Calcutta University : তালা ঝুলল ক্যান্টিনে, কলকাতায় অতীত রাখালদা – calcutta university nostalgic canteen of rakhal da closed former student recollected the memories


জয় সাহা
আধখানা ডিমের ডেভিল, এক কাপ চা, উদ্দাম যৌবন আর অনন্ত আড্ডা৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাব্দীপ্রাচীন আশুতোষ বিল্ডিংয়ের একতলায় রাখালদার ক্যান্টিন মানে কয়েক প্রজন্ম ধরে এমনই নস্ট্যালজিয়া৷ সেখানকার জিভেগজা আর হাফহাতা শার্ট-ধুতির রাখালদার নরম-গরম ধমকের কথায় আজও স্মৃতির পাতা হাতড়ান পক্ককেশ বহু মানুষ৷ রাখালদা চলে গিয়েছেন, দেড় দশকের কিছু কম সময় আগে। তারপর সে দিন পর্যন্তও তবু টিকে ছিল শ্বেতপাথরের টেবিল, কোণ ভাঙা কাপ-ডিশগুলো। কিন্তু এখন তালা। রাখালদার ক্যান্টিনের তালা আর খুলবে না। সেই ঘরে চলবে অন্য কোনও কাজ। বদলে উল্টো দিকে তৈরি হওয়া হালফিলের ক্যান্টিনে পাওয়া যাচ্ছে চাউমিন-চিলি চিকেন। রাখালদার ভেজিটেবল চপের পোড়া গন্ধে আর জমবে না প্রেম-আড্ডা-তর্ক।

Biryani Shop : বারাসতে ১ টাকায় বিরিয়ানি থেকে মাছ-ভাতের ক্যান্টিন, কী ভাবে সম্ভব? জানুন
প্রেসিডেন্সির ‘আইকনিক’ প্রমোদদার ক্যান্টিন উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আগেই। কলেজ স্ট্রিটের সঙ্গে চার দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করে সেই ক্যান্টিনের প্রমোদ সাঁই ফিরে গিয়েছেন কটকে, নিজের গ্রামে। যাদবপুরের মিলনদার ক্যান্টিনের মিলনদাও মারা গিয়েছেন বছরকয়েক হলো। এখন ক্যান্টিন পরিচালনা করেন তাঁর স্ত্রী-সন্তানরা। আর এ বার বইপাড়ায় রাখালদার ক্যান্টিনের ঝাঁপ বন্ধ হওয়ায় মন খারাপ অনেকের।

Momo: লকডাউনে চাকরিহারা, ঠেলাগাড়িতে মোমোর ব্যবসা শুরু করা তরুণীর রোজগার সরকারি চাকুরেদের থেকেও বেশি!
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক চিন্ময় গুহ একে ‘এন্ড অফ হিস্ট্রি’ বলে চিহ্নিত করছেন। ক্যান্টিনের কথায় সত্তরের দশকের উত্তাল রাজনৈতিক সময়ের খণ্ডচিত্র ভেসে ওঠে চিন্ময়ের সামনে। চিন্ময়ের কথায়, ‘বুদ্ধিবৃত্তি ও ভাবনা আদানপ্রদানের আঁতুড়ঘর বলতে যা বোঝায়, আমার কাছে রাখালদার ক্যান্টিন সেটাই। সেখানকার খাবার, তার মান, পরিবেশ আলাদা করে কোনও গুরুত্ব রাখে না। ক্যান্টিনটা দশকের পর দশক ধরে যুবা মনের মিলনক্ষেত্রই হয়ে উঠেছিল।’ যদিও গত কয়েক দশকে ক্যান্টিন পরিচালনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। চাউমিনের সঙ্গে টক্করে এঁটে উঠছিল না ভাত-ডাল, চপ, লাল চা। পুঁজিরও অভাব ছিল কর্মীদের কাছে। আবার অনেক সময়ে চক্রান্তের কথাও সামনে এসেছে। জল বন্ধ করে, জ্বালানির কৃত্রিম অভাব তৈরি করে কণ্ঠরোধের অভিযোগ উঠেছে। ২০০৮-এ রাখালদা ওরফে রাখাল চন্দ্র ঘোষ মারা যাওয়ার পরে বহুবার ক্যান্টিন বন্ধ করেও পড়ুয়া-প্রাক্তনীদের চাপের মুখে তা ফের খুলেছে। এ বার আর তা হওয়ার নয়। যে দু’চারজন পুরোনো ক্যান্টিন কর্মী আছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়েরই নানা বিভাগে কর্মরত।

Bisva Bharati University : ছাত্র আন্দোলনে উসকানির অভিযোগ, অধ্যাপককে শোকজ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস থেকে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখে ফিরে এসেছে রাখালদার স্মৃতি। রাখাল অসুস্থ খবর পেয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব সাংবাদিকদের ডেকে উদ্বেগও প্রকাশ করেছিলেন। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, সুব্রত মুখোপাধ্যায় থেকে রাজনীতির তারকারদের সঙ্গে রাখলদার সুসম্পর্কের গল্পগুলো আজও টাটকা। একদা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, এখন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ রাখালদার সম্পর্কে বলতে থাকেন অনর্গল। তাঁর কথায়, ‘আশির দশকে যখন অ-কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে জ্যোতি বসু কনফারেন্স ডাকলেন, তখন কংগ্রেসিদের আক্রমণে আমি মারাই যেতাম। যদি না বুদ্ধি করে রাখালদা আমাকে পালাতে সাহায্য করতেন।’

Sabyasachi Aindrila : ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচীর বিয়ের পরিকল্পনা সারা ছিল, কী জানিয়েছেন অভিনেত্রীর বাবা-মা
রাখালদা-প্রমোদদারা ব্যবসা করতে এসে কখন যে ক্যাম্পাসেরই একজন হয়ে উঠেছিলেন, কেউ জানে না। ছাত্র-শিক্ষক-প্রাক্তনী থেকে ক্যাম্পাসের সকলের সঙ্গে এঁদের এতটাই নাড়ির টান যে ১৯৯৯ সালে কটক যখন ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত, তখন প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারা নিজেদের উদ্যোগে প্রমোদদার জন্য সাহায্য পৌঁছে দিয়েছিলেন। ২০১৭-য় যখন প্রমোদের ক্যান্টিন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, তখন ক্যাম্পাসে রীতিমতো আন্দোলনে নামেন প্রাক্তনী ও পড়ুয়ারা।

Mid Day Meal : স্কুলের সামনে জমে নোংরা জল, গেটে তালা ঝুলিয়ে অভিভাবকদের বিক্ষোভ
রাখালদা আর নেই। তাঁর ক্যান্টিনও অতীত। প্রমোদদা আছেন। তিনি বলেন, ‘আজও ঠিক করে ঘুমোতে পারি না। মনে হয়, আমার কাছে কেউ খাবার চাইছে। রাখালদাকে আমি চিনতাম। ওঁর সঙ্গে আমার খানিক প্রতিযোগিতাই ছিল। এখনও কলেজ স্ট্রিটে গেলে স্মৃতিগুলো উস্কে ওঠে। কিন্তু প্রেসিডেন্সিতে আর যাই না।’ কলকাতার উপাচার্য আশিস চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, কোনও মহল থেকে তাঁর কাছে প্রস্তাব গেলে রাখালদার স্মৃতিতে স্মারক বা ছবি লাগানোর কথা ভাবা হতে পারে। কিন্তু তাতে কি ক্যান্টিনের আড্ডাটা ফিরবে? ওটা যে আর নেই…



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *