স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ এবং ওয়েটিং লিস্ট থেকে ‘যোগ্য’দের নিয়োগের দাবিতে রাস্তার আন্দোলনের সূচনা মোটামুটি সাড়ে তিন বছর আগে। ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের আগে সে আন্দোলনের জেরে চাকরিও পেয়েছিলেন অনেকে। তবে সে ক্ষেত্রেও যোগ্যদের টপকে আন্দোলনের চেনামুখদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সে অভিযোগে একপ্রকার সিলমোহর পড়ল বৃহস্পতিবার। এ দিন স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নিজেদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, ২০১৬-র পরীক্ষার ভিত্তিতে নবম-দশমে শিক্ষকতার নিয়োগপত্র পাওয়া ১৮৩ জনের ক্ষেত্রে ‘ভুল সুপারিশ’ করা হয়েছিল। আর এই ১৮৩ জনের তালিকাতেই রয়েছে ২০১৯-এর আন্দোলনের প্রথম সারির তিন মুখ–‘এসএসসি যুব-ছাত্র অধিকার মঞ্চ’র তৎকালীন সভাপতি ইনসান আলি, কোষাধ্যক্ষ পূর্বিতা রায় এবং ইলোরা হক। সে সময়ের আন্দোলনকারী আরও চার জনের নামও রয়েছে বৃহস্পতিবারের তালিকায়।
এসএসসি সূত্রে খবর, যথাক্রমে ইতিহাস ও বাংলার শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ইনসান ও ইলোরার নিয়োগের সুপারিশপত্র ইতিমধ্যেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ দিন প্রকাশিত তালিকার বাকিদের ক্ষেত্রেও একই সম্ভাবনা। কলকাতার মেয়ো রোডে ২০১৯-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ২৯ দিন ধরে অবস্থান-অনশনে সামিল হয়েছিলেন ইনসান, পূর্বিতারা। এঁরা সবাই ২০১৬-য় এসএসসি’র নবম-দশমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তার পর ইন্টারভিউও হয়। কিন্তু নিয়োগ হয়নি। প্রথম দফায় ইনসানদের আন্দোলনের পর নবম-দশমে এসএসসি’র ওয়েটিং লিস্টে থাকা চার হাজার প্রার্থীর মধ্যে দেড় হাজারের কিছু বেশি প্রার্থী শিক্ষকতায় যোগ দেন। তখনই চাকরি পান ইনসানরা।
সে সময়ে এসএসসি’র ব্যাখ্যা ছিল, এই নিয়োগের পিছনে আন্দোলনের চাপ বা জালিয়াতি নেই। অনেকে সুযোগ পেয়েও প্রথম দিকের কাউন্সেলিংয়ে চাকরিতে যোগ না-দেওয়ায় এবং কিছু পদের অদলবদলের জেরে এঁদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে আন্দোলন-মঞ্চের নেতারা চাকরি পেলেও বাকিদের কপালে চাকরি জোটেনি। ফলে আন্দোলনও আজও অব্যাহত। কখনও মেয়ো রোড, কখনও সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক, সবশেষে ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বসে রয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। বৃহস্পতিবার সে আন্দোলন ৬২৭ দিনে পড়েছে।
‘যুব-ছাত্র অধিকার মঞ্চ’র বর্তমান সম্পাদক প্রকাশ ঘোষের দাবি, ‘২০১৯-এ সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্তার সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আমাদের অবস্থানমঞ্চে এসে নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তার পরেও সাড়ে তিন বছর অতিক্রান্ত। যোগ্যরা এখনও রাস্তায় বসে। তৎকালীন আন্দোলনকারীদের তরফে পাঁচ জনকে সরকারের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সুরাহার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁদেরই ঘুরপথে নিয়োগপত্র দিয়ে আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করেছিল প্রশাসন। ওই নেতাদের র্যাঙ্ক ওয়েটিং লিস্টে অনেক পিছনে থাকা সত্ত্বেও তাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন। আন্দোলন থেকে সরেও গিয়েছিলেন।’ শেষে চাকরিতে কোপ পড়লই।