার্ক: ১ (‘৬৮ আন্দ্রেস এরিকসেন)
অস্ট্রেলিয়ার (Australia) পর এবার ডেনমার্ক (Denamark)। অজিদের বিরুদ্ধে ১-৪ গোলের জয়ের পর এবার ডেনিসদের বিরুদ্ধে ১-২ গোলে জয়। কাকতালীয়ভাবে দু’বারই পিছিয়ে থেকে দারুণ কামব্যাক করল ফ্রান্স (France)। কারণ দিদিয়ের দেশঁ-র (Didier Deschamps) দলে যে একটা কিলিয়ান এমবাপে (Kylian Mbappe) আছেন। যিনি স্কিল ও পাওয়ারের মিশেলে যে কোনও সময় বিপক্ষের রক্ষণ কাঁপিয়ে দিতে পারেন। শনিবার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ ফের একবার এমবাপে নামক তারকা তাঁর ঝলক দেখালেন। ফলে একটা সময় পর্যন্ত চোখে চোখ রেখে লড়াই করার ডেনমার্ক হার স্বীকার করতে বাধ্য হল। ৬১ ও ৮৬ মিনিটে এমবাপে নামক ঝড়ের সৌজন্যে খেলার ফলাফল ২-১। এমবাপের জোড়া গোলের সৌজন্যে। ফলে চলতি কাপ যুদ্ধের প্রথম দল হিসেবে নক আউটে জায়গা করে নিল দু’ বারের বিশ্বজয়ী দল।
৯০ মিনিটের যুদ্ধে দুই দেশ আগেও একে অপরকে কড়া টক্কর দিয়েছে। ১৯৯৩ সালের ২১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর , গত ১৬ ম্যাচে ফ্রান্স জিতেছে ৮টি ম্যাচ। সেখানে ডেরমার্কের ঝুলিতে এসেছে ৬টি জয়। দুটি ম্যাচ ড্র ফরাসিরা যেখানে ২০টি গোল করেছে, সেখানে ডেনিসদের পালটা গোলের সংখ্যা ১৩। ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও এগিয়ে কিলিয়েন এমবাপে-অলিভিয়ের জিহুরা। দুবারের বিশ্বজয়ীরা ৪ নম্বরে রয়েছে। সেখানে ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনদের অবস্থান ১০ নম্বরে। তবে তাই বলে ফ্রান্স সবদিক থেকেই এগিয়ে থাকবে, এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। কারণ গত তিন সাক্ষাতে তারকাখচিত দিদিয়ের দেশঁ-র দলকে দু’বার হারিয়েছে ডেনমার্ক। এরমধ্যে চলতি বছরের ৩ জুন ১-২ এবং গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২-০ গোলে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ অভিযানে এসেছে ডেনিসরা। তবে এবার আর সুবিধা করতে পারল না। কাপ যুদ্ধের লড়াইয়ে এমবাপের পায়ের উপর ভর করে জয় পেল ফ্রান্স।
প্রথমার্ধে ডেনিস শিবিরে একের পর এক আক্রমণ করে যাচ্ছিল ফ্রান্স। তবে লাভ হয়নি। ১০ মিনিটে বাঁ প্রান্ত ধরে আক্রমণ তুলে আনে ফ্রান্স। বক্সে বল তোলেন থিয়ো হার্নান্ডেজ। ফিরতি বল পেয়ে গিয়েছিলেন অলিভিয়ের জিহু। কিন্তু পায়ে-বলে সংযোগ করতে পারেননি তিনি। পরের মিনিটেই ফরাসি বক্সে আক্রমণ তুলে আনেন আন্দ্রেস এরিকসেন। কিন্তু ডেনমার্কের কোনও ফুটবলার হেড করার আগেই বল তালুবন্দি করেন ফরাসি গোলকিপার হুগো লরিস।
১৯ মিনিটে এবার ফ্রান্সের বক্সে ঢুকে যায় ডেনিস স্ট্রাইকার। তবে ডেনমার্কের গোলমুখী আক্রমণ আটকে দেন গ্রিজম্যান। নিজেদের বক্সে বল ধরে প্রতি-আক্রমণ শুরু করেন তিনি। অনেকটা দৌড়ে এমবাপের উদ্দেশে বল বাড়ান গ্রিজম্যান। এমবাপেকে আটকাতে ফাউল করেন ক্রিশ্চেনসন। ফলে রেফারি তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান।
ফ্রান্স বারবার আক্রমণ করলে, ডেনিসরাও কিন্তু হাল ছাড়ছিল না। ২৬ মিনিট খেলায় ফেরার চেষ্টা করছে ডেনমার্ক। মাঝমাঠে বলের দখল নিয়ে দু’প্রান্ত ধরে আক্রমণ তুলে আনার চেষ্টা করছে তারা। আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন এরিকসেন। কিন্তু ভাল সুযোগ তৈরি করতে পারেননি তাঁরা। কারণ আক্রমণের পাশাপাশি রক্ষণকেও মজবুত করে রেখেছিল দিদিয়ের দেশঁর ফ্রান্স।
অস্ট্রেলিয়াকে গত ম্যাচে উড়িয়ে দেওয়ার নেপথ্যে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন এমবাপে ও জিহু। গোলের খোঁজে দুই তারকা ফের একবার আগ্রাসী ভূমিকা নেন। ৩৫ মিনিটে ডেম্বেলে-এমবাপে যুগলবন্দিতে বক্সে বল পান জিহু। তাঁর হেড অল্পের জন্য বাইরে বেরিয়ে যায়। গোল না পেলেও ফ্রান্স কিন্তু আক্রমণ থেকে সরে আসেনি। ৪০ মিনিটে আবার একটি আক্রমণ তুলে আনে ফ্রান্স। অফসাইডের জাল কেটে ডান প্রান্ত ধরে এগিয়ে যান ডেম্বেলে। বক্সে অরক্ষিত থাকা এমবাপেকে বল দেন তিনি। এমবাপের ডান পায়ের শট গোল উঁচিয়ে চলে যায়। গোল করতে না পেরে হতাশ দেখায় এমবাপেকে।
মাঝেমাঝেই কড়া ট্যাকল হচ্ছিল। কার্ড বার করছিলেন রেফারি। বিশ্ব ফুটবলের দুই সেরা পারফর্ম করলেও, গা গরম হচ্ছিল না। গত ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১-৪ ব্যবধানে উড়িয়ে দেওয়ার পর প্রথমার্ধে গোলশূন্য স্কোরলাইন বড্ড বেমামান লাগছিল। তবে দেশের হয়ে খেলতে নেমে গত এমবাপে কিন্তু হাল ছাড়েননি। খেলার বয়স তখন ৬১ মিনিট। অবশেষে ডেনমার্কের রক্ষণ ভাঙতে সক্ষম হয় ফ্রান্স। বাঁ দিকে থেকে এমবাপেকে পাস দেন হার্নান্ডেজ। পাল্টা তাঁকে পাস বাড়ান এমবাপে। গোল লাইন থেকে বক্সে বল রাখেন হার্নান্ডেজ। চলতি বলে ডান পায়ের শটে গোল করেন এমবাপে। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। সেই গোলের পর সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দিদিয়ের দেশঁ-র শিশুদের মতো সেলিব্রেশন ছিল দেখার মতো।
কিন্তু দিদিয়ের দেশঁ ও তাঁর ছাত্রদের সেলিব্রেশন বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। কারণ ফরাসি রক্ষণের ফাঁকফোকর ভালোই কাজে লাগালেন আন্দ্রেস এরিকসেন। গোল খেয়ে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ায় ডেনমার্ক। তার ফলও মেলে। কর্নার থেকে সতীর্থের ব্যাক হেড থেকে হেডে গোল করলেন আন্দ্রেস এরিকসেন। কিছু করার ছিল না লরিসের। খেলার ফলাফল তখন ১-১।
সেই গোলের পর রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘের মতো ফ্রান্স রক্ষণের পরীক্ষা নিতে শুরু করে ডেনমার্ক। পাঁচ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে যেতে পারত ডেনমার্ক। বক্সের মধ্যে ভাল জায়গায় বল পান ড্যামসগার্ড। তাঁর ডান পায়ের শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে বার করে দেন লরিস। নইলে চাপে পড়ে যেত ফ্রান্স।
কিন্তু এমবাপে থাকতে চিন্তা কিসের। ৮৬ মিনিটে আবার গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন এমবাপে। বক্সের বাইরে থেকে বল তোলেন গ্রিজম্যান। ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের কাছে নিয়ে ডান পায়ের টোকায় গোল করেন এমবাপে। ফলে এই নিয়ে দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে ১২ ম্যাচে ১৪টি গোল করে নতুন নজির গড়লেন মাত্র ২৩ বছরের এই স্ট্রাইকার। চলতি বিশ্বকাপে এই নিয়ে তিনটি গোল হয়ে গেল। দিদিয়ের দেশঁ-র দল ‘মিনি হাসপাতাল’। এনগোলো কান্তে (N’Golo Kante), পল পোগবার (Paul Pogba) মতো তারকারা আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন। কাতারে পা রাখার পর চোটের পেয়ে ছিটকে যান ডিফেন্ডার প্রেসনেল কিম্বেম্বে। চোট পেয়ে বাতিলে খাতায় নাম লিখিয়ে দেশে চলে গিয়েছেন দলের সবচেয়ে তারকা করিম বেঞ্জিমা। ডান পায়ের গোড়ালিতে চোট কাপ যুদ্ধ থেকে ছিটকে গিয়েছেন আর এক তারকা লুকাস হার্নান্ডেজ। মাত্র ২৪ জনের দল নিয়েও লড়ে যাচ্ছে ফ্রান্স। এই দলটা আগামি ১৮ ডিসেম্বর মেগা ফাইনালে নামলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)