কিউআর কোড সমেত ই-চালান ও সরকারি ওয়েবসাইট নকল করে ডিজিটাল কায়দায় বালি পাচার চক্রের জাল শুধু পূর্ব বর্ধমান নয়, তা ছড়িয়ে রয়েছে দুই বর্ধমানের আউশগ্রাম, দুর্গাপুর, আসানসোল এবং বীরভূমেও। অতি সম্প্রতি খণ্ডঘোষ পুলিশের হাতে ধৃত চার জনকে জেরা করে পুলিশের হাতে এসেছে আর এক চাঁইয়ের নাম। আল্লারাখা খান। জানা গিয়েছে, বীরভূমের এই বাসিন্দার অঙ্গুলিহেলনেই চলত এই কারবার। যার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমানের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মীও। আল্লারাখার খোঁজে জোর তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে পুলিশ জানতে পেরেছে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩২ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালি পাচার করেছে এই চক্র।
সরকারি ওয়েবসাইটের আদলে নকল ওয়েবসাইট তৈরি করে রমরমিয়ে চলছিল বালির কারবার। জাল ই-চালান যাতে ধরা না-পড়ে তার জন্য তাতে রাখা হয় কিউআর কোডও। যা স্ক্যান করলেই খুলে যেত সেই নকল ওয়েবসাইট। রীতিমতো প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে যারা এই চক্র চালাচ্ছে তাদের সন্ধানে বহুদিন ধরেই ছিল পুলিশ। এরইমধ্যে সোর্স মারফত খবর আসে জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেনের কাছে। সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে গোপনে অভিযান চালান এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী। খণ্ডঘোষ থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে চার জন। লায়েক আজহারউদ্দিন, মির আবু সিদ্দিক, শেখ মনোজ ওরফে সরাফউদ্দিন ও শেখ মনিরুল হোসেন। আদালত থেকে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর বেশ কিছু তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।
টানা জেরায় ধৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, বীরভূম, দুর্গাপুর, আউশগ্রাম ও আসানসোল এলাকার আরও পাঁচ-ছ’জন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। সামনে এসেছে বীরভূমের বাসিন্দা আল্লারাখা খানের নাম। বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমানের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মীর সঙ্গেও ছিল এর ওঠাবসা। কীভাবে বালির ই-চালান তৈরি করা হয়, কিউআর কোড স্ক্যান করলে কী কী তথ্য আসে- এই সবকিছুই ওই সরকারি কর্মীদের থেকেই জেনেছিল এই চক্র। পুলিশ মনে করছে, আল্লারাখাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে উঠে আসবে আরও অনেক তথ্য। খণ্ডঘোষ থানার ওসি সুব্রত বেরার নেতৃত্বে আল্লারাখার সন্ধান পেতে বীরভূমের বেশ কয়েকটি জায়গায় কার্যত চিরুনিতল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
প্রাথমিক হিসেবে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই চক্র এখনও পর্যন্ত যত পরিমাণ বালি পাচার করেছে তাতে ১৩২ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের। আসানসোল, ঝাড়খণ্ড ও বর্ধমানের চার বড় বালি কারবারিও জড়িত রয়েছে এই চক্রে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘গ্যাংটিকে ধরতে আমরা সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছি। কোনও সরকারি কর্মী, রাজনৈতিক নেতা বা পুলিশেরও কেউ যদি জড়িত থাকে তাদের কাউকেই রেয়াত করা হবে না। বীরভূম এলাকার এক বড় মাথাকে যে কোনও মুহূর্তে গ্রেপ্তার করা হবে। বালির অবৈধ কারবার বন্ধ করাই এখন প্রধান লক্ষ্য আমাদের।’