জেলা স্কুল পরিদর্শক এ দিন কোর্টে জানান, ঢালাও বদলির কারণে জেলার সব স্কুলের অবস্থাই খুব খারাপ। ৬০ শতাংশ শিক্ষক বদলি নিয়ে অন্য জেলায় চলে গিয়েছেন। বহু স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত বজায় রাখা যাচ্ছে না। ঝালদার একটি স্কুলে ১,১৫৩ জন পড়ুয়ার জন্য ২১ জন শিক্ষক ছিলেন। ইতিমধ্যে ৮ জন বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। যা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে আদালত। উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে রাজ্য সরকার এই বদলি নীতি শুরুর পর থেকে শিক্ষকরা যে কোনও ছুতোয় ট্রান্সফার চাইছেন বলে আগেই জানিয়েছিল এই আদালত। বিচারপতির বক্তব্য, বদলি কোনও শিক্ষকের অধিকার হতে পারে না। এটা যদি বিধি মেনে করা না-হয়, তা হলে গ্রামের স্কুলে শিক্ষক পাওয়া যাবে না। শহরের স্কুলের অতিরিক্ত শিক্ষকদের সরকার কেন গ্রামে, যেখানে প্রয়োজন, সেই স্কুলগুলিতে পাঠাবে না – এই প্রশ্নও তোলে হাইকোর্ট।
এরপরেই আদালত নির্দেশ দেয়, পুরুলিয়ার বিদ্যালয় পরিদর্শক গৌতম চন্দ্র মালকে দু’সপ্তাহের মধ্যে জেলার সমস্ত স্কুলের শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতের রিপোর্ট জমা করতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি ২০ জানুয়ারি। ২০২১-এর ২ অগস্ট উৎসশ্রী-র মাধ্যমে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বদলি চালু হয়েছিল। এতে এ পর্যন্ত পঞ্চম থেকে দ্বাদশের ১৯,৮০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার সাধারণ বদলি হয়েছে। অথচ রাজ্যে উচ্চ প্রাথমিকে (পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণি) গত আট বছর কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। নবম-দ্বাদশে শিক্ষক নিয়োগের শেষ বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছিল ২০১৬-য়। যা মেনে নিয়োগ শেষ হয় ২০১৯-এ। সব মিলিয়ে সাধারণ বদলির পর স্কুলগুলিতে বহু পদ ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।
স্কুলশিক্ষা কর্তারা অবশ্য জানান, উৎসশ্রী-র মাধ্যমে পঞ্চম থেকে দ্বাদশের শিক্ষক বদলির নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা চাইলেই বদলির আবেদন জানাতে পারেন না। স্কুলের মোট শিক্ষকের ১০ শতাংশ এক সঙ্গে সাধারণ বদলির আবেদন করতে পারেন। কোনও স্কুলে অন্তত ৫ বছর চাকরি না হলে আবেদন জানানো যায় না। তারপরেও ঝালদার ওই স্কুলে ২১ জনের মধ্যে আটজনের (৩৮ শতাংশ) বদলি কী ভাবে হলো, তার সদুত্তর মেলেনি।