Aindrila Sharma, Sabyasachi Chowdhury, জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: নভেম্বর ২০, টানা ২০ দিনের লড়াই শেষে তারাদের দেশে চলে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। চোখের জলে সেদিন তাঁকে বিদায় জানিয়েছিলেন তাঁর পরিবার থেকে শুরু করে গোটা টলিউড, তাঁর অনুরাগীরা। মাত্র ১৮ বছর বয়স থেকে শুরু হয়েছিল যুদ্ধ। একবার নয়, দু-দুবার মারণ রোগের ছোবল থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে মৃত্যুকে হারিয়েছে সে। তবে শেষবার আর হাসিমুখে ফিরল না প্রাণোচ্ছ্বল মেয়েটি, যাঁর মুখে সবসময় লেগে থাকত হালকা হাসি, যাঁর অদম্য জেদের সামনে হার মেনেছিল মারণরোগও। অবশেষে যার ফিরে আসার কথা ছিল সে চলে গেল, থেকে গেল তার স্পর্শ। সব প্রার্থনা মিথ্যে করে মাত্র ২৪ বছর বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা।
১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেই থেকেই হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। ফিরে আসার অদম্য চেষ্টা করেছেন। তবে সেই সব চেষ্টা, বিগত কয়েকদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রার্থনা সব ব্যর্থ করে চোখের জলে বিদায় জানান ঐন্দ্রিলা। যাওয়ার সময় তাঁকে লিপস্টিকে, ব্লাশারে সাজিয়ে দিয়েছিলেন দিদি ঐশ্বর্য, তিনি জানতেন বোনু যে বড় ভালোবাসে সাজতে। মা শিখা শর্মা অনর্গল বলে যাচ্ছিলেন কীভাবে পরিবারকে জুড়ে রাখতেন তাঁর আদরের ছোটমেয়ে। কাঁদছিলেন ডাক্তার বাবা। আর শুকনো চোখে নিশ্চুপ ছিলেন ঐন্দ্রিলার কাছের মানুষ সব্যসাচী চৌধুরী।
দ্বিতীয়বার ক্যানসার থেকে শুরু করে ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার পরের ২০ দিন যতটা লড়েছেন ঐন্দ্রিলা ঠিক ততটাই লড়েছেন সব্যসাচী। এক মুহূর্তের জন্য তাঁকে কাছছাড়া করেননি অভিনেতা। এমনকী তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে ঐন্দ্রিলা ফিরবেই। কিন্তু মিলল না সেই হিসেব। যাওয়ার আগে শ্মশানে প্রেমিকার পায়ে চুমু এঁকে তাঁকে বিদায় জানিয়েছিলেন সব্যসাচী। সেই ভিডিয়ো চোখে জল এনেছিল সকলের। তারপরই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিদায় নেন সব্যসাচী। মিডিয়ার সঙ্গেও এই বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি তিনি। একমাস কেটে গেছে, এখনও কাজে ফেরেননি সব্যসাচী। কেমন আছেন তিনি প্রেমিকাকে ছাড়া। এক সংবাদমাধ্যমে অভিনেতা জানিয়েছেন, ‘আমি কিছুটা ঠিক আছি।’
আরও পড়ুন- Trina Saha: ছোটপর্দার অভিনেতারা পঞ্চমশ্রেণীর! ‘অপমানিত’ তৃণা উগরে দিলেন ক্ষোভ
কিছুদিন আগেই চোখে জল নিয়েই বিস্ফোরক অভিযোগ করে ঐন্দ্রিলার মা শিখা শর্মা বলেন, ‘সেইসময় দুজন ডাক্তারের ইগোর সমস্যা চলছিল। আমরা তো চাইব মেয়েকে বাঁচাতে? যিনি অপারেশন করেছেন, সেই ডা. মল্লিক অমায়িক। উনি খুব কো-অপারেশন করেছেন। ডা. পিয়া ঘোষ করেননি, সেটা আমাদের মনের মধ্যে থেকে যাবে। এমআরআই করাটাই ওর পক্ষে ঠিক হয়নি। আমরা এই নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি। সবাই কো-অপারেট করেছেন কিন্তু একজন ইগোর কারণে সহযোগিতা করেননি। তিনি দায়িত্ব নিয়ে ঐন্দ্রিলাকে ডিপ কোমায় পৌঁছে দিলেন। ডা. পিয়া ঘোষ কতটুকু চিকিৎসক, কতটুকু মানবিক জানি না। কিন্তু ডা. পিয়া ঘোষ কোনও সহযোগিতা করেননি। অনেক ডাক্তার ওকে দেখেছেন কিন্তু সেই ট্রিটমেন্ট ফলো করা হয়নি। আমার মেয়ে ডাক্তার, অনেক অনুরোধ করেছে কিন্তু উনি শোনেননি। ঐন্দ্রিলা বাঁচতে পারত। ঐ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হত না। যদিও হত ও রিভার্স করত। ওর হার্ট-লাং-কিডনি স্ট্রং ছিল। আমি তো বলবই, সবাই আসছে সাজেশন দিচ্ছেন এটা ওঁর ইগোতে লাগল। একবারও ভাবল না, আমার মেয়েটাকে বাঁচানো দরকার। একটা ২৪ বছরের মেয়ের ক্ষেত্রে এটা করা উচিত হয়নি। এই দুঃখ নিয়েই আমরা বাঁচব।’
ঐন্দ্রিলার মা বলেন, ‘আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। গ্রিন করিডোর করে নিয়ে যেতে হলেও স্টেবল হওয়ার দরকার ছিল। সেটা ছিল না ও। অরিজিৎ সিং আমাদের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন। মুম্বইয়ের ডাক্তারের সঙ্গেও কথা হয়েছিল। ডা. বিশ্বাস বলেছিলেন, একটু টাইম পেলে আমরা এয়ারবাসে করে নিয়ে চলে যাব। যিনি হাসপাতালে ইনচার্জ ছিলেন ঝটঝট করে হেলথ সাপোর্টগুলো খুলে দিয়েছিলেন। উনি যে কতটুকু দক্ষ সে বিষয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। ডা. পিয়া ঘোষ যেন ঐন্দ্রিলাকে ডিপ কোমায় পাঠানোর দায়িত্ব নিয়ে নিল।’