Calcutta High Court : বিচার হোক মামলার, জাতি পরিচয়ের এখনও কী দরকার – calcutta high court a citizen filed case raising question why caste identity should disclosed seeking justice


অমিত চক্রবর্তী
আইনের চোখে সবাই সমান। অথচ সেই আদালতেই বিচার চাইতে গেলে জানাতে হয় নিজের জাতি পরিচয়। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও ব্রিটিশ আমলের বিধি মেনে আদালতে বিচার চাইতে গেলে কেন জাতি পরিচয় জানাতে হবে, সেই প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করলেন এক নাগরিক। মামলায় তাঁর বক্তব্য, নিরপেক্ষ বিচারের জন্য আদালতে আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে আবেদনকারীর জাতি পরিচয় লেখার যে অংশ রয়েছে, তা বাদ দেওয়া হোক। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সাড়ে সাত দশক কেটে গেলেও বিচার চাইতে যাওয়া নাগরিকের কাছে জাতি পরিচয় চাওয়ার এই ধারা দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করা হয়েছে মামলায়। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এ সপ্তাহেই মামলাটির শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

DA News : হল না শুনানি, ফের সুপ্রিম কোর্টে পিছল ডিএ মামলা
কলকাতা হাইকোর্টের অ্যাপিলেট সাইড বিধি অনুযায়ী, বিচার চাইতে যাওয়া মামলাকারীকে যে ফর্ম পূরণ করতে হয়, সেখানে নাম-ঠিকানার পাশাপাশি নিজের জাতি পরিচয় জানানো বাধ্যতামূলক। একেই চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করেছেন বিজয় কুমার সিংহল। তাঁর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি গত সপ্তাহে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানান। যার মূল বক্তব্য হলো – জনগণনা বা কোনও চাকরির জন্য নির্দিষ্ট জনজাতির পরিচয়ের প্রয়োজন হলে তা জানানোর যৌক্তিকতা তবু থাকতে পারে। কিন্তু বিচার চাইতে যাওয়া কোনও নাগরিককে কেন নিজের জাতি পরিচয় জানাতে হবে আদালতকে?

Anubrata Mondal : ED-র মামলা খারিজের দাবিতে হাইকোর্টে অনুব্রত, মিলবে স্বস্তি?
বিজয়ের মামলার এই প্রশ্ন তুলছেন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়ও। মামলা প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘এমন একটা বিধি আছে, সেটাই আমার জানা ছিল না। আদালতে গেলে কাউকে নিজের জাতি পরিচয় জানাতে হবে কেন! আদালতের কাছে আমারও আবেদন, এই বিধি যেন বদল করা হয়।’ দলিত আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক শরদিন্দু উদ্দীপনের কথায়, ‘আমরাও বারবার বিষয়টি উত্থাপন করছি। বিচার ব্যবস্থার সকলকে সমান চোখে দেখার কথা। বিচার চাওয়ার ক্ষেত্রে তো জাতি, ধর্ম লিঙ্গের কোনও স্থান নেই!’ রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র অবশ্য বলেন, ‘এই নিয়মটা কেন হয়েছিল, সেটা হয়তো এখন নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে মামলাকারী কোন জাতি, আজও যদি সেটা ফর্মে জানাতে হয় এবং কেউ তাকে সমর্থন করেন, তা হলে তাঁদেরও কিছু যুক্তি থাকবে। এই মামলাটা দেখতে হবে।’

DA News: DA নিয়ে আদালত অবমাননা মামলা, হাইকোর্টে শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি
জয়ন্ত যা-ই বলুন, বিজয়ের মামলায় কিন্তু দাবি করা হয়েছে, এটা নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার হরণের আওতায় পড়ে। হাইকোর্টের ওই ফর্ম থেকে জাতি পরিচয়ের অংশ বাদ দেওয়ার জন্য আগে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় এ বার দায়ের হলো মামলা। দেশের চার্টার্ড হাইকোর্টগুলির অন্যতম হলো কলকাতা হাইকোর্ট। শুধুমাত্র চার্টার্ড হাইকোর্টেই মামলার ক্ষেত্রে অ্যাপিলেট ও অরিজিনাল সাইডের বিভাজন রয়েছে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। এই বিধি অনুযায়ী, ব্রিটিশ আমলে তৎকালীন শাসকদের মূল অফিস-কাছারি বা কর্তাব্যক্তিদের বাসস্থান কলকাতার যে এলাকায় ছিল (মূলত ডালহৌসি ও পার্ক স্ট্রিটকে কেন্দ্র করে মধ্য কলকাতার একাংশ), সেই অঞ্চলের মামলা হতো অরিজিনাল সাইড হিসাবে। বাকি গোটা রাজ্যের মামলার আবেদন জমা পড়ত অ্যাপিলেট সাইড হিসাবে। এখনও সেই বিধি চলে আসছে।

BJP : মামলা : বই ছাপিয়ে জানাতে চাইছেন না সুকান্ত-দিলীপরা
আইনজীবীদের একাংশের ব্যাখ্যা, পরাধীন ভারতে ভারতীয়দের প্রতি ব্রিটিশদের ‘নেটিভ’ দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে যে বিধি হয়েছিল, তা এখনও চালু থাকাটা লজ্জাজনক। মামলাকারীর বক্তব্য, জনগণনা বা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে জাতিগত পরিচয় উল্লেখ করা যেতে পারে। কিন্তু বিচারব্যবস্থার দরজাতেও যদি জাতি-পরিচয় উল্লেখ করতে হয়, তা হলে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে দাঁড়িয়ে ভারতের জাতিভেদের ঊর্ধ্বে ওঠার প্রচেষ্টাই ধাক্কা খায়। সাংবিধানিক অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার জন্য আদালতে আর্জি জানানো হয়েছে বিজয়ের মামলায়। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যদি এমন কোনও মামলা হয়, যেখানে জাতিগত বিষয়েই বিচার চাওয়া হচ্ছে, সেখানে এই পরিচয় উল্লেখ করা যেতে পারে। বাকি ক্ষেত্রে এই বিধি চলবে কেন?



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *