এই সময়, শান্তিনিকেতন: বিশ্বভারতীতে এ বার অনিশ্চয়তার মুখে ঐতিহ্যবাহী পৌষ উৎসব! উপাচার্যকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখার তীব্র নিন্দা করে তেমনই ইঙ্গিত মিলল কর্তৃপক্ষের কথায়। তবে এ দিন সব কিছুকেই ছাপিয়ে যায় বিশ্বভারতীর নিজস্ব ওয়েবসাইটে উপাচার্যের বার্তালাপে। যেখানে শিক্ষা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ছাত্র আন্দোলনের জেরে আপাতত উপাচার্য গৃহবন্দি। তার প্রতিকার চেয়ে বোলপুর আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বিশ্বভারতী। এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে উপাচার্যকে গৃহবন্দি করে রাখার ঘটনায় একযোগে তীব্র নিন্দা জানান বিশ্বভারতীর সমস্ত ভবনের অধ্যক্ষ ও আধিকারিকরা। যদিও আন্দোলনকারীদের দাবি, বিচারাধীন বিষয়ে প্রেস মিট করা আইনবিরুদ্ধ কাজ। এ দিন আচমকাই বিশ্বভারতীর নিজস্ব ওয়েবসাইটে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন উপাচার্য। সেখানে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে তিনি একটি বিবৃতি দেন। তাতে লেখেন, ‘বড় রকম টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতিকদের মাতব্বরি শিক্ষা ব্যবস্থাকে রসাতলে পাঠিয়েছে। দেশের ভবিষ্যতে এর কী প্রভাব পড়বে, তার কোনও হুঁশ নেই। স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষ, এমনকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোনয়ন প্রক্রিয়াও রাজনীতিকদের হস্তক্ষেপমুক্ত নয়৷ এই সকলে পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় রকম টাকা-পয়সার কারবার চলে।’ আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, ‘একজন শিক্ষা প্রশাসক হিসাবে আমি বলতে পারি, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্খলন-পতন কথা আমি যদি অকপটে বলি, তাহলে আমাকে প্রাণে না মেরে ফেললেও আমাকে এক ঘরে করে দেওয়া হবে৷ তার জন্য আমি প্রস্তুত।’
Visva Bharati University : ছাত্র আন্দোলনের জের, স্থগিত বিশ্বভারতীর সমাবর্তন উৎসবউপাচার্য আরও লিখেছেন, ‘আত্মসমীক্ষা ও অন্তদর্শন ছাড়া আমরা বুঝতে পারব না, কেন ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে শিক্ষার উচ্চ সোপানে আরোহন করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং কেন আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন।’ ইতিমধ্যে
বিশ্বভারতীর উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে পূর্বপল্লির পূর্বিতা বাসভবনের সামনে ২০ দিন ধরে ধর্না মঞ্চ তৈরি করে চলছে ছাত্র বিক্ষোভ৷ যার জেরে গৃহবন্দি উপাচার্য। এ দিন, বিশ্বভারতীর উদ্ভুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কর্মসচিব অশোক মাহাতোর তত্ত্বাবধানে বৈঠক করে কর্তৃপক্ষ। এর পর সাংবাদিক বৈঠক করে ছাত্র আন্দোলনের নামে উপাচার্যের উপর হেনস্থা, গৃহবন্দি করে রাখার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এমনকী, উপাচার্য গৃহবন্দি থাকলে পৌষ উৎসব না-হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করে বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতীর আধিকারিক অমিত হাজরা বলেন, ‘উপাচার্য গৃহবন্দি থাকার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম দারুণ ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’
Visva Bharati University Protest: উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শান্তিনিকেতনে অভিনব প্রতিবাদ, মশাল নিয়ে সংগীত মিছিল পড়ুয়াদের
পৌষ উৎসব অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হলে হবে। কারণ ইতিমধ্যেই ছাত্র আন্দোলনের জেরে বন্ধ হয়েছে সমাবর্তন।’ অর্থাৎ পৌষ উৎসবও বাতিল হতে পারে, এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো, আধিকারিক অমিত হাজরা ও জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা বিশ্বভারতী সামগ্রিক ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি৷ পরিস্থিতি কিভাবে স্বাভাবিক হয়, সেই চেষ্টা করছি। তবে সমাবর্তন স্থগিত করতে হলো৷ পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে পৌষ উৎসব হবে। পৌষমেলা বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। রায় হাতে পেলে আলোচনা করব।’
Visva Bharati University : পুলিশি সহায়তায় বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বাইরে আসার চেষ্টা, গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ল পড়ুয়ারা
সোমবারের প্রেসমিটে উপাচার্যকে ঘেরাওয়ের নিন্দা করে বিশ্বভারতীর তরফে বলা হয়, আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের লিখিত দাবি জানাননি। কিন্তু আন্দোলনকারী সোমনাথ সৌ ও ছাত্রী মীনাক্ষী ভট্টাচার্যরা বলেন, ‘অনেক বার লিখিত আকারে দাবি জানানো হলেও আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হয়নি। তাই আজ আমাদের ধরনায় বসতে হয়েছে।’