দরকার বুস্টার (Booster Dose)। কিন্তু টিকা কই! চিনে করোনা (Corona) চোখ রাঙাতে শুরু করতেই ভারতেও কোভিড মোকাবিলার প্রস্তুতিতে কোমর বাঁধছে প্রশাসন। অতিমারী ঠেকাতে ফের নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে টিকা, বিশেষত বুস্টার ডোজ় নিয়েও। কিন্তু বুস্টার নেওয়ার ক্ষেত্রে সারা দেশের সঙ্গেই বাংলাতেও শোচনীয় অবস্থা! দেখা যাচ্ছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে যেখানে অন্তত ৯ জন প্রথম ও কমপক্ষে ৮ জন দ্বিতীয় ডোজ় নিয়েছেন বঙ্গে, সেখানে বুস্টার নিয়েছেন ১০ জনে ৩ জনেরও কম। এই ফারাক কী করে মিটবে, তা নিয়ে চিন্তায় রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরও। কেননা, সেপ্টেম্বরের পর থেকে কেন্দ্র টিকা পাঠানোও বন্ধ করে দিয়েছে সর্বত্র। স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত করোনা টিকার প্রথম ডোজ় নিয়েছেন ৭.৩৫ কোটি মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ় ৬.৬৭ কোটি মানুষ। সেখানে বুস্টার ডোজ় নিয়েছেন মাত্র ১.৫৭ কোটি বঙ্গবাসী। অর্থাৎ, যাঁরা টিকা নেওয়ার যোগ্য, তাঁদের মধ্যে প্রথম ডোজ় নিয়েছেন ৯৬%, দ্বিতীয় ডোজ় ৮৪%, আর বুস্টার ডোজ় নিয়েছেন মাত্র ২৫% মানুষ। এই বিরাট ফারাক ঘোচানোর রাস্তাও এক প্রকার বন্ধ। কেননা, রাজ্যের ভাঁড়ারে পড়ে মাত্র ৩ হাজার ডোজ় কোভিশিল্ড ও ১.৮ লক্ষ ডোজ় কোভ্যাক্সিন টিকা। এবং সে-সবের মেয়াদ ফুরোচ্ছে জানুয়ারিতেই।
বাংলার স্বাস্থ্যকর্তারা তাই উদ্বিগ্ন, বুস্টার টিকাকরণে জোর দেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হবে কী উপায়ে! ‘দেখা যাক, কী হয়’-হতাশার সুর শোনা গিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর গলাতেও। কারণ, শেষ বারের মতো কেন্দ্র বাংলায় টিকা পাঠিয়েছিল গত ৩০ সেপ্টেম্বর। তার পর জানিয়ে দিয়েছে, কেন্দ্রীয় ভাবে আর কোনও রাজ্যেই পাঠানো হবে না টিকা। কোনও রাজ্যের হঠাৎ দরকার পড়লে বড়জোর অন্য রাজ্যের উদ্বৃত্ত টিকা হস্তান্তর করা যেতে পারে। তাই বাংলায় টিকাকরণের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা (পরিবারকল্যাণ) অসীম দাসমালাকার মনে করেন, ‘ফের টিকা পাঠানোর ব্যাপারে কেন্দ্রকে একটা নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। নইলে বুস্টার হবে কী করে!’
অথচ ভিড়ে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি বুস্টার ডোজ়ের যে কোনও বিকল্প নেই, তা এক বাক্যে স্বীকার করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্যাথলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রণবকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘শুধু চিনে নয়, ইউরোপ-আমেরিকার অনেক জায়গাতেই ওমিক্রনের অতিসংক্রামক বিএফ.৭ উপ-প্রজাতি দেখা যাচ্ছে। এ দেশেও গুজরাট ও ওডিশায় চারটে কেস পাওয়া গিয়েছে। এই অবস্থায় বুস্টার ডোজে়র প্রয়োজনীয়তা আছে, বিশেষ করে প্রবীণ আর যাঁদের মধ্যে কো-মর্বিডিটি আছে, তাঁদের। কেননা, দ্বিতীয় ডোজে় প্রাপ্ত ইমিউনিটি এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছে।’ ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ জোয়রদার, সৌরীশ ঘোষরাও মনে করেন, যাঁদের বুস্টার নেওয়া নেই, তাঁদের ডোজ়টা নিয়ে নেওয়াটাই বিচক্ষণতা।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জয়দীপ ঘোষের মতে, যাঁরা দুটো ডোজ় নিয়েছেন, তাঁদের সিংহভাগই টিকাটা নিয়েছেন এক বছর হয়ে গিয়েছে। ফলে অ্যান্টিবডি আর খুব সক্রিয় নেই। সেটাকে ফের সক্রিয় করে তোলার জন্যেই বুস্টার জরুরি। তা হলে ওমিক্রনের অতিসংক্রামক বিএফ.৭ উপপ্রজাতি এ দেশে হামলা চালালেও অনেকটাই সুরক্ষিত থাকা যাবে। একমত মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রি মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘বুস্টার নেওয়ার ফলে করোনার অ্যান্টিবডি ফের চাঙ্গা হবে। এতে সংক্রমণটা ঠেকানো যাবে অনেকাংশে। এমনকী, সংক্রমণটা হয়ে গেলেও তার তীব্রতা থাকবে খুবই কম। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে হাসপাতালে ভর্তির আশঙ্কা থাকবে না বললেই চলে।’