জাতীয় সড়কের ধারে থাকা সব বেআইনি ধাবা, দোকানঘর, ঝুপড়ি সরানোর জন্য রাজ্যকে চিঠি দিল কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক। বলা হয়েছে, জাতীয় সড়কের ধারে দখলদার থাকায় যান নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছে। ভবিষ্যতে সড়ক সম্প্রসারণেও যা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা। পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যেরই মুখ্যসচিবদের দিনকয়েক আগে এই মর্মে চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের ডিজি একে কুশওয়া। প্রতিলিপি গিয়েছে রাজ্যের পূর্ত সচিবের কাছেও। নবান্নের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় সড়কের ধারে এমন কয়েক লক্ষ বেআইনি ধাবা ও দোকান রয়েছে। যেগুলির সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষের রুটি-রুজি জড়িত। দিল্লির নির্দেশে এঁদের সরাতে গেলে বড়সড় প্রতিরোধ তৈরি হতে পারে। যার জেরে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার সমস্যার আশঙ্কা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই ঝুঁকি এড়াতে চান সরকারি কর্তারা।
যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের চিঠিতে জানানো হয়েছে, দখলদারদের সরানোর ব্যাপারে যাবতীয় আইনি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে (এনএইচএআই)। যার জোরে এনএইচএআই-এর আধিকারিকরা মনে করলে দখলদারদের হটিয়ে দিতে পারেন। তা অনুযায়ী জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে উচ্ছেদ অভিযানে নামতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন জড়িত বলে রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। চিঠি না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবারই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি জোর করে জমি নেওয়ার বিরোধী। কোথাও জোর করে জমি নেওয়া হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের আন্দোলনে নামার পরামর্শ দিয়েছেন। এমনকী, এই আন্দোলন হলে রাজ্য পাশে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন মমতা। এর পর জাতীয় সড়কের দখলদার সরাতে রাজ্যের সহযোগিতা মিলবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান এনএইচএআই। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা এনএইচএআই-এর এক আধিকারিক বলেন, ‘অনেক জায়গায় জাতীয় সড়কের ধারে স্থায়ী হোটেল, ধাবা, রেস্তরাঁ তৈরি হয়েছে। বাজারও বসছে। এগুলি রাতারাতি সরানো সম্ভব নয়। রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন সহযোগিতা না করলে এনএইচএআই-এর একার পক্ষে কিছু করা অসম্ভব।’ রাজ্য সহযোগিতা না করলে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে এবং প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে জাতীয় সড়ক দখলমুক্ত করা হবে বলে ওই আধিকারিক জানান।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন কেন্দ্রকে নিশানা করে বলেন, ‘ভাত দেওয়ার নাম নেই, কিল মারার গোঁসাই! ৪৫ বছরে এখন দেশে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। এই সরকারের আমলে সবকিছুর দাম বেড়েছে। কমেছে কেবল মানুষের জীবনের দাম।’ বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল আবার রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ‘এই সরকার কোনও নিয়ম মানে না। বাংলাদেশ থেকে যারা আসছে, তারাও পুলিশকে টাকা দিয়ে দোকান করে বসে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা বাড়ছে। মানুষের ভালোর জন্যই কেন্দ্র জাতীয় সড়ক দখলমুক্ত করতে চাইছে।’