কিছুটা হলেও ‘অন্য ছবি’ ধরা পড়ল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (Pradhan Mantri Awas Yojana) । পাকা বাড়ি থাকার পরেও যেখানে আবাস তালিকায় একের পরে এক তৃণমূল নেতা-নেত্রী, প্রধান উপপ্রধানদের নাম সামনে আসছে , এমনকি রয়েছে তাদের পরিবারের একাধিক সদস্যের নামও রয়েছে। সেখানে ব্যতিক্রমী রায়নার নাড়ু গ্রামের প্রধান চাঁদু সিংহ। থাকেন মাটির বাড়িতে। মাটির বাড়িতে অ্যাসবেস্টসের ছাদ। পরিবারের এই আদি বাড়িটি বর্তমানে কার্যত ভেঙে পড়েছে। জল পড়ায় ত্রিপলের আচ্ছাদন দেওয়া হয়েছে।এরপরেও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নাম থাকা সত্ত্বেও সরকারি অনুদানে বাড়ি নিতে রাজি নন পূর্ববর্ধমানের রায়না ১ নং ব্লকের নাড়ু গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান চাঁদু সিং।নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের আবাস যোজনার তালিকায় ৫৬৫ নম্বরে নাম রয়েছে চাঁদু সিং-এর।ইতিমধ্যেই তিনি বিডিও কে লিখিতভাবে বাড়ি নেবেন না বলে আবেদন জানিয়েছেন।
আবাস যোজনায় বাড়ি না নেওয়ার কারণ কী?
গ্রাম প্রধান হলেও পেশায় দিন মজুর চাঁদু সিং। কেন তিনি হকের বাড়ি ও সরকারি সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি কেন নিচ্ছেন না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমার তো মাথা গোঁজার ঠাঁই রয়েছে, অনেকের তো সেটাও নেই। আবার অনেকের নাম বাদ পড়েছে। সেখানে একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে কী ভাবে সরকারি অনুদানে বাড়ি নেব? সে জন্যই আমি নিজেই পঞ্চায়েতের তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়েছি। গ্রামের শেষ প্রান্তের মানুষটি যার মাথার উপর ত্রিপলের ছাউনি কুও নেই সেই মানুষটি যতক্ষণ না বাড়ি পাচ্ছেন আমি বাড়ি নেব না।” অন্যান্য জায়গায় প্রধান, উপপ্রধান এমনকি সামান্য পঞ্চায়েত সদস্যেরও দালানবাড়ি থাকা সত্ত্বেও তার ও তার পরিবারের সদস্যদের আবাস যোজনায় নাম রয়েছে। এই বিষয়টি প্রসঙ্গে
চাঁদু সিং-এর উত্তর, “ওরা লোভ সামলাতে পারেনি। এটা জনপ্রতিনিধির কাজ নয়।”
জানা গিয়েছে, চাঁদু সিং এর সম্বল বলতে নাড়ুগ্রামের পৈত্রিক ভিটাটুকু আর সরকারী পাট্টা পাওয়া ১০ কাঠা জমি। পরিবারের ৪ সদস্যকে নিয়ে কোনওরকমে দিন কাটে তার।সংসার চালাতে দিনমজুরের কাজ করেন চাঁদু সিং। স্বামীর এই পদক্ষেপ নিয়ে গর্বিত স্ত্রীও।
খুব দরকার থাকা সত্ত্বেও আবাস যোজনায় (PM Awas Yojana) নাম কাটিয়ে দিয়েছে চাঁদু। এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রধানের স্ত্রী বিউটি সিং জানান, “না স্বামীর উপর কোনও রাগ নেই। রাগ তো হয়ই না বরং গর্ববোধ হয়।জনপ্রতিনিধি হিসাবে ও যে কাজ করছে তাতে আমরা গর্বিত। টিভি ও এলাকায় শুনতে ও দেখতে পাচ্ছি আবাস যোজনা নিয়ে নানান দুর্নীতি ও স্বজনপোষন চলছে সেখানে দাঁড়িয়ে চাঁদুর সিদ্ধান্তে আমরা খুশি।”
নিতান্ত আটপৌরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত প্রধান। নিজের দরকার থাকা সত্ত্বেও গ্রামের শেষ প্রান্তের মানুষটির কথা তিনি ভাবেন। তাই তিনি আবাস যোজনায় নাম কাটিয়েছেন ।এখানেই তিনি অনান্য প্রধানদের থেকে আলাদা,মত গ্রামবাসীদের। বিজেপি বর্ধমান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র জানান, ”উনি ব্যতিক্রম। তৃণমূলের সবাই যদি এমন হত তাহলে রাজ্যের চেহারাটা পালটে যেত। আমাদেরও তৃণমূলের সবাই চোর বলে স্লোগান দিতে হত না।”
পশ্চিমবঙ্গের আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন। প্রতি মুহূর্তে খবরের আপডেটের জন্য চোখ রাখুন এই সময় ডিজিটালে।