বেশি দিনের কথা নয়, ২০১৬ সালেও কলকাতা (Kolkata) শহরে ২৫টি রুটে ট্রাম (Tram) চলত। উত্তর হোক বা দক্ষিণ– ট্রামের (Tram) জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যেত অফিস যাত্রী থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের। দু’তিন দশক আগেও কলকাতায় ৪০টি রুটে ট্রাম চলাচল করত। এখন ঠেকেছে মাত্র দুটোয়! কিন্তু মাকড়সার জালের মতো এখনও ছড়িয়ে রয়েছে ট্রাম লাইনগুলি (Tram Line)। তাতেই যেন বিপদ ঘাপটি মেরে রয়েছে। ওই লাইনের উপর দিয়ে আদৌ ট্রামের চাকা গড়াবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান পরিবহণ দপ্তর। ধোঁয়াশায় কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) ট্র্যাফিক বিভাগও। সরকারি স্তরে এই টালবাহানার জেরে বিপদে পড়ছেন দুই চাকার চালকেরা। সম্প্রতি আরজি কর রোডে ট্রাম লাইনে (Tram Line) বাইকের চাকা পিছলে পথের বলি হন ট্র্যাফিক বিভাগেরই এক কনস্টেবল। এর আগেও এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রশ্ন উঠছে, যে সব রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সেই লাইনে আদৌ ট্রাম চলবে, নাকি লাইন তুলে দেওয়া হবে?
শহরে যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) ট্র্যাফিক বিভাগ। ট্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে পুলিশ এবং পরিবহণ দপ্তর বেশ কয়েকবার বৈঠকে বসেছে। কিন্তু লাইন তুলে দেওয়া হবে, নাকি থাকবে? সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, “দুর্ঘটনা ঘটছে এটা ঠিক। আমাদের তরফে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। যদি ট্রাম লাইন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় কোনও জায়গায়, সেখানে পিচ করে দেওয়া হবে। অথবা ট্রামের চালানোর পরিকল্পনা থাকলে, সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কেন দূষণহীন এমন একটি গণ পরিবহণকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে না? প্রশ্ন ট্রাম যাত্রীদের। পৃথিবীতে প্রায় ৪৫০টি দেশে ট্রামকে আরও কী ভাবে আধুনিক করা যায় তারই চেষ্টা চলছে। আগামী বছর কলকাতার ট্রাম সার্ধশতবর্ষে পড়বে। কিন্তু এ শহরে ট্রাম ধীরে ধীরে আইসিইউ-তে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর স্পষ্ট জবাব, “বন্ধ হয়ে যাওয়া কিছু রুটে অবশ্যই ট্রাম চলবে। হেরিটেজ হিসাবে থাকবে। তবে সব রুটে চলবে না।” তা হলে বাকি লাইনগুলির কী হবে? পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “কলকাতা পুরসভা, পূর্ত দপ্তর এবং ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব।”
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
১) ট্রাম লাইন যেখান দিয়ে গিয়েছে, বাইক বা সাইকেলে করে যাওয়ার সময় প্রথমেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বর্ষায় ট্রাম লাইন সব থেকে বিপজ্জনক। ওই সময়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
২) মোড় ঘোরার সময় অথবা একদিক থেকে অন্যদিকে যাওয়ার সময় রাস্তায় ট্রাম লাইন পড়লে, ৯০ ডিগ্রি কোন করে ক্রস করতে হবে।
৩) কোনও ভাবেই লাইনের সোজাসুজি বাইকের চাকা তোলা যাবে না। ট্রাম লাইনের আশপাশে চলে গেলে, দু’দিকের স্টিলের পাতের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
৪) চার চাকার গাড়িতেও বিপদ রয়েছে। ট্রাম লাইনে যাওয়ার সময় গতি কমাতে হবে। আগের এবং পিছনের গাড়ি থেকে নির্দিষ্ট গুরুত্ব বজায় রাখতে হবে।
ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, বাম আমলের পরিবহণমন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তী, সুভাষ চক্রবর্তী থেকে তৃণমূল সরকারের মদন মিত্র, শুভেন্দু অধিকারী এবং ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) পরিবহণমন্ত্রী থাকাকালীন ট্রাম লাইনের বিপদ এবং রুট গুলিচালু করা বিষয়ে বার বার বলা হয়েছে। কিন্তু কাজ কিছু হয়নি। ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তাদের আলোচনায় ডাকা হলে তাঁরা কোনও দিন আসেননি। ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “বেলগাছিয়া বা শিয়ালদহ ব্রিজে ইচ্ছাকৃত ভাবে ট্রাম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই ব্রিজ দিয়ে শয়ে শয়ে বালি-পাথর বোঝাই লরি যায়। ভার বহণক্ষমতা তা হলে রয়েছে। ট্রাম লাইন দিয়ে কী ভাবে যাতায়াত করতে হয়, সেই সচেতনতা প্রচার যদি প্রশাসন করত, তা হলে এত দুর্ঘটনা হতো না।”
ই-বাস চালানোয় রাজ্য সরকার উদ্যোগী হলে কেন দূষহীন যান ট্রাম নয়? পরিবেশমন্ত্রী মানস ভুইয়া বলেন, “ট্রামে দূষণ হয় না। তবে চলবে কি না তা পরিবহণ দপ্তর সিদ্ধান্ত নেবেন। মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) বক্তব্যের এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব রয়েছে। তবে যে ভাবে জনসংখ্যা এবং রাস্তায় গাড়ির চাপ বাড়ছে, সেখানে ট্রাম নিয়ে পরিকল্পনা দরকার।”