এক রকম জোর করেই তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উৎখাত করার অভিযোগ উঠেছিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। প্রেসিডেন্সির সেই ‘আইকনিক’ ক্যান্টিন পরিচালক প্রমোদদা ফিরেও গিয়েছেন নিজের গ্রামে কটকে। তারপর কেটে গিয়েছে পাঁচ বছর। কিন্তু এতদিন পরেও প্রমোদ সাঁইয়ের কেনা ক্যান্টিনের নানা জিনিসপত্র, ফ্রিজ, উনুন, বাসন-কোসন – কিছুই প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ (Presidency Authority) তাঁকে ফেরত দেননি বলে অভিযোগ। বিহিত চাইতে বারবার প্রেসিডেন্সির গেটে গিয়েছেন প্রমোদ। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের একাংশের অভদ্র ব্যবহার ছাড়া ক্যাম্পাসে পা রাখার সুযোগটুকু পাননি বলে জানাচ্ছেন তিনি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Calcutta University) নস্ট্যালজিক রাখালদার ক্যান্টিন আর নেই। পাশেই প্রেসিডেন্সি থেকে বিদায় নিয়েছেন প্রমোদদাও। কিন্তু তাঁর জিনিসপত্র কেন এ ভাবে আটকে রাখা হলো, তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে-বাইরে শুরু হয়েছে চর্চা। প্রাক্তনী, পড়ুয়া থেকে শুরু করে বেশ ক’জন অধ্যাপকও এর প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু তারপরেও বিশ্ববিদ্যালয় (Calcutta University) কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। তাঁরা একেবারেই নীরব। এক কর্তা জানান, অভিযোগ তাঁদের কাছেও পৌঁছেছে। কিন্তু প্রমোদের ক্যান্টিনের জিনিসপত্র সম্ভবত অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “প্রমোদদাকে নিয়ে কিছু ছাত্র বা প্রাক্তনীর নস্ট্যালজিয়া থাকতেই পারে। কিন্তু তিনি প্রেসিডেন্সিতে ৪০ বছর ক্যান্টিন চালিয়ে অনেক কিছু পেয়েছেন। তাই আর তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে কোনও কিছু চাওয়ার নৈতিক অধিকার আছে কি?”
উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়াকে ফোন করা হলেও তা দীর্ঘক্ষণ সুইচড অফ থাকায় এ প্রসঙ্গে কথা বলা যায়নি। রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনারকে এসএমএস (SMS) ও ফোন করা হলে তিনিও জবাব দেননি।
প্রমোদ জানাচ্ছেন, তাঁর পাঁচটি ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, তিনটি হাই পাওয়ার গ্যাস ওভেন, হাঁড়ি-কড়াই-প্লেট-কাপ-ডিশ মিলিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার জিনিস আটকে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন তিনি কর্মহীন। ওই জিনিসপত্রগুলি পেলে নতুন করে কিছু শুরু করতে পারতেন। বা সেগুলিকে বিক্রি করে বার্ধক্যের জন্য অর্থের সংস্থান করতে পারতেন। কিন্তু সে সবের রাস্তাই আপাতত বন্ধ। প্রমোদের কথায়, “৪০ বছর কাজ করে আমার মনে হতো প্রেসিডেন্সিটাই আমার সব কিছু। কিন্তু এখন জিনিস চাইতে গেলে ক্যাম্পাসের গেট থেকে কুকুর-বেড়ালের মতো তাড়িয়ে দেওয়া হয়।” তিনি ঠিক করেছেন, আগামী ২০ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতৃ দিবসে প্রাক্তনীদের কাছে যাবেন। এ প্রসঙ্গে প্রাক্তনী সংসদের তরফে বিভাস চৌধুরী বলেন, “একজন বৃদ্ধ দরিদ্র ক্যান্টিন পরিচালকের সঙ্গে এমন ব্যবহার ও বঞ্চনা সত্যিই মেনে নেওয়া যায় না।” পূর্বতন প্রেসিডেন্সি কলেজের (Presidency Authority) প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়ের আবেদন, “প্রমোদ আমাদেরই একজন। আমি করজোড়ে কর্তৃপক্ষকে বলব আপনারা ওঁর জিনিস ফিরিয়ে দিন।”
প্রতিবাদে মুখর ছাত্রছাত্রীরাও। ছাত্র সংগঠন আইসির আহ্বায়ক অহন কর্মকারের বক্তব্য, “কর্তৃপক্ষ এতটাই অমানবিক যে প্রেসিডেন্সির সেন্টিমেন্টটাই তাঁরা বোঝেন না।” ছাত্র সংগঠন সংঘর্ষের তরফে অনমিত্র দাস বলেন, “একই রকম প্রতিনিয়ত ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ঘটে চলেছে।”
অন্য দিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Calcutta University) রাখালদার ক্যান্টিনের পুনরুজ্জীবনের দাবিতে সরব প্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছাত্র, শিক্ষক, প্রাক্তনীরা। তাঁদের তরফে প্রাক্তনী দীপিকা দাস বলেন, “আমরা একটি সই সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছি। রাখালদার ক্যান্টিন আমাদের আবেগ। আমরা চাই সেটা আবার খুলুক।” সই সংগ্রহ হলে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিপত্র জমা করা হবে।