জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: অনেকেই ভেবেছিল, এ যেন বামন হয়ে চাঁদে হাত দিতে চাওয়া! সমস্ত চাপা ব্যঙ্গ চোখা চাউনি উপেক্ষা করেই কিন্তু কাতার নিজেদের দেশে আয়োজন করেছে ২০২২-এর ফিফা বিশ্বকাপ। এবং সাফল্যের সঙ্গেই করেছে। বহু বিতর্ক তাদের তাড়া করে ফিরেছে, কিন্তু মেসির মতোই নিজের লক্ষ্য থেকে সরেনি কাতার।
আরও পড়ুন: FIFA World Cup Final 2022: ম্যাচ জেতার পরে গোলপোস্টের জাল কেন কেটে পুড়িয়ে দিলেন মেসিরা?
আরবের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ কাতার। নাগরিকের সংখ্যা চার লাখেরও কম! এহেন এক দেশ সফলভাবে শেষ করল ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’, ক্রীড়াজগতের অন্যতম বড় আয়োজন– বিশ্বকাপ ফুটবল! নিউইয়র্ক টাইমস-এর মতো কাগজেও লেখা হয়েছে– ‘নিজেদের প্রত্যাশিত বিশ্বকাপ পেল কাতার’! ভুল কিছু লেখেনি। সত্যিই তো বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে কাতার! কীভাবে? আসুন, দেখে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: কাপ মেসির হাতে, এদিকে গ্যালারির সুন্দরী ক্রমশ উন্মুক্ত করছেন নিজের স্তনভার…
শুরুটা হয়েছিল সেই ২০১০ সালে! ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করবে কাতার! ২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর জুরিখে ফিফার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার এই বিস্ময়কর ঘোষণা করেছিলেন! শুধু তখনই নয়, এর পরের বছরগুলিতেও কখনো কখনো বিষয়টি কল্পনাতীত বলে মনে হয়েছিল অন্যান্য দেশের। কাতার পারবে?
কেন এই প্রশ্ন উঠেছিল?
বিশ্বকাপের মতো এত বড় এক আসর আয়োজনের জন্য কাতার সেই মুহূর্তে বেশ অনুপযুক্ত একটি দেশই মনে হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের চোখে। খেলার মাঠের অভাব, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের পরিকাঠামোগত পিছুটান, এর আগে এই ধরনের বড় কোনও খেলার আসর আয়োজন করার ঐতিহ্য না থাকা– সব মিলিয়ে বিষয়টি কাতারের পক্ষে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছিল। এমনকি, কখনও সখনও ফিফার তরফেও এই ধরনের প্রশ্ন উঠছিল। কিন্তু এসবে কান দেয়নি কাতার। শুধু কি এই? আয়োজক দেশ হতে গিয়ে তারা ঘুষ কেলেঙ্কারিতেও জড়িয়েছে বলে অপবাদ রটছিল। পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিশ্বকাপ ঘিরে কাতারে ২০ হাজার কোটি ডলারের নির্মাণ-প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু ও আহত হওয়ার অভিযোগও মুখ পুড়িয়েছে কাতারের। ছিল মদ্যপান ও এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর সমর্থনে হাতে ব্যান্ড পরার নিষেধ। সবটা নিয়েই তীব্র কাতার-বিরোধী কাতার-বিদ্বেষী হাওয়া।
সেই হাওয়াকে ঘুরিয়ে দিতে কী করেছে কাতার?
প্রাথমিক ভাবে প্রচুর অর্থব্যয় করেছে। এক মাসের ফুটবল আসর বসানোর জন্য পুরো দেশকে সম্পূর্ণ নতুন করে যেন গড়ে তুলেছে তারা। শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেছে। প্রচুর অর্থ ও জীবনের বিনিময়ে সাতটি নতুন খেলার মাঠ নির্মাণ করেছে। গড়ে তুলেছে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পরিকাঠামোও। এর পাশাপাশি শত শত কোটি ডলারে কিনে নিয়েছে ফুটবল ক্লাব ও ক্রীড়াস্বত্ব। উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজে লাগানো হয়েছে ক্রীড়াজগৎ-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের, তারকাদেরও।
ফল কী ফলেছে?
এর কী ফল হয়েছে, সেটা একমাস ধরে দেখা গিয়েছে। অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে ম্যাচের পর ম্যাচ আয়োজন করেছে কাতার। আর এই গোটা বিষয়টা যেন পূর্ণ হয়ে উঠেছে ফাইনালের দিনে, ১৮ ডিসেম্বরে। ১০০ কোটি ডলারের লুসেল স্টেডিয়ামে ফাইনাল। শুধু আর্জেন্টিনা সমর্থকই ৪০ হাজার! মাঠে মুখোমুখি ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা। টাই-ব্রেকার পর্যন্ত গড়াল খেলা। মাঠে আগুন, স্টেডিয়ামেও যেন আগুন! সমস্তটাই খুব সুন্দর ভাবে ‘হ্যান্ডেল’ করেছে কাতার। আর মাঠের দুই সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গেও তো নিজের নাম জুড়ে নিয়েছে কাতার। এই দুই প্রতিভাকেই একহিসেবে নিজেদের বলে দাবি করতে পারে তারা। আসলে এই মুহূর্তে দুজনই খেলেন কাতারেরই মালিকানাধীন ফরাসি ক্লাব প্যারিস সাঁজাঁয়। ব্যস! আর কী? এর পর কে বলবে, কাতার বিশ্বকাপ পায়নি?
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)