SSC Scam Case : টাইপ না-জেনেই স্কুলের ক্লার্ক! মামলা হতেই অদৃশ্য অযোগ্যরা – ssc scam again youth joined as a clerk at bhangar high school not capable of computer typing


পার্থসারথি সেনগুপ্ত
কম্পিউটারে ভালো করে টাইপ করতেই জানেন না, তিনি আবার কেমন ক্লার্ক! ভাঙড়ের গড়দেওয়ান হাইস্কুলে ২০২১-এ করণিক পদে যোগ দেওয়ার পরই শাহজাহান জমাদারকে ঘিরে শুরু হয়েছিল ফিসফিসানি। স্কুলের এক আধিকারিকের কথায়, ‘সবাই বলাবলি করত, ছেলেটি তো ভালো করে কম্পিউটারই জানে না। অথচ স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ-সি’তে নিয়োগের শর্তই ছিল কম্পিউটার তথা টাইপে সাবলীল দক্ষতা। প্রশ্ন উঠেছিল, এসএসসি’র শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পরীক্ষায় সফল হলো সে কী করে!’বেশি দিন শাহজাহান টিকতে পারেননি ওই পদে। কলকাতা হাইকোর্টে এসএসসি’র নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় গ্রুপ-সি পদে ৩৫২ জন অযোগ্য প্রার্থীর তালিকায় নাম উঠে যায় তাঁর। বেতন বন্ধ হওয়ায় শাহজাহান বাড়িতেই ফিরে যান। তাঁর কথায়, ‘আমি বাড়িতে বসেই এখন টিউশন করি আর সরকারি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে টাইপ প্র্যাকটিস করছি। সত্যিই আমি কম্পিউটার বা টাইপে বেশ দুর্বল।’ যদিও তাঁর দাবি, ‘আমি কিন্তু নিয়োগে টাইপ পরীক্ষায় পাশ করেছিলাম। ফলাফলের ভিত্তিতে ওয়েটিং লিস্ট থেকে আমায় সুপারিশ করা হয়েছিল।’

SSC Recruitment : অতিরিক্ত পদে নিয়োগ: সরব এসএসসি প্রার্থীরা
২৯ অক্টোবর এসএসসি’র চেয়ারম্যান বিভিন্ন জেলায় এই ধরনের অযোগ্য গ্রুপ-সি ও ডি কর্মীদের বিস্তারিত খতিয়ান চেয়েছেন। জেলাওয়াড়ি কোন স্কুলে অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল, কারা যোগ দিয়েছেন, কারা আর স্কুলে নেই বা কাদের বেতন বন্ধ–এ সব জানতে চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে সে-সব তথ্য আসতেও শুরু করেছে। এঁরা সবাই ২০১৬-এর পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৫৪টি স্কুলের নাম এসেছে। এসএসসি’র নিয়োগ-দুর্নীতির প্যানডোরার বাক্স খুলে যাওয়ার পর গড়দেওয়ান হাইস্কুলের মতোই তালিকায় থাকা অন্যান্য স্কুলের ছবিও একই রকম। গত বছর পুজোর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিবনগর মোক্ষদাসুন্দরী বিদ্যামন্দিরে করণিকের পদে যোগ দিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জয়ন্তকুমার মণ্ডল। মাস ছয়েকের মধ্যেই তিনি ফিরে যান বাড়িতে। এখন ওডিশায় ৫০০ টাকা দিনমজুরিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন। মৌসিনি কো-অপারেটিভ হাইস্কুলের পূর্বতন করণিক পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা বিবেকানন্দ গুনরি বলেন, ‘স্কুলে কাজে যোগ দিয়েও বেতন পাচ্ছিলাম না। এখন গ্রামে পুকুর-ডোবায় মাছ ধরে পেট চালাচ্ছি।’

Teacher Recruitment: জেলা পরিদর্শকদের কাছে ‘জরুরিভাবে’ শিক্ষক নিয়োগের তথ্য চাইল পর্ষদ
দুর্বাচটি জেএনএ স্কুলে যিনি করণিকের পদে যোগ দিতে এসেছিলেন, তাঁর নথিতে অসঙ্গতি ছিল। স্কুলের নাম ঠিক থাকলেও নিয়োগের অন্যতম শর্ত যে পিপি নম্বর (প্রায়র পারমিশান নম্বর), তা স্কুলটির সঙ্গে মেলেনি। শিক্ষাকর্তারা ওই প্রার্থীকে স্কুলে যোগ না-দেওয়াতে নির্দেশ দেন প্রধানশিক্ষককে। গড়িয়ার বরদাপ্রসাদ হাইস্কুলে চলতি বছরের গোড়ায় বোর্ডের ‘রেকমনডেশন লেটার’ নিয়ে এক প্রার্থী আসেন। কোচবিহারের ওই বাসিন্দার বেতনের অনুমোদন মেলেনি। গরমের ছুটির পর কাউকে কিছু না জানিয়েই তিনি আর আসছেন না। প্রধানশিক্ষক তাঁর সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করতে পারেননি।

Calcutta High Court : সন্তানের ভালো কীসে, সিদ্ধান্ত অভিভাবকেরই
অযোগ্য প্রার্থীর তালিকায় নাম থাকা ভাঙড়ের মতিউর রহমান প্রথমে বোর্ডের সুপারিশে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মঙ্গলচন্দ্র হাইস্কুলে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে করণিকের শূন্যপদ না থাকায় তিনি ২০২০-র ডিসেম্বরে বামনঘাটি স্কুলে যোগ দিয়ে ২০২১-এর নভেম্বর পর্যন্ত কাজ করেন। স্কুল সূত্রে খবর, কাজকর্ম মন্দ করতেন না। এখন সব্জির ব্যবসা করেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘আমাদের দোষটা কোথায়, সরকারি অফিসাররা বাতিল তালিকা পাঠিয়ে আমাদের নিয়োগের সুপারিশ করলেন কেন?’ অন্য দিকে, বিকাশ ভবনের এক কর্তার বক্তব্য, ‘ওঁরা যতই সাফাই গান, বাতিল প্যানেল থেকেই তাঁদের নিয়োগের সুপারিশ হয়েছিল। ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *