সন্তানের ভালো হবে কীসে–তার সিদ্ধান্ত একান্ত ভাবে বাবা-মায়েরই। এক শিক্ষিকার চাইল্ড কেয়ার লিভের (সিসিএল) অনুমোদন দিয়ে এমনই পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)। মা সন্তানকে টেবিল টেনিসের উচ্চ প্রশিক্ষণ দিতে সুইডেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই কারণে বাঁকুড়ার স্কুলের ওই শিক্ষিকার সিসিএল-এর আবেদনে সাড়া দেননি কর্তৃপক্ষ। স্কুল শিক্ষা দপ্তরও তাঁর আবেদন খারিজ করে। হাইকোর্টে মামলার পর বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্য ওই শিক্ষিকার সিসিএল অনুমোদন করেন। দু’সপ্তাহের মধ্যে ওই ছুটি অনুমোদনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্কুলকে। একই সঙ্গে তাঁর বন্ধ বেতন আট সপ্তাহের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ওই শিক্ষিকার আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য শনিবার বলেন, “মেয়েকে খেলার প্রশিক্ষণ দিতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ওই শিক্ষিকার শুধু ১২০ দিন সিসিএলই হাইকোর্ট অনুমোদন করেনি, অন্য ছুটি যে ভাবে অ্যাডজাস্ট হয়, সে ভাবে ব্যবস্থা করারও অনুমতি দিয়েছে। সঙ্গে আটকে রাখা বেতনও মেটাতে সময় বেঁধে দিয়েছে আদালত।”
আদালতের পর্যবেক্ষণ, শুধু সন্তানের পরীক্ষা বা অসুস্থতার কারণেই বাবা-মা সিসিএল পাবেন, এটা হতে পারে না। যদি টেনিস খেলা সন্তানের জীবনধারণের ক্ষেত্রে অন্যতম মাধ্যম হয়, সে ক্ষেত্রেও অভিভাবক ওই ছুটি পাওয়ার অধিকারী। স্কুল সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আদালতের এই পর্যবেক্ষণ চাকরিজীবী অভিভাবকদের সিসিএল পাওয়ার ক্ষেত্রে মাইলস্টোন হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
বাঁকুড়ার পোখন্না গার্লস জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষিকা প্রজ্ঞাপারমিতা ভৌমিক মেয়েকে নিয়ে সুইডেনে টেবিল টেনিসের উচ্চ প্রশিক্ষণের জন্যে যান। ২০১৭ সালে এই কারণে সিসিএল-এর জন্যে স্কুলে আবেদন করেন। কিন্তু স্কুল কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। এর মধ্যে মেয়ের প্রশিক্ষণের সময় বেড়ে যাওয়ায় তিনি আরও কিছু দিন বাড়তি ছুটির আবেদন করেন স্কুলে। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি। এর মধ্যে কেটে যায় ২৭০ দিন, প্রায় ন’মাস। তাঁর ছুটির আবেদন অগ্রাহ্য করে স্কুল তাঁর বেতন বন্ধ করে দ্রুত কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তিনি দেশে ফিরে বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু ডিআই অফিসও তাঁর ছুটির আবেদন খারিজ করে। তার পরেই তিনি হাইকোর্টে মামলা করেন ছুটি মঞ্জুরের জন্যে।