অভিষেকেই গনসালো রামোসের হ্যাটট্রিক, বেঞ্চে বসে দেখলেন রোনাল্ডো, সুইসদের উড়িয়ে শেষ আটে পর্তুগাল


সব্যসাচী বাগচী 

পর্তুগাল: ৬ (‘১৭, ‘৫১ , ‘৬৭ গনসালো রামোস, ‘৩৩ পেপে)

সুইৎজারল্যান্ড: ১ (‘৫৮ ম্যানুয়েল আকাঞ্জি) 

একটা সময় মনে হচ্ছিল হেডলাইন এমন হতে পারে। ‘রোনাল্ডোকে বেঞ্চে বসিয়ে গনসালো রামোসের উথান ঘটালেন ফেরান্দো স্যান্টোস’। কিংবা ‘ অভিষেকে হ্যাট্রটিক করে নজর কাড়লেন গনসালো রামোস, শেষ আটে রোনাল্ডহীন পর্তুগাল’। তবে কোনও হেডলাইনই কাজে লাগল না। কারণ দলের অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে মাঠে নামিয়ে তাঁর ক্ষততে কিছুটা প্রলেপ দিলেন পর্তুগালের কোচ। ‘সি আর সেভেন’-এর ক্ষরণ কমেছে কিনা জানা নেই। তবে তাঁকে ছাড়া দল, বিশেষ করে কাপ যুদ্ধের অভিষেক ম্যাচে ২১ বছরের তরুণ স্ট্রাইকার যে মেজাজে হ্যাটট্রিক করলেন, সেটা নিয়ে কিন্তু অনেকদিন আলোচনা চলবে। আর তাই তো বরাবর পর্তুগালকে বেগ দিয়ে আসা সুইৎজারল্যান্ড উড়ে গেল। সুইসদের ৬-১ ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেল সেলেকাওরা। শেষ আটে তাদের প্রতিপক্ষ লড়াই করে স্পেনকে হারিয়ে দেওয়া মরক্কো। 

৬৮ বছরের ফেরান্দো স্যান্টোস শেষ পর্যন্ত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন। রোনাল্ডোকে বেঞ্চে বসিয়ে। তাও আবার নক আউট ম্যাচে। সুইৎজারল্যান্ডের মতো বিপক্ষের বিরুদ্ধে। যে দলটা অতীতে পর্তুগালকে যথেষ্ট বেগ দিয়েছে! পর্তুগীজ অধিনায়ককে প্রথম একাদশে না রাখার পিছনে উঠে আসছিল দুটি তত্ব। প্রথমত) ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে ঝামেলা করে কাপ যুদ্ধে আসার পর থেকে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন মহাতারকা। এরমধ্যে আবার কোচের সঙ্গে অশান্তি নাকি রোনাল্ডোকে দলে একঘরে করে দিয়েছে! দ্বিতীয়ত) এই কারণটাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ৩৭ বছরের ‘সি আর সেভেন’ পুরো ফিট নন। একেবারেই ফর্মে নেই। ঘানার বিরুদ্ধে প্লে-অ্যাক্টিং করে পেনাল্টি আদায়ের পর, উরুগুয়ের বিরুদ্ধে সতীর্থ ব্রুনো ফার্নান্দেজের গোলে ভাগ বসাতে গিয়েছিলেন! যেটা তাঁর দলের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। আর তাই হয়তো মহাতারকাকে বাদ দিয়ে প্রথম একাদশ গড়েছিলেন ফেরান্দো স্যান্টোস। 

ফেরান্দো স্যান্টোস জানতেন তাঁর তৈরি দল প্রকাশ্যে এলেই সমালোচনার ঝড় বইবে। তবুও তিনি পরোয়া করেননি। জানতেন সোশ্যাল মিডিয়াতে তাঁকে ব্যাপক ট্রোল করবেন রোনাল্ডো অনুরাগীরা। তবুও কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন। আর তাঁর এই ফাটকা দারুণ কাজে দিল। দলের অধিনায়কের জায়গায় সুযোগ পেয়েছিলেন ২১ বছরের তরুণ গনসালো রামোস। তাঁর নাম সামনে আসতেই শুরু হয়ে গেল ফুটবল পন্ডিতদের আলোচনা। ‘রোনাল্ডোর জায়গায় সুযোগ পেয়েছে! ছেলেটার উপর মারাত্মক চাপ থাকবে!’ 

কিন্তু সব চাপকে ২৬ নম্বর জার্সিধারী তরুণ। এই সুইসদের বিরুদ্ধে নামার আগে গনসালোর ম্যাচ টাইম ছিল মাত্র ৩৩ মিনিট। বেনফিকা অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা গনসালো এই প্রথমবার জাতীয় দলের হয়ে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন। আর জোড়া গোল করে প্রথম সুযোগেই বাজিমাত। ১৭ মিনিটে তাঁর গোলেই এগিয়ে যায় পর্তুগাল। থ্রো থেকে বক্সের মধ্যে রামোসকে পাস দেন জোয়াও ফেলিক্স। প্রথম পোস্টে থাকা গোলকিপার ইয়ান সমেরের কিছুই করার ছিল না। কারণ বল পেয়েই একটু টার্ন নিয়ে তাঁর বাঁ পায়ের বুলেট গতির আড়াআড়ি শট ইয়ান সমেরের মাথায় উপর দিয়ে জালে ঢুকে যায়। স্পিডোমিটারের দাবি, গনসালোর শটের গতি ছিল ১২৬ কিলোমিটার! 

প্রথমবার কাপ যুদ্ধের মঞ্চে নেমে এমন পারফর্ম করার জন্য দম থাকা দরকার। সেটা তিনি করে দেখালেন। বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেই। আর তাই তো দলকে এগিয়ে দিতেই যেমন তাঁর কাঁধে সতীর্থরা ঝাঁপিয়ে পড়ল, ঠিক তেমনই দুই হাত আকাশের দিকে ছুড়ে কিছু একটা বোঝাতে চাইলেন ফেরান্দো স্যান্টোস। কারণ তাঁর ‘তুরুপের তাস’ পারফর্ম করতে না পারলে যে, এই বুড়ো বয়সে যাবতীয় দায় দলের কোচকেই নিতে হত। তবে তেমন কিছু হয়নি। চোখ জুড়িয়ে দেওয়া গোল করে পর্তুগালের ইতিহাসে কাপ যুদ্ধের মঞ্চে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হিসেবে নিজের নাম তুলে নিলেন গনসালো। 

প্রথম গোলের সেলিব্রশনের রেশ তখনও কাটেনি। ৩৩ মিনিটে দলের ব্যবধান আরও বাড়িয়ে দিলেন ‘বুড়ো’ পেপে। ব্রুনো ফার্নান্দেজের কর্নার কিকে দুই সুইস ডিফেন্ডারের মাঝখান থেকে লাফিয়ে উঠে হেড নেন পেপে। ২-০ গোলের লিড পায় পর্তুগাল।

৪২ মিনিটে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন রামোস। প্রতি আক্রমণ থেকে মাঝমাঠে বল পেয়ে অনেকটা দৌড়ে বক্সের মধ্যে রামোসের উদ্দেশে বল বাড়ান ফের্নান্দেস। গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি রামোস। তবে তাতে কি! এই রামোসের পা থেকেই এল কিছুক্ষণ পরে গোল। দ্বিতীয়ার্ধে নিজের দ্বিতীয় গোল করলেন রামোস। তখন ম্যাচের বয়স ৫১ মিনিট। বল নিয়ে ডান প্রান্ত ধরে ওঠেন দিয়োগো দালত। তিনি ক্রস রাখেন বক্সে। বাঁ পায়ের টোকায় গোলকিপারের পায়ের তলা দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন রামোস। 

তিন গোল খেয়ে তখন সুইসদের কাঁধ একেবারে ঝুলে গিয়েছে। সেই সুযোগকে ফের কাজে লাগাল পর্তুগাল। এবার গোল করলেন রাফায়েল গুয়েরেরো। বক্সের বাইরে বল পেয়ে গতি বাড়িয়ে বক্সে ঢোকেন তিনি। তারপর বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোল করেন তিনি। এরপর এক গোল শোধ করে সুইসরা। ম্যানুয়েল আকাঞ্জি গোল করেন। তবে এতে লাভ হয়নি। 
 
কারণ সুইসদের মহড়া নিয়ে এবার বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিকও সেরে নিলেন রামোস। ৬৭ মিনিটে এল সেই মুহূর্ত। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করলেন। নিজেদের মধ্যে বল খেলে বক্সের মধ্যে তাঁর দিকে বল বাড়ান ফের্নান্দেস। আগুয়ান গোলকিপারের মাথায় উপর দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন ২১ বছরের ছেলেটা। আর এই গোলের সঙ্গে রামোস হয়ে গেলেন পর্তুগালের চতুর্থ ফুটবলার, যিনি কাপে যুদ্ধের মঞ্চে হ্যাটট্রিক করলেন। তবে রামোসের হ্যাটট্রিক করার অভ্যাস কিন্তু নতুন নয়। এর আগে অনূর্ধ্ব ১৯ ও ২৩ পর্তুগালের হয়ে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। ৯২ মিনিটে ডান পায়ের দুরন্ত গোল রাফায়েল লিয়াওয়ের। ফলে ৬-১ ব্যবধানে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট পর্তুগীজরা। এবার সামনে মরক্কো। 

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *