প্রসেনজিৎ মালাকার ও বিক্রম দাস: নেহাতই কাকতালীয়? তথ্য-প্রমাণ কোথায়? গোরুপাচারকাণ্ডে দিল্লি যাত্রার আগেই ৭ দিনের পুলিসি হেফাজতে অনুব্রত মণ্ডল। কেন? পুরনো মামলায় গ্রেফতার করা হল কেষ্টকে। আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে ইডি। এমনকী, হাইকোর্টে মামলা করা হতে পারে রাজ্য পুলিসের বিরুদ্ধেও! তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজাও।
গোরুপাচারকাণ্ডে আরও বিপাকে অনুব্রত। আইনি লড়াই আপাতত শেষ। কেষ্টকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র এখন ইডির হাতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আবেদন মঞ্জু করেছে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট। অনুব্রতের আইনজীবী কপিল সিব্বলের যুক্তি যখন খারিজ করে দিল আদালত, তখন ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারল না ইডি! বরং কেষ্ট-র দিল্লি যাত্রা আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হল।
কীভাবে? গতকাল, সোমবার অনব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে বীরভূমের দুবরাজপুর থানায় FIR করেছেন তৃণমূলকর্মী শিবঠাকুর মণ্ডল। এফআইআর-র উল্লেখ, ‘গত বিধানসভা ভোটের আগে আমি অন্য দলের যাওয়ার কথা ভাবি। বিষয়টি জানতে পারেন অনুব্রত মণ্ডল। সেবছর মে মাসের প্রথমদিকে আমাকে দুবরাজপুর পার্টি অফিসে ডেকে পাঠান। পার্টি অফিসে গেলে অনুব্রতের নিরাপত্তারক্ষীকে আমাকে গালিগালাজ করেন। দল ছাড়তে বারণ করেন। প্রতিবাদ করলেন, আমাকে গালিগালাজ করেন, চড়-থাপ্পর মারেন এবং প্রাণে মেরে ফেলার জন্য আমার গলা টিপে ধরেন’।
এদিকে অনুব্রতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর তৎপর হয়ে ওঠে পুলিস। স্রেফ গ্রেফতারি নয়, এদিন সকালে দুবরাজপুর আদালতে পেশ করা হয় অভিযুক্তকে। সঙ্গে ১৪ দিন হেফাজতের আর্জি। তৃণমূলকর্মীকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে অনুব্রতকে ৭ দিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিলেন বিচারক। শুধু তাই নয়, আদালতের জামিনের আবেদনই করলেন না কেষ্টর আইনজীবী!
অনুব্রতের দিল্লি যাত্রা আটকাতেই কি অতিসক্রিয় পুলিস? বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের দাবি, ‘পুলিসের অতিসক্রিয় হয়ে অনুব্রতকে বাঁচানোর এই তৎপরতা আবার প্রমাণ করল যে, ডাকাততে বাঁচাতে যেনতেন প্রকারে ছিঁচকে চোরের তিহার জেলে যাওয়া আটকাতে চাইছে প্রশাসন’। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘তৃণমূল কর্মীকে খুনের প্রচেষ্টা হয়েছে একবছর আগে। এক বছরের মধ্যে অভিযোগ হয়নি কেন? কার ভয়ে অভিযোগ হয়নি? পুলিসের ভয়ে নাকি অনুব্রতের ভয়ে? নাকি এখন অনুব্রত ও তাঁর মালকিন দিল্লি জেলের ভয় পাচ্ছেন বলে হয়কে নয় করে দিল’।
আরও পড়ুন: Jitendra Tiwari: তাড়িয়ে দিতে চাইছে তৃণমূল; এখানেই মরব, সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব জিতেন্দ্র তিওয়ারি
বিরোধীদের অভিযোগে আমল নিতে নারাজ তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘বাংলার কোনও ব্য়ক্তিকে, বাংলার কোনও ঘটনার প্রেক্ষিতে যদি দিল্লিতে গিয়ে আবেদন করে, দিল্লির কোর্টের প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট নিয়ে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার কথা রাজনৈতিকভাবে হুঙ্কার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে বাংলার কোনও কোর্টে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট নিয়ে গ্রেফতারের আইনি প্রক্রিয়াও খুবই স্বাভাবিক। এটা সম্পূর্ণভাবে আইনসিদ্ধ। আমি মনে করি, দলের রাজনৈতিকভাবে কোনও মন্তব্য করার অবকাশই নেই’।
এর আগে, গোরুপাচারকাণ্ডে আসানসোলে গিয়ে অনুব্রতকে জেরা করেছিলেন ইডি-র আধিকারিকরা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, জেরায় কার্যত কোনও প্রশ্নেরই উত্তর দেননি কেষ্ট। শুধু ঘাড় নেড়েছেন! শেষপর্যন্ত গ্রেফতার করা হয় কেষ্টকে।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)